নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৬ জুন, ২০২০

সামাজিক দূরত্ব উধাও

পরিবহনে ভাড়া বেশি

করোনায় সামাজিক দূরত্ব মানছে না কেউ। গণপরিবহন, শপিং মল, বাজার-ঘাট কোথাও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। বাস-মিনিবাসে যত সিট তার অর্ধেক যাত্রী নেবে বলে ভাড়া ৬০ ভাগ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তিন দিনের মধ্যেই সামাজিক দূরত্ব অনেকটাই উধাও হয়ে গেছে। আর বাসভাড়া আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণ। গত ১ জুন থেকে রাজধানীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চলাচলের নির্দেশনা দেয় সরকারের পক্ষ থেকে। ওই দিন থেকে সরকারের নির্দেশনা মানছেন না পরিবহন চালকরা। সকালের দিকে কিছুটা সামাজিক দূরত্ব দেখা গেলেও বিকালে অফিস ছুটির পর পরিস্থিতি আর নিয়ন্ত্রণে থাকে না। গণপরিবহন ও দূরপাল্লার বাস নতুন ভাড়ায় চারদিন ধরে চালু হলেও এখনো ভাড়ার কোনো তালিকা প্রকাশ করেনি বিআরটিএ। তালিকায় বিভিন্ন রুটের দূরত্ব এবং ভাড়া কত তা লেখা থাকে। সেটা প্রকাশ না করায় বাস-মিনিবাসে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘আগেই বলেছিলাম বাসে বিশেষ করে সিটি সার্ভিসে সামাজিক দূরত্ব মানা হবে না। কারণ এখানে কোনো টিকিট সিস্টেম নেই। বাসেই নগদে ভাড়া আদায় করা হয়। তাই যাত্রী উঠা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। মালিকরা আসলে করোনাকে বাসভাড়া বাড়ানোর কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছে। তাই এখন সামাজিক দূরত্ব মানা না হলেও ঠিকই বাড়তি বাসভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এটা আর কমবে বলে মনে হয় না। তিনি আরো বলেন, ভাড়ার চার্ট প্রকাশ করলে দেখা যাবে ৬০ ভাগ ভাড়া বাড়ার ফলে নতুন যে ভাড়া হওয়ার কথা সেই ভাড়া আগে থেকেই আদায় করা হচ্ছে। ফলে চার্ট প্রকাশ করা হচ্ছে না। বাড়তি ভাড়ার ওপর আবার নতুন করে ৬০ ভাগ বেশি নেওয়া হচ্ছে। বাস ভাড়ায় এখন চলছে নৈরাজ্য।

উদাহরণ দিয়ে এ মহাসচিব আরো বলেন, গুলিস্তান থেকে ফার্মগেটের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। আগের হিসেবে ভাড়া হওয়ার কথা আট টাকা। কিন্তু আদায় করা হয়েছে ১৫ টাকা। এখন ৬০ ভাগ ভাড়া বাড়ানোর পর ভাড়া হবে ১৩ টাকা। কিন্তু আদায় করা হচ্ছে ৩০ টাকা। তাই বাস্তবে দ্বিগুণের বেশি ভাড়া বেড়েছে।

আর সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. হানিফ খোকন বলেন, বাসভাড়া আগেই মালিকরা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে যে বাসভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল তার চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ বেশি ভাড়া তারা আগেই নিত। এখন যে ৬০ ভাগ বাড়ানো হয়েছে সেটা মালিকরা ওই ভাড়ার ওপরই নতুন করে নিচ্ছেন।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘সিলেটের মৌলভীবাজার থেকে ঢাকার সায়েদাবাদের দূরত্ব ২০৮ কিলোমিটার। আগে প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ছিল ১ টাকা ৪২ পয়সা। শতকরা ৬০ ভাগ বাড়লে হয় ২ টাকা ২৭ পয়সা। এর সঙ্গে যদি ব্রিজের টোল যোগ করা হয় ২৫ টাকা তাহলে এখন যাত্রীপ্রতি ভাড়া হওয়ার কথা ৪৭৫ টাকা। কিন্তু এখন যাত্রীপ্রতি বিভিন্ন পরিবহন ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৭৬০ থেকে ৮০০ টাকা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ দাবি করেন, ভাড়া কেউ বেশি নিচ্ছেন না। তবে দুই-এক জায়গায় হতে পারে।

তিনি বলেন, প্রায় পাঁচ বছর পর বাসভাড়া বাড়ানো হয়েছে, যেখানে প্রতি বছর বাড়ানো উচিত ছিল। গাড়ি, যন্ত্রাংশ সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। তাই এই ভাড়া বাড়ানোর পরও আমরা লোকসানে আছি। তবে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভাড়ার বেশি কেউ নিচ্ছে না। কোথাও কোথাও হতে পারে। তবে সেটা খুবই সামান্য। ৯৫ ভাগই ঠিক আছে। এটা ঢাকা শহরে দুই-এক জায়গায় হতে পারে। কিন্তু আমাদের নির্দেশ হলো সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে। সারা দেশে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি কোনো চাঁদাবাজি করা যাবে না। চাঁদা বন্ধ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close