সাহিদ রহমান অরিন

  ১৮ জানুয়ারি, ২০২০

নতুন রাজা রাজশাহী

রাজশাহী রয়েলস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে আয়োজিত বিশেষ এই বিপিএলে পদ্মাপাড়ের দলটার নামের শেষাংশ পেয়েছে ‘রাজকীয়’ ভাব। হয়তো বিপিএলের সিংহাসন তার নতুন রাজা হিসেবে রাজশাহীকে খুঁজে নেবে বলেই এই নামকরণ! আদতে হলোও তাই। মুশফিকুর রহিমের খুলনা টাইগার্সকে ২১ রানে হারিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়া আসরের চ্যাম্পিয়ন হলো লিটন দাস-আন্দ্রে রাসেলের রাজশাহী রয়েলস।

দুই ফাইনালিস্ট শিরোপা লড়াইয়ে ওঠার পরই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল বিপিএলের সপ্তম আসরে দেখা মিলছে নতুন চ্যাম্পিয়নের। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে কাল পৌনে চার ঘণ্টার সেই জমজমাট লড়াই শেষে হাসল উত্তরবঙ্গের দল রাজশাহী। বিপরীতে খুব কাছে এসেও শিরোপার ছোঁয়া না পাওয়ার বেদনায় পুড়তে হলো দক্ষিণ-পশ্চিমের দল খুলনাকে। সঙ্গে অপেক্ষা আরো দীর্ঘায়িত হলো মুশফিকের। সপ্তমবারের চেষ্টাতেও চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরতে না পাওয়ায় ‘লাকি নাম্বার সেভেন’টা আনলাকিই হয়ে থাকল মিস্টার ডিপেন্ডেবলের।

২৫ হাজার দর্শকে টইটম্বুর শেরেবাংলায় গতকাল শুক্রবার মোহাম্মদ নওয়াজ ও আন্দ্রে রাসেলের শেষের ঝড়ে চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল রাজশাহী। জয়ের জন্য খুলনাকে ১৭১ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল তারা। ৮ উইকেটে ১৪৯ রানে থেমেছে খুলনার ইনিংস। অথচ লক্ষ্য তাড়ায় ১৩ ওভার শেষেও জয়ের পথে ছিল খুলনা। কিন্তু ১৪তম ওভারে কামরুল ইসলাম রাব্বি খুলনাকে জোড়া ধাক্কা দেন। থিতু ব্যাটসম্যান শামসুর রহমান (৪৩ বলে ৫২) ও নজিবুল্লাহ জাদরানকে তুলে নিয়ে ম্যাচের লাগাম নিজেদের দিকে টেনে আনেন।

মুশফিক শেষ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ২২ গজে শেষ পর্যন্ত থেকে ফিনিশারের ভূমিকা পালন করতে পারেননি। আন্দ্রে রাসেলের ‘পিন্ট পয়েন্ট’ ইয়র্কারে ক্লিন বোল্ড মুশফিক (১৫ বলে ২১)। অধিনায়ক বনাম অধিনায়কের টক্করে জয়ী হন রাজশাহীর রাসেল। তখনই কক্ষপথ থেকে ছিটকে পড়ে খুলনা।

শেষ ৫ ওভারে ১২ আস্কিং রেটে ৬০ রান দরকার ছিল মুশফিক বাহিনীর। তার সঙ্গে উইকেটে ছিলেন দীর্ঘদেহী রবি ফ্রাইলিঙ্ক। পথটা দুর্গম হলেও উইকেটে মুশফিক থাকায় আশা ছিল খুলনার সমর্থকদের। কামরুল ইসলামের করা ১৬তম ওভারে ৯ রান আসায় শেষ ৪ ওভারে সমীকরণ নেমে আসে ৫১ রানে। এখান থেকে পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ ইরফানের করা ১৭তম ওভার থেকে ১১ রান নিয়ে স্নায়ুক্ষয়ী ফাইনালের আভাস দেন মুশফিকই। ম্যাচ ১৮ বলে ৪০ রানের সমীকরণে থাকতে বল করতে আসেন রাজশাহীর অধিনায়ক রাসেল। এরপরই উল্টে যায় পাশার দান। ১৮তম ওভারের পঞ্চম বলে ক্যারিবীয় অলরাউন্ডারের ওই দুর্দান্ত ইয়র্কারেই কেল্লাফতে!

১২ ওভারে ৩১ রানের সমীকরণ মেলাতে ফ্রাইলিঙ্কের সঙ্গে এসে যোগ দেন পেসার শহীদুল ইসলাম। ১৯তম ওভারে ইরফান এসে তুলে নেন ‘শেষ ভরসা’ ফ্রাইলিঙ্ককে (১৫ বলে ১২)। ওই ওভারে ১ রানে ১ উইকেট নেন ইরফান। অন্তিম ওভারে রাসেল এসে খুলনার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের সমাধিতে এপিটাফও লিখেছেন। ৪ ওভারে ১৮ রান ২ উইকেট নিয়েছেন পাকিস্তানের ‘তালগাছ’ ইরফান। ২৯ রানে ২ উইকেট কামরুল রাব্বির। ২ শিকার ধরেছেন রাসেলও।

এর আগে শিশিরভেজা সন্ধ্যায় আগে ব্যাটিং পেয়ে ৪ উইকেটে ১৭০ রান করেছে রাজশাহী রয়েলস। দলের হয়ে ৩৫ বলে সর্বোচ্চ ৫২ রান করেন শুক্কুর। ২০ বলে হার না মানা ৪১ রান করেন নওয়াজ, অধিনায়ক রাসেল অপরাজিত থাকেন ১৬ বলে ২৭ রানে।

শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে মহাগুরুত্বপূর্ণ টস জিতে অনুমিতভাবে ফিল্ডিং বেছে নেন খুলনার দলনেতা মুশফিকুর রহিম। টুর্নামেন্ট জুড়ে আলো ছড়ানো লিটন দাস-আফিফ হোসেনের উদ্বোধনী জুটির কাছে দলের প্রত্যাশা ছিল অনেক। কিন্তু কোয়ালিফায়ার ম্যাচ দুটির মতো ফাইনালেও নিষ্প্রভ এই জুটি।

১৪ রানে ওপেনিং জুটি ভাঙার পর ওয়ান ডাউনে নেমে বাঁহাতি শুক্কুর নিজেকে চেনান ভিন্নভাবে। আগের ম্যাচে রান পেলেও অতটা আগ্রাসী ছিলেন না। এদিন দলের রান বাড়ানোর প্রাথমিক দায়িত্বটা নেন তিনি। বরং লিটনই ছিলেন মন্থর। সময় নিয়ে থিতু হয়ে ইনিংস টানার ভাবনায় ছিলেন টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সফল এই ওপেনার। কিন্তু উইকেটে মানিয়ে নিয়েও ইনিংস টানতে পারেননি তিনি। শহিদুল ইসলামের সেøায়ার পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন মিড উইকেটে।

এর পরও ভড়কে যাননি শুক্কুর। ৬ চার ও ২ ছয়ে ৩০ বলে তিনি স্পর্শ করেন ফিফটি। এর পরপরই অবশ্য আমিরের বলে আউট হয়ে যান। তার আগে রবি ফ্রাইলিঙ্কের বলে সাজঘরে ফেরেন আসরজুড়ে ব্যাট হাতে আলো ছড়ানো শোয়েব মালিকও।

ডেথ ওভারে ঝড় তোলার জন্য রাসেলের সামনে মঞ্চ তখন প্রস্তুত। তবে ক্যারিবীয় শক্তির এই আধারকে তুলনামূলক কম আগ্রাসী মনে হয়েছে। তাকে সেভাবে বিধ্বংসী হতে দেননি খুলনার বোলাররা। তবে বড় মঞ্চে নওয়াজ নেমেই তা-ব চালিয়েছেন। দুজনে মিলে শেষ পাঁচ ওভারে তুলেছেন ৭০ রান। নওয়াজ হাঁকান ৬ চার ও ২ ছয়। রাসেলের ব্যাট থেকে আসে ৩ ছক্কা। খুলনার হয়ে আমির ৩৫ রান খরচায় ২ উইকেট নেন।

রাজশাহী : ১৭০/৪

খুলনা : ১৪৯/৮

রাজশাহী ২১ রানে জয়ী

ম্যাচ ও টুর্নামেন্টসেরা

আন্দ্রে রাসেল

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close