নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১১ অক্টোবর, ২০১৯

দাবি না মানলে বুয়েটে তালা

আবরার ফাহাদ হত্যার চতুর্থ দিনেও বিক্ষোভে উত্তাল ছিল বুয়েট ক্যাম্পাস। কারণ বর্বরভাবে পিটিয়ে বন্ধু ও সহপাঠী আবরারকে হত্যা করা হয়েছে। বন্ধু ও ভাইয়ের হত্যার বিচার দাবিতে একাট্টা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বুয়েটসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চলছে মিছিল, মানববন্ধন, সেøাগান, বিক্ষোভ সমাবেশ। শিক্ষার্থীদের এই প্রতিবাদ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন শিক্ষকেরাও। মিছিল-সেøাগানে দ্রুত হত্যাকান্ডের বিচারিক প্রক্রিয়া শুরুর দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১০ দফা দাবিতে অনড় তারা। আজ শুক্রবার দুপুর ২টার মধ্যে উপাচার্য এসে শিক্ষার্থীদের দাবি না মানলে বুয়েটের সব প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আজ শুক্রবারও প্রতিবাদ সমাবেশ করবেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।

প্রতিবাদ কর্মসূচির চতুর্থ দিন গতকাল সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। অবস্থান নেন শহীদ মিনার চত্বরে। সেøাগানে সেøাগানে সমাবেশ-বিক্ষোভে খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান তারা। হত্যাকারীদের এখনো কেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়নি, এ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন আন্দোলনকারীরা। সকাল থেকে বুয়েটের শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে তারা ‘খুনিদের ঠিকানা, এই বুয়েটে হবে না’, বহিষ্কার বহিষ্কার, খুনিদের বহিষ্কার’, ‘এক আবরার কবরে, লক্ষ আবরার বাহিরে’, ‘যাব না, যাব না, ফাঁসি ছাড়া যাব না’ এমন বিভিন্ন সেøাগান দেন। এছাড়া বুয়েট শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় অভিনয়ের মাধ্যমে আবরার হত্যার পুরো চিত্র ফুটিয়ে তোলা করা। মর্মান্তিক সেই চিত্র দেখে কেঁদেছেন অনেকেই।

এদিকে বুয়েট আবাসিক হলগুলো থেকে অবৈধ দখলকারীদের বিতাড়িত করার দাবি জানিয়েছে বুয়েট শিক্ষক সমিতি। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিস্থলে এসে এ দাবি জানানো হয়। বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি এ কে এম মাসুদ বলেন, আবরার ফাহাদের নির্মম হত্যাকান্ডের পর গত বুধবার শিক্ষক সমিতির একটি সভা হয়। এতে আমরা বেশ কয়েকটি দাবি নির্ধারণ করি। আমরা এখন আমাদের দাবি সরকার ও বুয়েট উপাচার্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করে উপস্থাপন করছি।

দাবিগুলো হলো : আবরার হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আবরারের পরিবারকে মামলা পরিচালনায় প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে হবে বুয়েট কর্তৃপক্ষকে। আবরার হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের বুয়েট থেকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে। বুয়েটের আবাসিক হলগুলো থেকে সব অবৈধ দখলকারীদের বিতাড়িত করেতে হবে। এ পর্যন্ত বুয়েটের শিক্ষার্থীদের ওপর সংঘটিত বিভিন্ন নির্যাতন এবং র‌্যাগিংয়ের তথ্য সংগ্রহ করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার করতে হবে। বুয়েট থেকে রাজনৈতিক অঙ্গ সংগঠনভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। অনতিবিলম্বে বুয়েটের উপাচার্য পদ থেকে অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামের পদত্যাগ।

এদিকে আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের পর থেকে আন্দোলন করে আসা শিক্ষার্থীরা তাদের ১০ দফা পূরণে উপাচার্যকে আজ শুক্রবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন; তা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে বলে তারা জানিয়েছেন। আবরার হত্যাকান্ডের পর গতকাল টানা চতুর্থ দিনের মতো ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের কারণে বর্তমানে বুয়েটে ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

বুয়েট শিক্ষার্থীরা যে ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন সেগুলো হচ্ছে- আবরারের হত্যাকারীদের শনাক্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা; খুনিদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজকের মধ্যে আজীবন বহিষ্কার করা; আবরার হত্যা মামলার সব খরচ এবং ক্ষতিপূরণ বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন করা; মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অধীন স্বল্পতম সময়ে নিষ্পত্তি করা; অবিলম্বে চার্জশিটের কপিসহ অফিশিয়াল নোটিস দেওয়া; বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা; আবাসিক হলগুলোতে র‌্যাগিংয়ের নামে এবং ভিন্নমত দমনে নির্যাতন বন্ধে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করা; এ ধরনের ঘটনা প্রকাশে একটি কমন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা ও নিরাপত্তার জন্য সব হলের উইংয়ের দুই পাশে সিসি ক্যামেরা বসানো।

এদিকে শিক্ষার্থী নির্যাতনের কথা জানাতে নতুন একটি পেজ খুলেছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। আগের পেজটি বন্ধ করে দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন এই ঠিকানা দেওয়া হয়েছে।

নতুন পেজের ঠিকানাটি হলো: যঃঃঢ়ং://মরঃৎবঢ়ড়ৎঃং.পড়স/রংংঁব/ইটঊঞ-জবঢ়ড়ৎঃং/ধহড়হুসড়ঁং-ৎবঢ়ড়ৎঃ এই ঠিকানায় বুয়েট শিক্ষার্থীরা নাম না প্রকাশ করে অভিযোগ জানাতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ জানাতে বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থীদের চালু করা ওয়েবপেজটি গত বুধবার বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। বুয়েট হলগুলোতে ভিন্নমতের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের ঘটনা বহুদিনের। বুয়েটের সিএসই বিভাগের তৈরি করা ওয়েবপেজে গত আড়াই বছরে শিক্ষার্থীরা ১০৩টি অভিযোগ করেছেন। শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রশাসনকে জানানো হলেও তা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

২০১৬ সালের শেষদিকে বুয়েটের সিএসই বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে ওয়ানস্টপ অনলাইন রিপোর্টিং সিস্টেম (ইউ রিপোর্টার) নামে একটি সার্ভার গড়ে তোলেন। এতে বুয়েটের যেকোনো শিক্ষার্থী নিজের পরিচয় প্রকাশ না করে অভিযোগ জানাতে পারেন। গতকাল বুধবার পর্যন্ত ১০৩টি অভিযোগ সার্ভারে জমা হয়েছে। এর মধ্যে গত রোববার রাতে বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার পর বেশ কিছু নতুন অভিযোগ জমা পড়েছে।

বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান মোস্তফা আকবর বলেন, বিটিআরসির পেজ বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। তবে এরই মধ্যে যে পরিমাণ অভিযোগ জমা পড়েছে, এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ কাজ করতে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close