নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ

পুলিশের নির্যাতনে বিষণ্নতায় ভুগছে মিন্নি, দাবি বাবার

বরগুনায় আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে রিমান্ডের নামে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ধরে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর দাবি করেন, রিমান্ডের নামে পুলিশ ওর (মিন্নি) মাথায় পিস্তল ধরেছে। নির্যাতন করেছে। ভয়ভীতি দেখিয়েছে। এরপর থেকেই ও বিষণœতায় ভুগছে। এখন ওর চিকিৎসা একান্ত প্রয়োজন, সেজন্য ঢাকায় এসেছি। গতকাল রোববার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে মিন্নির জামিনের পক্ষে থাকা আইনজীবী জেড আই খান পান্নার চেম্বারে সাক্ষাৎ ও আইনি পরামর্শ শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ তোলেন মিন্নির বাবা।

মোজাম্মেল হোসেন কিশোর আরো অভিযোগ করে বলেন, ‘মিন্নিকে রিমান্ডের নামে নির্যাতন করা হয়েছে। সে এখনো তার ভয়াবহতায় ভুগছে। তার হাঁটুতে ব্যথা, তার জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা। এ কারণে তাকে ডাক্তার দেখাতে (ঢাকায়) নিয়ে এসেছি। এখনো শঙ্কা রয়েছে জানিয়ে মিন্নির বাবা বলেন, অনেক সময় আকার-ইঙ্গিতে বুঝতে পারছি, আমাকে ভয়ভীতি দেখানোর চেষ্টা করতে চায়। সব সময় আমাদের ফলো করে। আমি এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। প্রভাবশালী একটি কুচক্রী মহলের কাছ থেকে মিন্নি রেহাই পেল না। যে কারণে সে সাক্ষী থেকে আসামি। কত দিন ঢাকায় থাকবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বলা যাচ্ছে না। চিকিৎসা যত দিন লাগবে তত দিন।

মিন্নির আইনজীবীরা জানান, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে আইনি পরামর্শের জন্যই মূলত মিন্নিকে ঢাকায় এনেছেন তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। গত শনিবার বিকাল ৪টায় বরগুনা লঞ্চঘাট থেকে এমভি শাহরুখ লঞ্চে বাবার সঙ্গে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন মিন্নি।

গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাতকে। এ নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার মধ্যে ২ জুলাই এ হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।

রিফাতের ওপর হামলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সেখানে দেখা যায়, দুই যুবক রামদা হাতে রিফাতকে একের পর এক আঘাত করে চলেছে। আর তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি স্বামীকে বাঁচানোর জন্য হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। রক্তাক্ত অবস্থায় সন্ত্রাসীরা রিফাতকে ফেলে চলে যায়। এরপর ওই দিন বিকালে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে মামলায় প্রধান সাক্ষী করা হয়। পুলিশের সিসিটিভি ফুটেজ কেটেছেঁটে গণমাধ্যমে প্রকাশের পর একটি পক্ষ মিন্নির দিকে অভিযোগের আঙুল তোলে। মিন্নির শ্বশুরই পরে হত্যাকা-ে পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন। এরপর ১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ লাইনসে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে সেদিন রাতে তাকে রিফাত হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

পরদিন আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠান। কিন্তু মিন্নির পক্ষে কোনো আইনজীবী সেদিন আদালতে দাঁড়াননি, যা নতুন করে আলোচনার জন্ম দেয়। পাঁচ দিনের রিমান্ডের তৃতীয় দিনেই মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, মিন্নি বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের অভিযোগ, নির্যাতন করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে মিন্নিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে পুলিশ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close