মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

  ২৫ এপ্রিল, ২০১৯

চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩২ বছর

বেড়েছে সক্ষমতা, চলছে উন্নয়ন, বাড়ছে প্রত্যাশা

১৩২ বছরে পা দিতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। কর্ণফুলীতে জেটি নির্মাণের মাধ্যমে শুরু হওয়া চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বর্তমানে বেড়েছে বহু গুণ। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গ্রিন পোর্টে রূপান্তরের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। গ্রহণ করা হয়েছে নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্প। বন্দরকেন্দ্রিক রাজস্ব আয়ের সিংহভাগের জোগানদাতা চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা আরো বেশি।

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারীদের মতে, চট্টগ্রাম বন্দরের আরো কর্মক্ষম এবং কার্যকর ভূমিকার পেছনে রয়েছে যোগ্য নেতৃত্ব, রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত ও পৃষ্ঠপোষকতা। বন্দরের রেকর্ড হিসেবে দেখা গেছে, অতীতে যেখানে প্রতিটি পণ্যবাহী জাহাজকে বহির্নোঙরে দিনের পর দিন অপেক্ষায় থেকে ডেমারেজ গুনতে হতো, সে গড় অবস্থান এখন আট দিনের স্থলে দুই দিনে কমে এসেছে। কনটেইনার ওঠানামার হারও অনেক বেড়েছে। ২০১৭ সালে কনটেইনার ওঠানামা হয়েছিল ২৬ লাখ ৬৭ হাজার টিইইউস (টোয়েন্টি ফিট ইকুভেলেন্ট ইউনিটস), ২০১৮ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ২৯ লাখ ৩ হাজার টিইইউসে দাঁড়িয়েছে। এখানে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়েছে ৯ শতাংশ। অন্যদিকে, সাধারণ কার্গো ওঠানামায়ও বৃদ্ধির হার উল্লেখ করার মতো। এ সময় উল্লিখিত বছরে সাধারণ কার্গো ওঠানামা হয়েছে ৯ কোটি ৬৩ লাখ টন, যার প্রবৃদ্ধি ১৩ শতাংশ। বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য চারটি স্বতন্ত্র টার্মিনাল নির্মাণকাজ ও ১০টি গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ যন্ত্রপাতি সংগ্রহ এবং ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি বন্দরের জলসীমা ৫০ নটিক্যাল মাইল বিস্তৃত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম বন্দর বর্তমানের চেয়ে ১৩ গুণ বড় এবং ২০৩৬ সাল পর্যন্ত বিশ্ব বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল জুলফিকার আজিজ। তার উদ্যোগে বন্দরের দক্ষতা, উৎপাদনশীলতা এবং সেবার মান উন্নয়নে নানা টেকসই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বন্দরের মাত্র ৬০ শতাংশ সামর্থ্য কাজে লাগিয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি জাহাজ ও কার্গো হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হচ্ছে বলে জানালেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।

চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক ছগির আহমদ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘বন্দরের ১৩২ বছরে পদার্পণে অনেক অগ্রগতি দেখছি। বে-টার্মিনালসহ অন্য প্রকল্পসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের দিকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ব্যবসায়ী মহল তাকিয়ে আছে।’

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, কর্ণফুলীর মোহনায় মধ্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় নির্মিত হচ্ছে বে-টার্মিনাল, পতেঙ্গায় কনটেইনার টার্মিনাল, লালদিয়া টার্মিনাল ও কর্ণফুলী কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পসহ চারটি টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে নির্মাণাধীন ‘বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরকে’ কেন্দ্র করে সেখানে সীতাকু- এলাকায় আরো একটি টার্মিনাল নির্মাণের কাজও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়া লাইটার পণ্য খালাস করার জন্য আরো ১৫টি লাইটার জেটি নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে লালদিয়া এলাকায় ৫টির কাজ চলছে, চান্দগাঁওয়ের হামিদচরে ৫টি এবং সীতাকু- এলাকায় আরো ৫টি লাইটার জেটি নির্মাণ করবে চট্টগ্রাম বন্দর।

জুলফিকার আজিজ বলেন, বন্দরকে পরিবেশবান্ধব করতে গ্রিন পোর্ট ইনিশিয়েটিভ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বন্দরের সব ইক্যুইপমেন্ট ইউরোপীয় ইমশন স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রবন্দরের জলসীমা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। বন্দরের বর্তমান জলসীমা পতেঙ্গা উপকূলের উত্তরে কাট্টলী থেকে সীতাকু- এবং দক্ষিণে আনোয়ারার গহিরা থেকে মহেশখালীর সোনাদিয়া কুতুবদিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থায়নে ২৬ একর জায়গার ওপর ১ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পের কাজ চলছে। ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এখানে জাহাজ ভিড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় তৈরি হচ্ছে ৬০০ মিটার জেটি। সেখানে একই সঙ্গে ভিড়তে পারবে ৩টি কনটেইনার জাহাজ। নির্মাণ করা হচ্ছে ২২০ মিটার ডলফিন জেটি, যেটিতে খালাস করা হবে ভোজ্য তেল। পতেঙ্গা টার্মিনালে বছরে সাড়ে চার লাখ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।

বন্দরে কনটেইনার জেটি, ডলফিন জেটি, ফ্লাইওভার ও নতুন রাস্তার নির্মাণকাজ চলছে। কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য কি গ্যান্ট্রি ক্রেন, স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার, রিচ স্ট্যাকার, রাবার টায়ারড গ্যান্ট্রি, রেল মাউন্টেড গ্যান্ট্রি ক্রেন সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া পতেঙ্গার লালদিয়ার চরে ৮২০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জেটি এবং ৫৮ একর এলাকা নিয়ে লালদিয়া মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। সীতাকু- ও মিরসরাইয়ের মধ্যবর্তী স্থানে নতুন একটি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

লাইটারেজ জাহাজ থেকে নদীপথে পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য বন্দরের বহির্নোঙরে একটি ফ্লোটিং হারবার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য জাফর আলম জানান, ‘চট্টগ্রাম বন্দরকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি রিজিওনাল হাবে পরিণত করার স্বপ্ন নিয়ে সরকার এগিয়ে যাচ্ছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close