নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

চ ক বা জা র ট্র্যা জে ডি

ওয়াহেদ মঞ্জিল দেখে শাস্তির দাবি উৎসুক জনতার

চকবাজারের চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ মঞ্জিল দেখতে কাছে ও দূরের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছে উৎসুক জনতা। এতে তদন্তকারী সংস্থার কাজে ব্যাঘাত ঘটলেও সাধারণ মানুষ কোনো বাধাই মানেনি। যে যেভাবে পেরেছেন ঘটনাস্থলে ঢোকার প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। ফলে উৎসুক জনতাকে সরাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হয় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও আনসার সদস্যদের। রাতের আঁধারেও উৎসুক জনতার পদচারণায় মুখরিত ছিল বাড়িটির চারপাশ। নিরাপত্তাকর্মীরা বাঁশির হুইসেল বাজিয়ে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে দেন। এতে কেউ যাচ্ছে আবার নতুন কেউ আসছে। ফলে সাধারণ মানুষ বেশিক্ষণ সেখানে অবস্থান করতে না পারলেও একনজর বাড়ির চারপাশ ঘুরেই চলে যান। আর যাওয়ার সময় একে অপরকে বলছেন, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সেবা সংস্থাগুলোর উদাসীনতার ফলেই এ ঘটনা। এটা দুর্ঘটনা নয়। এটার শাস্তি হওয়া উচিত।

সাধারণ জনতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা কেউ এসেছেন মোহাম্মদপুর থেকে, কেউ এসেছেন উত্তরা কিংবা ধানমন্ডি এলাকা থেকে। আবার কেউ কেউ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকেই এসেছেন বাড়িটি দেখতে। আগুন লাগার পর থেকেই বাড়িটির চারপাশে চলাচলে ছিল কড়া নিরাপত্তা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমকর্মী এবং তদন্তকারী সংস্থা ছাড়া কারো প্রবেশাধিকার ছিল না। কিন্তু সাধারণ মানুষ একটু সুযোগ পেলেই পুলিশি নিরাপত্তা উপেক্ষা করে বাড়িটির চারপাশ ঘুরে দেখার চেষ্টা করেছেন। উৎসুক জনতার মাঝে পুরুষের পাশাপাশি ছিল নারীদেরও পদচারণা।

ধানমন্ডি থেকে স্বামীর সঙ্গে বাড়িটি দেখতে এসেছিলেন নাইমা জাহান। তিনি বলেন, টিভিতে এ মর্মান্তিক ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকেই খুব খারাপ লাগছে। তাই স্বামীকে বললাম চল একটু জায়গাটা দেখে আসি। আর যাই হোক অন্তত নিজ চোখে যেন দেখে আসতে পারি, কেমন সে জায়গা, যেখানে এত বড় মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল।

এসে দেখলাম, কিন্তু অবাক হলাম-পুরো এলাকাটা আবাসিক। জানতে পারলাম বাড়িটির উপরতলা নিচতলা সব জায়গায় নাকি কারখানা, গোডাউন করছে। পার্কিংয়ের জায়গাও নাকি গোডাউন করছে। এটার কারণে যে এতগুলো মানুষ পুড়ে মরছে। এতগুলো মানুষ হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। তাদের এখন কি হবে। এটা ইচ্ছাকৃত একটা দুর্ঘটনা। এটা তো কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায়। তাদের অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিতÑ বলেন নাইমা জাহান।

একই কথা বললেন অপর এক নারী শর্মিলা ঠাকুর। তিনি বলেন, এটা খুবই মর্মান্তিক এবং দুঃখজনক। এ ধরনের ঘটনা যাতে দ্বিতীয়বার আর পুনারাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য অবশ্যই সরকারকে আরও কঠোর হতো হবে, যাতে আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম না থাকে।

রহমতগঞ্জ থেকে দগ্ধ বাড়িটি দেখতে এসেছিলেন মো. বদরুল আলম খোকন। তিনি বলেন, বাড়িটি দেখতে এসেই খুব খারাপ লাগছে এটা ভেবে যে, যারা মারা গেলেন এবং যারা দগ্ধ হয়ে হাসপাতালের বিছানায় পড়ে আছেন তাদের এখন কি হবে। তাদের অনেকেই আছে হয়তো একজনের ওপর পুরো পরিবার নির্ভর করতো। কিন্তু এখন তাদের কে দেখবে। কয়েক বছর আগেও নিমতলীর ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নিজ উদ্যোগে কয়েকজনকে ভরণপোষণ থেকে শুরু করে বিয়ে পর্যন্ত দিয়েছেন। এ ঘটনায়ও প্রধানমন্ত্রীর এমন একটা দৃষ্টান্ত চাই যাতে স্বজনহারা পরিবারগুলো ভরসা খুঁজে পায় এবং দোষীদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় সে দাবি জানাই। শুধু দগ্ধ বাড়িটি দেখতে নয়, কেউ কেউ চুড়িহাট্টি লেনে ভিড় জমান ভয়াবহ আগুনের লেলিহান শিখার মাঝেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা শাহী জামে মসজিদটি দেখতে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলেন ভয়াবহ আগুনেও কোনো ক্ষতি হয়নি ওয়াহেদ ম্যানসনের সামনে থাকা পাঁচতলার ওই মসজিদটি। তাই কেউ কেউ আসছেন মসজিদটি এক নজর দেখতে এবং কথার সত্যতা মিলাতে।

টঙ্গী এলাকা থেকে পাঁচজন মাদরাসার শিক্ষার্থী আসলেন মসজিদটি এক নজর দেখতে। তাদের একজন ওবায়দুল্লাহ বলেন, ফেসবুকে দেখলাম আগুনে মসজিদের কোনো ক্ষতি হয়নি। তাই ঘটনা সত্য না মিথ্যা সেটি দেখতে আমরা এখানে আসলাম। এসে দেখি আসলেই ঘটনা সত্য। ওই বাড়ি (ওয়াহেদ মঞ্জিল) থেকে মসজিদ যত কাছে তার চেয়ে দূরে ওই বাড়িটা (ওয়াহেদ ম্যানসনের বিপরীত পাশের অপর একটা বিল্ডিং)। কিন্তু ওই বাড়িটাতেও আগুন লাগছে মসজিদ পার হয়ে। অথচ মসজিদের কোনো ক্ষতি হয়নি। শুধু সামনের অংশের টাইলসগুলো পড়ে গেছে আগুনের তাপে।

ঘটনাস্থলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য সুমন বলেন, শুক্রবার জুমার নামাজের পর সাধারণ মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। বিকেলের পর একেবারেই গাদাগাদি অবস্থা। তাই আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি তাদের সরিয়ে দিতে। অনেক সময় এখান দিয়ে আটকালে অন্য জায়গা দিয়ে ঢুকে পড়ে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close