এইচ আর তুহিন, যশোর

  ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

যশোরে ডিএসবির কর্মচারী ‘জামান সাহেব’ এখন অঢেল সম্পদের মালিক

নাম জি এম মোফাক্কুরুজ্জামান ওরফে ভুলু। কর্মস্থলে ‘জামান সাহেব’ হিসেবে পরিচিত। অফিস সহকারী পদে চাকরি করেও তিনি জীবনযাপন করেন রাজকীয় স্টাইলে। চলাফেরা করেন বিলাসবহুল গাড়িতে। মোফাক্কুরুজ্জামান ওরফে ভুলুর বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার বাঁকড়া গ্রামে। খুলনা ও সাতক্ষীরার বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। গড়ে তুলেছেন একাধিক বিলাসবহুল ভবন। জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। স্ত্রী ও ছেলের জন্যও রয়েছে দামি গাড়ি। গ্রামের বাড়ির পুকুরের সৌন্দর্য বর্ধনে ব্যয় করেছেন ২০ লক্ষাধিক টাকা। অফিস সহকারী পদে চাকরি করে এত সম্পদের পাহাড় এবং বিলাসবহুল জীবনযাপন করা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রশ্নের। বেরিয়ে এসেছে তার অবৈধ অর্থ উপার্জনের কাহিনী। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, যশোর ডিএসবির পাসপোর্ট শাখায় দীর্ঘ ১০ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন জি এম মোফাক্কুরুজ্জামান ওরফে ভুলু।

বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবার পর দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরে তার সম্পদের ফিরিস্তি তুলে ধরে অভিযোগ করেছেন তার বড় ভাই আখতারুজ্জামান টিপু।

আখতারুজ্জামান টিপুর দায়ের করা দুদকের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, যশোর ডিএসবি অফিসের অফিস সহকারী জি এম মোফাক্কুরুজ্জামান ওরফে ভুলুর স্ত্রী ও সন্তান খুলনা শহরের মিয়াপাড়া এলাকায় একটি বিলাসবহুল বাড়িতে বসবাস করেন। ১৯৮৮ সালে মোফাক্কুরুজ্জামান ওরফে ভুলু অফিস সহকারী পদে চাকরিতে যোগদান করেন।

খুলনা মহানগরীর ২৫/১ মিয়াপাড়া এলাকায় মোফাক্কুরুজ্জামানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পাঁচ তলার ভিত দিয়ে ‘অবকাশ’ নামে একটি বিলাসবহুল দুই তলা বাড়ি করেছেন। স্থানীয় এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এটি নির্মাণে আনুমানিক খরচ হয়েছে দেড় কোটি টাকা। এছাড়া খুলনা শহরের হরিণটানা এলাকার কৃষ্ণনগর মৌজায় পাঁচ কাঠার প্লট, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে চার কাঠার প্লট, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পাঁচ কাঠার একটি প্লট রয়েছে। এসব প্লটের আনুমানিক মূল্য দুই কোটি টাকা।

দুদকে দেওয়া অভিযোগে জানা যায়, কিছুদিন আগে মোফাক্কুরুজ্জামান ভুলু সাতক্ষীরার বাঁকড়া এলাকায় বিলাসবহুল দ্বিতল বাড়ি করেছেন। জেলার ব্যাংদহ বাজারে ৮০ লাখ টাকা দিয়ে এক বিঘা জমি কিনেছেন। এছাড়া সাতক্ষীরা প্যারাডাইজ রোডে তার অপূর্ব স্টোর নামে একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর রয়েছে। যশোরের বেনাপোলে রয়েছে পাথরের ব্যবসা। অভিযোগে আরো জানা যায়, যশোরে কর্মরত থেকে তিনি পাসাপোর্ট ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে মাসে গড়ে পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।

অভিযোগকারী টিপু আরো উল্লেখ করেন, ‘আপন ভাই হয়েও সে ক্ষমতার ভয় দেখিয়ে পৈতৃক বাড়িটিও দখলে নিয়েছে। তাছাড়া পৈতৃক জমিজমা থেকেও তাকে বঞ্চিত করেছে।

স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, গ্রামে পৈতৃক ভিটায় তিনি প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করছেন বিশাল অট্টালিকা। সেখানে আছে শান বাধানো পুকুর, যার নিচ থেকে উপর পর্যন্ত আরসিসি ঢালাই ও লাইটিং। এ বাবদ তিনি খরচ করেছেন প্রায় অর্ধকোটি টাকা। গ্রামে তিনি নামে-বেনামে কিনেছেন ১০০ বিঘা মাছের ঘের।

এ ব্যাপারে জি এম মোফাক্কুরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, পারিবারিক জমি নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে আমার সামান্য বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি মনগড়া এসব অভিযোগ করে যাচ্ছেন। এত সম্পদ গড়তে টাকা কোথায় পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশির ভাগ সম্পত্তি আমার বাবার। আমি কিছু জমি কিনেছি। বাড়ি করেছি আমি নিজেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close