নিজস্ব প্রতিবেদক ও টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

  ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

মুক্তি পেয়েই মায়ের কোলে জাহালম

দুদকের ভুলে প্রায় তিন বছর কারাভোগের পর অবশেষে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মুক্ত হয়েছেন জাহালম। গত রোববার রাত ১২টা ৫৮ মিনিটে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে পাটকলশ্রমিক জাহালমকে মুক্তি দেওয়া হয়। এদিকে অপরাধী না হয়েও তিন বছর জেলে কাটাতে হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দুদকের বিচার চেয়েছেন জাহালম।

কারাগারের বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকের জাহালম বলেন, ‘আমাকে বিনা বিচারে আটকে রেখেছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দুদকের বিচার চাই। ক্ষতিপূরণ চাই।’ যাদের জন্য বিনা বিচারে জেলে আটকে ছিলেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি জানান তিনি। পরে টাঙ্গাইলে নিজ বাড়িতে ছুটে আসেন তিনি। জাহালম টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ধুবুরিয়া গ্রামের মৃত ইউসুফ আলীর ছেলে। কারামুক্তির পর বড় ভাই শাহানুর মিয়ার সঙ্গে গতকাল সোমবার ভোর ৪টায় গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান তিনি। জাহালমকে দেখেই ছুটে আসেন মা মনোয়ারা। কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনিসহ স্বজনরা। পরে ছেলের কপালে চুমু দিয়ে আক্ষেপ করে বলেন, ‘কার মাথায় বাড়ি দিছিলাম যে আমার এত বড় সর্বনাশ করছিল।’ এ সময় আহাজারি করেন জাহালমের ভাইবোন ও স্বজনরাও। পরে জাহালমকে দুধ দিয়ে গোসল করিয়ে ঘরে তোলেন মা মনোয়ারা।

কারাগার থেকে বেরিয়ে দুদকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের জাহালাম বলেন, কোনো অপরাধ না করেও দুদক আমাকে মিথ্যা মামলায় তিন বছর কারাগারে আটকে রেখেছে; আমি দুদকের কঠিন বিচার চাই। তাদের কারণে আমি জেলখানায় অনেক কষ্টে দিন কাটিয়েছি। কারাগারের ওয়ার্ডে সেবকের কাজকর্ম করেছি। এর আগে আমি দুদককে বলেছিলাম, আমি সালেক নই, আমি জাহালম। কিন্তু তারা তা বিশ্বাস করেনি।

এদিকে, জাহালমের ঘটনায় দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের যদি কোনো গাফিলতি থেকে থাকে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেছেন, বিনা অপরাধে জাহালমের তিন বছর কারাভোগের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। জেলা জজ পদমর্যাদার দুদকের একজন পরিচালককে প্রধান করে কমিটি করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। কিন্তু দুদকের ভুলে সালেকের বদলে বিনা দোষে তিন বছর কারাগারে কাটাতে হয়েছে নরসিংদীর পাটকলশ্রমিক টাঙ্গাইলের সন্তান জাহালমকে।

গত ৩০ জানুয়ারি একটি প্রথম সারির জাতীয় দৈনিকে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি নজরে আনা হলে হাইকোর্ট জাহালমের আটকাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। একইসঙ্গে জাহালমের গ্রেফতারের ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তা, স্বরাষ্ট্রসচিবের প্রতিনিধি ও আইনসচিবের প্রতিনিধিকে আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় গত রোববার দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি হিসেবে দুদকের মহাপরিচালক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান, মামলার বাদী আবদুল্লাহ আল জাহিদ, স্বরাষ্ট্রসচিবের (সুরক্ষা) প্রতিনিধি যুগ্ম সচিব সৈয়দ বেলাল হোসেন ও আইনসচিবের প্রতিনিধি সৈয়দ মুশফিকুল ইসলাম আদালতে হাজির হন।

গত রোববারই সোনালী ব্যাংকের ওই অর্থ জালিয়াতির মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে হাইকোর্ট তাকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন। কারাগারে কাগজ পৌঁছানোর পর জেলসুপার তাকে মুক্তি দেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close