রংপুর ব্যুরো

  ২০ জানুয়ারি, ২০১৯

রংপুরে পল্লী অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক সাফল্য

রংপুর এলজিইডি এ দশকে (২০০৯-১৮) পল্লী অবকাঠামো নির্মাণে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে। বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ ব্যয় হয়েছে প্রায় এক হাজার ১৪৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। যা আগের কয়েক দশকের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। সবচেয়ে বেশি সাফল্য এসেছে পল্লী সড়ক উন্নয়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণ কাজ, বৃহৎ সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিক্ষা অবকাঠামো নির্মাণে। এ ছাড়াও ১০ বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে সোশ্যাল সেফটিনেসসহ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে নানা কল্যাণকর প্রকল্প। একে গ্রামকে শহরে পরিণত করার বর্তমান সরকার ঘোষিত কার্যক্রমের অগ্রগতি হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে এলজিইডি’র কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও বাড়েনি লোকবল। তবুও নির্দিষ্ট মেয়াদে সম্পন্ন হচ্ছে প্রতিটি প্রকল্প। এ ব্যাপারে এলজিডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আখতার হোসেন জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট এলাকার সংসদ সদস্য, তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আন্তরিকতায় এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে। তিনি বলেন, অনেক উন্নয়নমূলক কাজ চলমান এবং নতুন বছরেও আরো অনেক কাজের পরিকল্পনা প্রক্রিয়াধীন।

স্থানীয় এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শুরু থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৩৭ বছরে ৪৩৪ কিলোমিটার পল্লী সড়কের উন্নয়ন হয়েছে। গড় করলে দেখা যায় প্রতি বছরে কাজ হয়েছে ১১ দশমিক ৭২ কিলোমিটার করে। ১০০ মিটারের উপরে বৃহৎ সেতু নির্মিত হয়েছে সাতটি (৭৪০মিটার)। প্রতি বছরে নির্মিত হয়েছে ২০ মিটার করে। সেতু ও কালভার্ট নির্মিত হয়েছে এক হাজার ৩২ মিটার। গড় করলে প্রতি বছরে নির্মিত হয়েছে ২৭ দশমিক ৮৯ মিটার। ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে ৩১টি। প্রতি বছরে নির্মিত হয়েছে শূন্য দশমিক ৮৩টি। গ্রোথ সেন্টার হাটবাজার নির্মিত হয়েছে ১৬টি। প্রতি বছরে গড় দাঁড়ায় শূন্য দশমিক ৪৩টি। প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিক্ষা অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে ২৫৩টি। প্রতি বছরে হয়েছে ছয় দশমিক ৮৩টি। এ ছাড়াও ওই সময়ে সড়কের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হয়েছে ৮৮ কিলোমিটার। গড়ে প্রতি বছরে হয়েছে দুই দশমিক ৩৭ কিলোমিটার করে।

এদিকে ২০০৯-১৮ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে পল্লী সড়কের উন্নয়ন হয়েছে ৮৭২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। যা বিগত ৩৭ বছরের চেয়ে শতকরা সাত দশমিক ৪৪ গুণ বেশি। ১০০ মিটারের উপরে বৃহৎ সেতু নির্মিত হয়েছে ৯টি (১৭১৫মিটার)। যা বিগত বছরের চেয়ে শতকরা আট দশমিক ৫৮ গুণ বেশি। সেতু ও কালভার্ট নির্মিত হয়েছে দুই হাজার ৭৫৩ মিটার। যা বিগত দিনের চেয়ে শতকরা ৯ দশমিক ৮৭ গুণ বেশি। ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে ৪০টি। যা আগের চেয়ে শতকরা চার দশমিক ৮২ গুণ বেশি। গ্রোথ সেন্টার হাটবাজার নির্মিত হয়েছে ৪১টি। যা বিগত ৩৭ বছরের চেয়ে শতকরা ৯ দশমিক ৫৩ গুণ বেশি। প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিক্ষা অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে ৪৮৩টি। যা আগের চেয়ে শতকরা সাত দশমিক ০৭ গুণ বেশি। সড়কের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হয়েছে এক হাজার ৩৩২ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার। যা বিগত সময়ের চেয়ে শতকরা ৫৬ দশমিক ২৪ গুণ বেশি। এই সময়ে যোগ হয়েছে নতুন নতুন প্রকল্প। এগুলোর আওতায় নির্মিত হয়েছে চারটি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, পাঁচটি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স এবং ২৩টি অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা নিবাস। এ ছাড়াও ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জেলার আট হাজার কৃষি জমি পানি সেচের আওতায় আনা হয়েছে। মাছ চাষ এবং খরা মৌসুমে সম্পূরক সেচের জন্য ৪২টি খাল খনন করা হয়েছে। আবাদী জমি রক্ষায় বাঁধ নির্মিত হয়েছে ২২টি এবং সøুইসরেগুলেটর-রাবার ড্যাম নির্মিত হয়েছে ১২টি। প্রকল্পগুলোর অনেক কাজ এখনো চলমান আছে বলে জানা যায়।

রংপুর এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আখতার হোসেন বলেন, পল্লী অবকাঠামো উন্নয়নে আরো বেশি কাজ করার সুযোগ আছে। তারপরও ১০ বছরে রংপুরে যে পরিমাণ কাজ হয়েছে তা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে বলে তিনি মনে করেন। আগামীতে আরো ব্যাপক কাজ শুরু হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে শুধু রংপুর বিভাগ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৫০০ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। যা আগামী পাঁচ বছর চলবে। তিনি আরো বলেন, অগ্রাধিকারভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পটি শেষ হয়ে গেছে। তা আবার চালুর অপেক্ষায় রয়েছে। এটি মূলত সংসদ সদস্যদের বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে পরিচালিত হয়। গতবার ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল একজন সংসদ সদস্যের। ফলে রংপুরে ছয়টি সংসদীয় এলাকায় ১২০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। এবার এই টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close