নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ জানুয়ারি, ২০১৯

জনপ্রশাসন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন

প্রয়োজন মিটলে দুর্নীতি কেন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ যেসব সুবিধা প্রয়োজন, তা সরকার মেটাচ্ছে; তাহলে কেন দুর্নীতি হবে। এমন প্রশ্ন করে সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মন মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে এবং মাঠপর্যায়ের কর্মচারীদের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি বলেন, একটি ক্ষুধা এবং দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলায় সুশাসন এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।

টানা তৃতীয়বার সরকার গঠনের পর ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিদর্শন কর্মসূচির অংশ হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মন্ত্রণালয়ের যান। মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি বাড়াতে এবং সৃজনশীলতার বিকাশে এবারও পর্যায়ক্রমে সবগুলো মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করবেন প্রধানমন্ত্রী। জনপ্রশাসন দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়।

শেখ হাসিনা জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট একটি নির্দেশনা দিতে হবেÑ কেউ দুর্নীতি করলে সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ যে হারে বেতন আমরা বাড়িয়েছি, এ উদাহরণ মনে হয় পৃথিবীর কোনো দেশেই নেই। সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধেও অভিযান অব্যাহত থাকবে। সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার সরকার জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের সততা-আন্তরিকতা নিয়ে জনসেবা করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা সরকার পরিচালনার মূল জায়গাটা হলো আপনাদের এ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বিশাল এক কর্মযজ্ঞ এখানে। সেক্ষেত্রে আপনাদের দায়িত্ব কিন্তু অনেক অনেক বেশি। রাষ্ট্র পরিচালনার প্রাণকেন্দ্র জনপ্রশাসন। আপনাদের সেভাবে কাজ করতে হবে, আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করবেন। শেখ হাসিনা বলেন, সবাইকে অনুরোধ করব, একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, দেশটা আমাদের। আমরা এ দেশ স্বাধীন করেছি। আজ সারা বিশ্বে একটা সম্মানজনক জায়গায় আসতে পেরেছি। ১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তি সেই পাকিস্তানও এখন আর্থসামাজিক সূচকসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশকে অনুকরণ করতে চায়। এখন সেই পাকিস্তানও বলে আমাদের বাংলাদেশ বানিয়ে দাও। আজকে কিন্তু আমাদের আর তলাবিহীন ঝুড়ি বলার সাহস তাদের নেই। এ কথা বলতেও তারা পারবে না। কারণ আমরা অনেক এগিয়েছি। এই এগিয়ে যাওয়াটা, এই যাত্রাটা আমাদের কিন্তু অব্যাহত রাখতে হবে।

জনপ্রশাসনে পদোন্নতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশাসনসহ সব ক্ষেত্রে শুধু জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নয়, এখানে দক্ষতাকেও প্রাধান্য দিতে হবে। কে কত বেশি কাজ করতে পারেন, সততার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলবেন, সবকিছু বিবেচনা করে প্রমোশন হওয়া উচিত। যিনি যে বিষয়ে অভিজ্ঞ, তাকে সেই বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

স্বচ্ছতা-জবাবদিহি নিশ্চিতে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব ক্ষেত্রে এ ডিজিটাল সুবিধা ব্যবহার করতে হবে। এর মাধ্যমে আমি মনে করি, স্বচ্ছতা-জবাবদিহি নিশ্চিত হতে পারে। একটা সময় বাংলাদেশে দরপত্র বাক্স ছিনতাই হতো উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কারণে আমরা ই-টেন্ডারে চলে গেলাম। এখন আর টেন্ডার বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা শোনা যায় না। এভাবেই আমি মনে করি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা অনেকটা নিশ্চিত করা যায়। আমরা সেটাও করব।

প্রধানমন্ত্রী তার টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনকে দেশের জন্য সেবা করার একটা বড় সুযোগ উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রিত্বের পদটি এখানে বড় কথা নয়, মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, সেটাই বড় কথা।

গত অর্থবছরে জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ ভাগে উন্নীত হয়েছে এবং আগামী পাঁচ বছরে এই প্রবৃদ্ধি তার সরকার ১০ ভাগে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি বলেন, তার সরকার মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হলেই জনগণ অর্থনীতির সুফলটা ভোগ করে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকান্ড তুলে ধরে বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহমদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close