নরসিংদী প্রতিনিধি

  ১৭ নভেম্বর, ২০১৮

নরসিংদীতে আ.লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষে নিহত ৪

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ি ও নীলক্ষ্যায় এলাকায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ চারজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো অন্তত ১৬ জন।

শুক্রবার সকালে উপজেলার বাঁশগাড়ি গ্রামের বালুমাঠ এলাকায় ও দুপুরে নীলক্ষ্যায় গোপীনাথপুরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলোÑ তোফায়েল রানা (১৬), সোহরাব (৩০), স্বপন (২৭) ও অজ্ঞাত (২৫)।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত হাফিজুর রহমান সাহেদ সরকারের সমর্থক এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত সিরাজুল হকের সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় দুই গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনায় ইতোপূর্বে একাধিক নিহতের ঘটনা ঘটেছে।

এরই জেরে গতকাল শুক্রবার সকালে বাঁশগাড়ি গ্রামের বালুমাঠ এলাকায় বর্তমান চেয়ারম্যান আশরাফুল হক ও বাবুল মেম্বারের সমর্থক এবং প্রয়াত হাফিজুর রহমান সাহেদ সরকারের সমর্থক জামাল, জাকির ও সুমনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী তোফায়েল রানা নিহত হয়।

গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন পেয়েরাকান্দী গ্রামের সফর আলীর দুই ছেলে সুমন মিয়া (২৮), মামুন মিয়া (২৫) ও মির্জাচর গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে সুমনসহ (২৬) আরো ছয়জন। তাদের নরসিংদী সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া গুলিবিদ্ধ তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ ঘটনার জেরে বেলা ২টার দিকে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার নীলক্ষ্যার গোপীনাথপুর বীরগাঁও কান্দাপাড়া গ্রামে ফের আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে সোহরাব মিয়া (৩০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। সোহরাব মিয়া একই এলাকার ওসমান মিয়ার ছেলে। নিহত আরেকজন হলেন একই ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের সোবহান মিয়ার ছেলে স্বপন (২৭)।

পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নীলক্ষ্যা ইউনিয়নে দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার দুপুরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আবদুল হক সরকারের সমর্থকদের ওপর হামলা চালায় তাজুল ইসলাম সরকারের সমর্থকরা। দুজনই স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। হামলার একপর্যায়ে তাজুল ইসলামের সমর্থক সোহরাব মিয়া ঘটনাস্থলেই মারা যান। গুরুতর আহতাবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর গোপীনাথপুর গ্রামের সোবহান মিয়ার ছেলে স্বপন (২৭) মারা যান।

হাসপাতালে নিহত এসএসসি পরীক্ষার্থী তোফায়েল রানার বাবা আবদুল্লাহ ফকির বলেন, ‘ঝগড়া-বিবাদের জন্য এলাকা ছেড়ে পরিবার নিয়ে নরসিংদী চলে এসেছি। ছেলে পরীক্ষার খোঁজখবর নিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিল। সেখানে দুই পক্ষের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে তাকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। এভাবে আর কত বাবার বুক খালি হলে থামবে বাঁশগাড়ির এই রক্তক্ষয়ী বিবাদ? আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।’

নরসিংদী জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাঁশগাড়ি, নীলক্ষ্যাসহ কয়েকটি গ্রামে ছড়িয়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ কাজ করছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close