আদালত প্রতিবেদক

  ৩০ অক্টোবর, ২০১৮

আদালতের পর্যবেক্ষণ

ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার হয়েছে শাস্তি জরুরি

প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অবৈধভাবে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের তহবিল গঠন করে নজির স্থাপন করেছেন। সর্বোচ্চ ক্ষমতায় আসীন থেকে ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার করে অবৈধভাবে অর্থ আত্মসাৎ করা কাম্য নয়। ভবিষ্যতে আর যেন কেউ ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এভাবে দুর্নীতি করতে না পারেন, সেজন্য তার কঠোর শাস্তি হওয়া জরুরি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাত বছর কারাদন্ড, ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে গতকাল সোমবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক আখতারুজ্জামান রায়ের পর্যবেক্ষণে এসব কথা বলেন।

রায়ে আদালত বলেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট একটি ব্যক্তিগত ট্রাস্ট। খালেদা জিয়া ৬ মইনুল হোসেন রোডের বাড়িকে ট্রাস্টের ঠিকানা দিয়েছেন। অথচ খালেদা জিয়া এই বাড়িতে বসে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেছেন। সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। ব্যক্তিগত ট্রাস্ট ব্যক্তিগত টাকা দিয়ে পরিচালনা হওয়ার কথা মন্তব্য করে রায়ে আদালত বলেন, এই ট্রাস্টে দলীয় ফান্ড থেকে টাকা নেওয়া যাবে, তা উল্লেখ নেই। অথচ বিএনপির দলীয় ফান্ড থেকে খালেদা জিয়া এই ট্রাস্টের নামে ৬ কোটি ১৮ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ টাকা জমা করান। বিএনপির দলীয় ফান্ডের হিসাব থেকে ট্রাস্টের নামে পে-অর্ডার করা হয়। খালেদা জিয়া তার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর মাধ্যমে এই টাকা ট্রাস্টের হিসাবে জমা করেন। এ কাজে সহযোগিতা করেন হারিছের ব্যক্তিগত সচিব জিয়াউল ইসলাম। ব্যাংক কর্মকর্তাদের চাপ দিয়ে জিয়াউল ইসলাম বিএনপির দলীয় ফান্ডের টাকা ট্রাস্টের নামে হস্তান্তর করে অপরাধ করেছেন।

আদালত বলেন, বিএনপির ফান্ড থেকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে টাকা দেওয়ার ব্যাপারে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত ছিল তার কোনো প্রমাণ আদালতে দাখিল করা হয়নি। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের হিসেবে যা টাকা জমা হয়েছে, তার কোনো বৈধ উৎস দেখাতে পারেননি খালেদা জিয়া। ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের তহবিল সংগ্রহ করেছেন তিনি।

বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আড়াই বছর ধরে অন্য আসামিদের পক্ষে হলেও খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়নি। তাছাড়া এ মামলায় দীর্ঘদিন আসামি অনুপস্থিত থাকায় শুরুতে চার্জগঠন করা সম্ভব হয়নি। সর্বমোট ১৫টি বিষয় বিবেচনা করে এ রায় ঘোষণা করা হচ্ছে।

বিচারক আরো বলেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট একটি পারিবারিক ট্রাস্ট। কেননা এখানকার প্রধান ট্রাস্টি খালেদা জিয়া নিজেই এবং বাকি দুজন ছিলেন তার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো। পরবর্তীতে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ৫০ হাজার টাকা সংযোজনের মাধ্যমে শরিফুল নামে অরাজনৈতিক এক ব্যক্তিকে ট্রাস্টি হিসেবে যোগ করা হয়েছে। তাছাড়া সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছিল আরেকজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে। তখন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের দায়িত্ব পালন করছিলেন। আর এ ট্রাস্টের সঙ্গে তার দুই ছেলে ছাড়া যারা কাগজ-কলমে জড়িত ছিলেন তারা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ব্যক্তি।

রায়ের সর্বশেষে তিনি বলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া রাজনৈতিক ক্ষমতা অপব্যবহার করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ভবিষ্যতে যেন কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করে এ ধরনের কাজ করতে না পারেন, তাই আইনের ধারা অনুসারে আসামিদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আসামিদের ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য আসামিদের দন্ডবিধির ১০৯ নম্বর ধারায় শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close