আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৯ অক্টোবর, ২০১৮

খাশোগি চেয়েছিলেন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা

ওয়াশিংটন পোস্টে নিজের শেষ লেখাতেও আরব বিশ্বজুড়ে অবাধ মত প্রকাশের সুযোগ চেয়েছিলেন সাংবাদিক জামাল খাশোগি। রাজপরিবারের নীতির সমালোচনা করে মত প্রকাশের জন্য সৌদি এ সাংবাদিককে বছরখানেক আগেই নিজের দেশ ছাড়তে হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থেকেও অবশ্য শেষ রক্ষা হয়নি। এদিকে, সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির নিখোঁজের ঘটনায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সংশ্লিষ্টতা থাকার ব্যাপারে মার্কিন গোয়েন্দাদের সন্দেহ প্রবল হয়ে উঠেছে। এ সন্দেহ ক্রমাগত তাদের বিশ্বাসে রূপ নিচ্ছে। বলা হচ্ছে, খাশোগিকে হত্যা করার সময় তার অ্যাপল ওয়াচে ওই সময়ের কথাবার্তা রেকর্ড হয়েছে।

অন্যদিকে, তুরস্কের কাছে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যা করার সময় ধারণ করা অডিও রেকর্ড চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘অডিও রেকর্ড যদি থাকে, তাহলে আমরা তা চাই।’ গতকাল বৃহস্পতিবার বিবিসি ও সিএনএনের খবরে জানানো হয়, ট্রাম্প বলেছেন, এমন কোনো অডিও থাকার বিষয়ে আমরা এখনো নিশ্চিত নই। এ রকম অডিও থাকতেও পারে। এই সপ্তাহের শেষে আসল সত্য জানা যাবে। সৌদি আরবের দোষ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন- এমন কথা উড়িয়ে দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমি শুধু কী ঘটেছে, তা খুঁঁজে বের করার চেষ্টা করছি।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস বলেছে, ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে যাওয়া সৌদি স্কোয়াডের ১৫ সদস্যের ছবি ও তুরস্কের কাছে থাকা অডিও রেকর্ডিং এর ভিত্তিতে মার্কিন গোয়েন্দাদের বিশ্বাস জোরালো হয়ে উঠেছে। তারা মানতে শুরু করেছেন যে, খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে এবং সৌদি যুবরাজ এ হত্যাকা-ে জড়িত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে জমা দেওয়ার জন্য গোয়েন্দারা এ-সংক্রান্ত একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করছেন।

দুই সপ্তাহ আগে তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে নিজের বিয়ের কাগজপত্র আনতে ঢুকেছিলেন গত বছর থেকে ওয়াশিংটন পোস্টে নিয়মিত কলাম লিখে যাওয়া খাশোগি; এরপর থেকেই তার আর কোনো খোঁজ নেই।

সৌদি এ সাংবাদিককে তার দেশের গুপ্তচররাই ইস্তাম্বুলের কনস্যুলেটের ভেতর হত্যা করেছে বলে অভিযোগ আঙ্কারার। রিয়াদ এ অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও তদন্তের গতিপ্রকৃতিতে ‘খাশোগিকে খুন করা হয়েছে’ এমনটাই উন্মোচিত হচ্ছে বলে ধারণা পশ্চিমা গণমাধ্যমের। এর মধ্যেই গত বুধবার ওয়াশিংটন পোস্ট নিখোঁজ হওয়ার আগে তাদেরকে পাঠানো খাশোগির সর্বশেষ কলাম ছাপায়। ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের আগেই ৭০০ শব্দের ওই নিবন্ধটি সহকারীকে পাঠিয়েছিলেন আল-আরব নিউজ চ্যানেলের সাবেক এ প্রধান সম্পাদক।

খাশোগির নিখোঁজ নিয়ে আঙ্কারা ও রিয়াদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য এবং পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগের মধ্যেই ৩ অক্টোবর ওয়াশিংটন পোস্টের হাতে কলামটি পৌঁছায়। সপ্তাহ দুয়েক অপেক্ষার পর সেটি ছাপার সিদ্ধান্ত হয়। ৭০০ শব্দের এ কলামে খাশোগি আরব বিশ্বে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুযোগ উন্মোচনের জোর দাবি জানান। বলেন, ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে চাওয়া অভ্যন্তরীণ শক্তিগুলোই মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশে এ ধরনের ‘লোহার পর্দা’ চাপিয়ে দিয়েছে। তথ্য ও ধারণার অবাধ বিনিময় চেয়ে লেখা কলামটির শিরোনামও হচ্ছে- ‘আরব বিশ্বের সবচেয়ে বেশি যা দরকার, তা হলো অবাধ মতপ্রকাশ।’

রাজনৈতিক অধিকার ও বেসামরিক নাগরিকদের স্বাধীনতা নিয়ে ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনের কথাও উল্লেখ করেন খাশোগি। বেশিরভাগ আরব রাষ্ট্রই এ ধরনের অধিকার ও স্বাধীনতা দেয় না বলে ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। আরবের সরকারগুলো গণমাধ্যমের মুখচেপে ধরলেও সেখানে খুবই অল্প প্রতিবাদ হয় বলেও জানান খাশোগি। সাধারণ মানুষও এ দেখে আরো চুপ মেরে যায়।

তুর্কি বাগদত্তা হেতিস চেঙ্গিসকে বিয়ে করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করতে গত ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে ঢুকেছিলেন ওয়াশিংটন পোস্টের এ কলামনিস্ট।

নয় ঘণ্টা অপেক্ষার পরও খাশোগি কনস্যুলেট থেকে বেরিয়ে না আসায় তুর্কি কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানান হেতিস। প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে সৌদি সাংবাদিককে কনস্যুলেটের ভেতরেই হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করে আঙ্কারা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close