জুবায়ের চৌধুরী

  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

তাজিয়া মিছিলে গ্রেনেড

বিচারকাজ শেষ হয়নি ৩ বছরেও

পবিত্র আশুরা উপলক্ষে পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে তাজিয়া মিছিলে গ্রেনেড হামলার ঘটনার তিন বছর পার হতে চললেও এখন পর্যন্ত মামলাটির বিচারকাজ শেষ হয়নি। মামলাটিতে গত বছরের ৩১ মে ১০ জঙ্গির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। চার্জ গঠনের পর গত ১৬ মাসে ৪৬ মাসে ৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত।

২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর রাতে পবিত্র আশুরার মিছিলের প্রস্তুতিকালে তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলা চালায় জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গিরা। এতে দুজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়। ওই ঘটনায় চকবাজার থানায় মামলা করে পুলিশ। মামলাটির তদন্ত করতে সময় লেগেছে এক বছর। গত বছরের মে মাসে ১০ জঙ্গির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করেন ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ। চার্জ গঠনের পর ওই আদালতে মামলার বাদী চকবাজার থানার তৎকালীন এসআই জালাল উদ্দিন সাক্ষ্য দেন। এরপর মামলাটি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বদলি হয়। মামলাটি বদলি হওয়ার পর থেকে গতি কিছুটা বেড়েছে। এ আদালত গত ছয় মাসে আটজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। মোট ৪৬ জন সাক্ষীর মধ্যে নয়জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। আগামী ১১ অক্টোবর এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে।

মামলা সম্পর্কে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, চাঞ্চল্যকর এ মামলায় সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রপক্ষের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মামলাটি গত এপ্রিলে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য বদলি হয়ে আসে। এ কোর্টে মামলাটি আসার পর এখন পর্যন্ত আটজনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। আর আগে মাত্র একজনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়।

সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের পেশকার রুহুল আমিন জানান, এ মামলায় বর্তমানে পাবলিক সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য সমন দেওয়া হচ্ছে। পাবলিক সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে পুলিশ ও অন্যদের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য সমন দেওয়া হবে। তিনি আরো জানান, মামলার ১০ আসামির মধ্যে চয়জন কারাগারে ও চারজন জামিনে আছেন। আর ৪৬ জন সাক্ষীর মধ্যে মোট ৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর রাতে তাজিয়া মিছিলে জেএমবি জঙ্গিরা বোমা হামলা চালায়। এতে দুজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়। এ ঘটনায় রাজধানীর চকবাজার থানায় মামলা করে পুলিশ। পরে এর তদন্তভার ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়। বাংলাদেশে এর আগে তাজিয়া মিছিলে কখনো বোমা হামলা হয়নি। হামলার পর আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) হামলার দায় স্বীকার করে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, ওই ঘটনায় আইএসের কোনো যোগসূত্র নেই। তদন্ত শেষে ডিবি দক্ষিণের পুলিশ পরিদর্শক শফিউদ্দিন শেখ ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে ১০ জঙ্গিকে আসামি করে চার্জশিট অনুমোদনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠান। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর ওই বছরের অক্টোবরে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। গত বছরের ৩১ মে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।

জানা গেছে, ওই হামলায় ১৩ জঙ্গি জড়িত ছিল। তাদের মধ্যে ১০ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। অভিযানের সময় তিন জঙ্গি বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা সবাই জেএমবির সদস্য। তারা হলো জাহিদ হাসান ওরফে রানা ওরফে মোসায়েব, আরমান, কবির হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আশিক, রুবেল ইসলাম ওরফে সজীব, মাসুদ রানা, আবু সাঈদ সোলায়মান ওরফে সালমান, হাফেজ আহসান উল্লাহ মাহমুদ, শাহজালাল, ওমর ফারুক ওরফে মানিক ও চান মিয়া। আসামিদের মধ্যে শেষ চারজন জামিনে রয়েছে। অন্য ছয় আসামি বর্তমানে কারাগারে। এ ছাড়া আসামিদের মধ্যে প্রথম তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

জবানবন্দিতে তারা জানায়, প্রথমে তাদের মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পের শিয়াদের ওপর হামলার পরিকল্পনা ছিল। পরে হোসেনি দালানে হামলার পরিকল্পনা করে দ্রুত কামরাঙ্গীরচরে বাসাভাড়া নেয়। জঙ্গিদের পরিকল্পনা ছিল, হামলার দৃশ্য ভিডিও করার। কিন্তু আলোকস্বল্পতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। বন্দুকযুদ্ধে নিহত হোজ্জা হোসেনি দালানের কবরস্থান থেকে পাঁচটি হ্যান্ড গ্রেনেড ছুরে মারে। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিল কবির হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আশিক। সে জেএমবির আত্মঘাতী হামলাকারী দলের সদস্য।

তাজিয়া মিছিলে গ্রেনেড হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী শাহাদাৎ ওরফে আলবানি ওরফে মাহফুজ ওরফে হোজ্জা ২০১৫ সালের ২৫ নভেম্বর রাজধানীর গাবতলীতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। পরের বছর ২০১৬ সালের ১৩ জানুয়ারি রাজধানীর হাজারীবাগে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় অপর দুই জেএমবি কমান্ডার আবদুল বাকি ওরফে আলাউদ্দির ওরফে নোমান ও সাঈদ ওরফে হিরণ ওরফে কামাল। ২০১৫ সালের ২১ এপ্রিল আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজারে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ডাকাতি ও আটজনকে হত্যার ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীও ছিল এই হোজ্জা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close