নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন নির্মাণকাজ উদ্বোধন

যৌথ প্রকল্প উন্নয়নকে আরোএগিয়ে নেবে : প্রধানমন্ত্রী

সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে : মোদি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নেওয়া যৌথ প্রকল্পগুলো বাংলাদেশকে উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরো একধাপ এগিয়ে নেবে। উভয় দেশ মিলে যে কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে, তা দুই দেশের উন্নয়নকে আরো ত্বরান্বিত করবে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনটি নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইনের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। দুই প্রধানমন্ত্রী নিজ নিজ দেশের রাজধানী থেকে বিকেল ৫টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। জ্বালানি তেল আমদানি করতে পাইপলাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদারে ভূমিকা রাখবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। এদিন দুই প্রধানমন্ত্রী পাইপলাইন ছাড়াও বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুরে ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণ প্রকল্পও উদ্বোধন করেন।

এদিকে কনফারেন্সের শুরুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জন্মদিনে আপনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। অপরদিকে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনার জন্মদিন। এ উপলক্ষে আগাম শুভেচ্ছাও জানান মোদি। ভিডিও কনফারেন্সে দেওয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এবং পাইপলাইন দিয়ে সরবরাহ চালু হলে জ্বালানির দাম অনেক কমে যাবে। আর ঢাকা-টঙ্গী ও টঙ্গী-জয়দেবপুর তৃতীয়-চতুর্থ এবং পঞ্চম ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ হলে একদিকে যেমন

ঢাকার ওপর চাপ কমবে; তেমনি যাতায়াতের গতিও বাড়বে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পের আওতায় ৯৬ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ হলে পণ্য যেমন চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যেতে পারবে; তেমনি উত্তর-পূর্বে ভারতের রাজ্যগুলোয় সরবরাহ করা যাবে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ভৌগোলিকভাবে দুই দেশ প্রতিবেশী হলেও তা আজ পারিবারিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। আর এসব প্রকল্প উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে পারস্পরিক সম্পর্কও পৌঁছে গেছে নতুন উচ্চতায়।

সূত্র জানিয়েছে, ভারতের শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর পর্যন্ত প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপলাইন বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদার করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। সরকারি এক তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে, বর্তমানে আমদানি তেল চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ হতে খালাস করে চট্টগ্রাম ডিপোতে সঞ্চয় করে রাখা হয়। পরে কোস্টাল ট্যাংকে করে খুলনার দৌলতপুর ডিপোতে আনা হয়। সেখানে আনলোড করে আবার রেলের ওয়াগনে আপলোড করে নিয়ে যাওয়া হয় পার্বতীপুরে।

এই প্রক্রিয়ায় পরিবহনজনিত সমস্যা, অতিরিক্ত সময় এবং অর্থের অপচয় হয় উল্লেখ করে তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল আনলে এ তিনটিরই সাশ্রয় হবে। এ ছাড়া জ্বালানি নিরাপত্তা আরো জোরদার করতে এ পাইপলাইন কার্যকর অবদান রাখবে। পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল আমদানি সংক্রান্ত ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি গত বছরের ২২ অক্টোবর স্বাক্ষরের পরে চলতি বছরের ৯ এপ্রিলে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়। এ পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রথম তিন বছর ২ দশমিক ৫ লাখ টন ডিজেল সরবরাহ করা হবে। পর্যায়ক্রমে এ সরবরাহের পরিমাণ বেড়ে শেষ পাঁচ বছর ৪ লাখ টনে উন্নীত করা হবে। বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী ভবিষ্যতে প্রয়োজনে জ্বালানি তেলের আমদানি এই পাইপলাইনের মাধ্যমে আরো বাড়ানো সম্ভব হবে। নুমালীগড় রিফাইনারি ওই পাইপলাইনের মাধ্যমে ১৫ বছরের জন্য ডিজেল সরবরাহ করবে। উভয়পক্ষের সম্মতিক্রমে এ সময় বর্ধিত করা যেতে পারে।

পাইপলাইন ছাড়াও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দুই প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় এলওসির অর্থায়নে বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প দুটিও উদ্বোধন করেন।

ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনের অধীনে ট্রেন পরিচালনার লক্ষ্যে সেকশনাল ক্যাপাসিটি বৃদ্ধীকরণ এ দুটি প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মিত হলে সমন্বিত ও গতিময় ট্রেন সার্ভিস প্রবর্তনের মাধ্যমে শহরতলী এবং অন্যান্য জেলার যাত্রীদের রাজধানী ঢাকায় স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও সময় সাশ্রয়ী যাতায়াত সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রকল্প দুটিতে ভারতীয় এলওসির বরাদ্দ ৯০২ কোটি ৬৩ লাখ ৪১ হাজার টাকা। অপরদিকে বাংলাদেশ সরকার খরচ করবে ২০৪ কোটি ১৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close