আমির হোসেন
ছোট দলের বড় কান্ড
বিশ্বকাপ নিয়ে প্রত্যেক দলেরই পর্বত সমান স্বপ্ন থাকে। স্বপ্ন থাকে একের পর এক রাউন্ড পেরিয়ে ফাইনাল খেলার। বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া বড় দলগুলোর স্বপ্নের চেয়ে বেশি থাকে প্রত্যাশার চাপ। সেই চাপ সামাল দেওয়ার সামর্থও অবশ্য থাকে তাদের। তবুও কখনো কখনো ছোট দলগুলো স্বপ্নের সমান বড় হয়ে দাঁড়ায়। নিজেদের উজার করে দিয়ে মাঠে খেলে। বিশ্বকাপে তারা যে খেলার যোগ্য, সেটা প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। দেশের পতাকাকে সমুন্নত রাখতে চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখে না। তাইতো কখনো কখনো ছোট দলগুলোও বড় দলের বিপক্ষে চমক দেখায়। বড় দলগুলোর ঘাম ঝরিয়ে দেয়। অভিজ্ঞতা আর তারকা খেলোয়াড়দের চমকে শেষ পর্যন্ত বড় দলগুলো জয়ও পায়। কখনো কখনো অঘটনও ঘটে। রাশিয়া বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডেও ঘটেছে তেমন কিছু অঘটন। গ্রুপ পর্বের পর দ্বিতীয় রাউন্ডেও ছোট দলগুলো চকম দেখিয়েছে। বিশেষ করে রাশিয়া, জাপান ও ডেনমার্ক। রাশিয়ায় কক্ষচ্যুত স্পেন : এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট ছিল স্পেন। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে তারা শেষ ষোলোতে জায়গা করে নিয়েছিল। প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছিল এবারের বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে তলানিতে থাকা রাশিয়াকে। স্পেন হয়তো ভেবেছিল অনায়াসেই জয় পেয়ে যাবে রাশিয়ার বিপক্ষে। কিন্তু তাদের সেই ভাবনাকে মিথ্যে প্রমাণ করে দেয় রাশিয়া। অবশ্য ম্যাচের ১২ মিনিটেই আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়েছিল স্বাগতিকরা। ম্যাচে ফিরতে সময় নেয়নি তারা। ৪১ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে গোল করে ডিজুবা সমতায় ফেরান রাশিয়াকে। সমতা নিয়ে শেষ হয় প্রথমার্ধের লড়াই। এরপর নির্ধারিত সময়েও ভাঙে না ১-১ গোলের সমতা। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেও অক্ষুন্ন থাকে সমতা। এরপর ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য টাইব্রেকারে গড়ায় ম্যাচ। সেখানে রাশিয়ার গোলরক্ষক আকিনফেভ প্রথমে কোকে ও পরে আসপাসের কিক ফিরিয়ে দিয়ে হিরো বনে যান। ৫২ বছর পর রাশিয়াকে তোলেন বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে। আর ২০১০ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে বিদায় করে দেন শেষ ষোলো থেকেই। ঘরের মাঠে রাশিয়া তাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে খেলেছে। পাশাপাশি সমর্থকরা দারুণভাবে উজ্জীবিত করেছে তাদের।
অল্পের জন্য রূপকথার জন্ম দিতে পারেনি জাপান : বেলজিয়ামের সঙ্গে শক্তিমত্তার তুলনা করলে জাপান নিতান্তই আন্ডারডগ। সেই জাপান কী পরীক্ষাটাই নিল তারকায় ঠাসা বেলজিয়ামের। প্রথমার্ধে হ্যাজার্ড-লুকাকুদের জালের নাগাল পেতে দেয়নি। দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের ৪৮ মিনিটে হারাগুচির গোলে বেলজিয়ামের বিপক্ষে লিড নেয় জাপান। তার ৪ মিনিটের মাথায় ইনুই গোল করে ব্যবধান করে ফেলেন ২-০! প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার স্বপ্ন তখন খুব করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে জাপানের। জান-প্রাণ উজার করে দিয়ে খেলতে থাকে তারা। ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়েও দারুণভাবে ফিরে আসে বেলজিয়াম। বড় দলের বৈশিষ্ট্যই হয়তো এমন। ৬৯ ও ৭৪ মিনিটে ম্যাচে সমতা ফেরায় বেলজিয়াম। ২-২ গোলের সমতা নিয়ে ৯০ মিনিটের খেলা শেষ হয়। ইনজুরি টাইম শেষ হতে তখন অল্প কিছুক্ষণ বাকি। সবাই ধরেই নিয়েছিল ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গড়াতে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের ধারণাকে পাল্টে দেন বেলজিয়ামের চাদলি। ইনজুরি টাইমের শেষ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে ৯.৯৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে গোল করে বেলজিয়ামকে জয় এনে দেন নাসের চাদলি।
ক্রোয়েশিয়ার কঠিন পরীক্ষা নিল ডেনমার্ক : ক্রোয়েশিয়ার কঠিন পরীক্ষা নেয় অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল ডেনমার্ক। ম্যাচের প্রথম মিনিটেই গোল করে এগিয়ে যায় ডেনিশরা। ৪ মিনিটে সমতায় ফেরে ক্রোয়েশিয়া। এরপর নির্ধারিত ৯০ মিনিট, অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেও ভাঙে না সমতা। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে ভাগ্যের কাছে হেরে যায় ডেনমার্ক। টাইব্রেকারে তাদের ৩-২ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে ক্রোয়েশিয়া।
"