হাসমত আলী, গাজীপুর, নাইমুল হাসান টঙ্গী ও রাজীবুল হাসান শ্রীপুর থেকে

  ২৪ জুন, ২০১৮

আ.লীগ আত্মবিশ্বাসী : শঙ্কায় বিএনপি

প্রার্থীদের দৃষ্টি শ্রমিকদের ওপর

গাজীপুর সিটি নির্বাচনের আর একদিন বাকি। নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিন আজ। জয়ের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী প্রচন্ড আশাবাদী। এমন আশাবাদের মধ্যেও খুলনার অভিজ্ঞতা বিএনপিকে জয়ের ব্যাপারে কিছুতেই নিশ্চিন্ত রাখছে না। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থী তাদের বিজয় নিশ্চিত করতে নির্ভর করতে চাচ্ছেন শ্রমিকদের ওপর। এজন্য নিম্ন আয়ের মানুষকে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসতে পারলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলাম। অন্যদিকে শ্রমিক নেতা হাসান সরকারের দৃষ্টিও শ্রমিকদের দিকে। তার আশা দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার পেয়েছেন শ্রমিক রাজনীতি করে তাই এবার শ্রমিকদের ভোটেই শেষ হাসির অপেক্ষায় আছেন তিনি। এমন অভিন্ন লক্ষ্য সামনে রেখে শেষ দুই দিনের প্রচারণার সুযোগকে কাজে লাগাতে প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন নগরীর গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী এলাকা।

স্থানীয় নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, দলীয় নেতাকর্মীসহ নির্বাচন নিয়ে যারা কাজ করছেন, তারাই কেবল মাঠে আছেন। সাধারণ ভোটারদের সেখানে দেখা যাচ্ছে না। তাই ভোটারদের মনোভাব বোঝা খুবই মুশকিল। দুই প্রধান মেয়র প্রার্থী পথসভা ও প্রচারণা করছেন। বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন না। ফলে তারাও ভোটারদের মনোভাব বুঝতে পারছেন না। গাজীপুর একটা শিল্প শহরও বটে। এখানকার ভোটারদের বৈশিষ্ট্য বিচার করাটা কঠিন। এছাড়া ভোটারদের মধ্যে আছেন সিটি করপোরেশন এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা, অস্থায়ী বাসিন্দা, শ্রমজীবী মানুষ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, তরুণ ভোটার।

এদিকে স্থানীয় রাজনীতিবিদরা বলছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। এর বাইরে ছোট দলগুলোরও কিছু কিছু ভোট আছে। কোন মেয়র প্রার্থীকে ভোট দেবেন এমন সিদ্ধান্ত মোট ভোটারের কমপক্ষে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ আগেই নিয়ে রেখেছেন। এদের মনোভাব পরিবর্তন করে ভোট বাড়ানো কোনো দলের পক্ষেই সম্ভব হবে না। মূলত বাকি ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ভোটার, যারা ‘ভাসমান ভোটার’ হিসেবে পরিচিত, তাদের নিয়েই সেখানে হিসাব-নিকাশ করছেন প্রার্থীরা। এই ভোটারদের মধ্য থেকে যিনি যতটা নিজের দিকে টানতে পারবেন তিনিই জিতবেন।

গাজীপুর সিটির ভোটার ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। ভোটার হিসাবে গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে ৮টি বিশেষ অঞ্চলে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে আছে কাশিমপুর, কোনাবাড়ি, বাসন, কাউলতিয়া, গাজীপুর পৌর এলাকা, গাছা, পুবাইল ও টঙ্গী। ৮টি বিশেষ অঞ্চলের মধ্যে টঙ্গীতে মোট ভোটার ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৯৫২। অর্থাৎ মোট ভোটারের ৩২ শতাংশ টঙ্গীর। বাকি সাত অঞ্চলের কোনোটিরই ভোটার দেড় লাখও পার হয় না। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোটার গাছায় ১ লাখ ৪৭ হাজার এবং তৃতীয় কাশিমপুরে ১ লাখ ১৬ হাজার জন। সবচেয়ে কম ভোটার পুবাইলে ৬০ হাজার। আটটি বিশেষ অঞ্চলের মধ্যে টঙ্গীতে বিএনপি প্রার্থীর বাড়ি হওয়ায় সেখানে তিনি বেশি ভোট পাবেন বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। গাছা, কোনাবাড়ী, কাশিমপুরে আওয়ামী লীগের ভোট বেশি। বাকি এলাকাগুলোতে দুই প্রার্থী সমানে সমানে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।

চলছে প্রচারণার উৎসব : প্রতিদিনের মতো গতকাল সকালে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হলেও তা উপেক্ষা করে প্রার্থীরা প্রচারণা চালিয়েছেন। ঈদ উদ্যাপন শেষে পোশাকশ্রমিকসহ অধিকাংশ শ্রমজীবী মানুষ সিটি করপোরেশনের এলাকায় এসে পৌঁছে গেছেন। এতে করে নির্বাচনী প্রচারণায় প্রাণ ফিরে এসেছে। গতকাল শনিবার সকালে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম নিজ বাসভবনে ওলামা লীগ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরে খরতৈলে গণসংযোগ ও পথসভার মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু করেন। সাতাইশ স্কুলের সামনে, সাতাইশ চৌরাস্তা, ৫২ নম্বর মুদাফা, ৫৩ নম্বরে দেওড়া ফকির মার্কেট, ৫৫ নম্বর মিলগেট এলাকায় পথসভায় ভোট প্রার্থনা করেন।

খরতৈল স্কুলের সামনে পথসভায় জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা একটি আধুনিক শহর করতে চাই। টঙ্গী গাজীপুরবাসীর কাছে আমি আবদার করছি। আমাদের একবার নৌকায় ভোট দেন। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ আছি। আমরা সবাই মিলে একটি ক্লিন এবং গ্রিন সিটি উপহার দিতে চাই।’

দুপুরে মিলগেট পথসভায় হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়। চারদিক নৌকার জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে। মিলগেট পথসভায় জাহাঙ্গীর বলেন, বংশপরিচয়ে না, কর্মই হচ্ছে মানুষের পরিচয়। তিনি নিজেও একজন কর্মচারী। সব শ্রেণির মানুষকে সমানভাবে সম্মান দেখাতে চান। এসব পথসভায় অন্যদের মধ্যে মো. তোফাজ্জল হোসেন, মো. জালাল উদ্দিন মাস্টার, কাজী ইলিয়াস আহমেদ, মোস্তফা হুমায়ুন হিমু, মো. সাইফুল ইসলাম, আবদুল কাইয়ুম, নীলিমা আক্তার লিলি, মো. নুরুল ইসলাম নুরু প্রমুখ। পরে তিনি টঙ্গী নোয়াগাঁও এলাকায় সংসদ সদস্য মো. জাহিদ আহসান রাসেলের বাসভবনে একটি পারিবারিক অনুষ্ঠান যোগ দেন।

সেখানে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্যাহ খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকেই আওয়ামী লীগের সব নেতারা নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ।’

অপর দিকে বিএনপি প্রার্থীর মিডিয়া সেল জানায়, হাসান উদ্দিন সরকার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হায়দরাবাদ থেকে প্রচার কাজ শুরু করেন। পরে মাজুখান বাজার, নন্দীবাড়ি, বিন্দান, পুবাইল, ভাদুন, ইছালী ও কলেরবাজার এলাকায় দিনব্যাপী প্রচার কাজ করেন। পথসভায় হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, ধানের শীষের জোয়ার ঠেকাতে আদালতের মাধ্যমে নির্বাচন বন্ধ রাখতে ব্যর্থ হয়ে এখন পুলিশ বাহিনী লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী নিজেই পুলিশের গাড়িতে চড়ে এলাকায় টহল দিচ্ছেন। পুলিশ দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। সন্ধ্যা নামলেই আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক নেমে আসে। পুলিশ প্রত্যেক নেতাকর্মীর বাসা-বাড়িতে হানা দিচ্ছে। রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও পুলিশি হয়রানি থামছে না। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ^র চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক এ কে এম ফজলুল হক মিলন, সদস্য সচিব কেন্দ্রীয় নেতা কাজী সাইয়্যেদুল আলম বাবুল, কাপাসিয়া থানা বিএনপির সেক্রেটারি সাখাওয়াত হোসেন সেলিম।

প্রচারণায় বার বার উঠে আসছে শ্রমিক নেতা হত্যার ইস্যু : আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম তার প্রচার-প্রচারণায় টঙ্গীর জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যার বিষয়টি তুলে ধরছেন বার বার। তবে হাসান উদ্দিন সরকার মনে করেন মীমাংসিত বিষয়কে সামনে টেনে আনার কোনো মানে নেই। হত্যাকান্ডের বিষয়ে জনগণও অবগত আছে। ২০০৪ সালের ৭ মে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক জনসভায় গুলি করে হত্যা করা হয় আহসান উল্লাহ মাস্টারকে। এ ঘটনায় বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের চাচাতো ভাই নুরুল ইসলাম সরকারসহ ছয় আসামির ফাঁসির আদেশ দেন আদালত।

গতকাল শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ কালে হাসান সরকার বলেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিশ্চিত পরাজয় জেনে সরকার পুলিশ বাহিনী দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের আটক করছে। পুলিশ এ পর্যন্ত বিএনপির ১৩ জনকে আটক করেছে বলে জানা গেছে। গত ২০ জুন রাতে কাশিমপুর অঞ্চল নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মো. শাহিনকে আটক করে গাজীপুর গোয়েন্দা পুলিশ। পরে ওই রাতেই কাশিমপুর অঞ্চল পরিচালনা কমিটির সদস্য শাহজাহান ডিলার, কোনাবাড়ী কেন্দ্র পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ড. মিলন ও মিলন মিয়া, কোনাবাড়ী কেন্দ্র পরিচালনা কমিটির সদস্য তাইজুল ইসলাম, বাসনের আবদুস সামাদ, কাইলতিয়া কেন্দ্র পরিচালনা কমিটির সদস্য শাহ আলম, টঙ্গীর মরকুন টেকপাড়ার আবু সায়েম, গাছা অঞ্চলের ওমর ফারুক, পুবাইল ইছালির আবদুস সামাদ, কাজিমউদ্দিন, কলমেশ্বরের কাইসার হোসেন ও ২২নং ওয়ার্ডের বাহাদুপুরের শাহাব উদ্দিনকে আটক করেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist