প্রথম ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের কাছে ১-১ গোলের অপ্রত্যাশিত ড্র। স্বাভাবিকভাবেই দ্বিতীয় ম্যাচটাতে তেতে ছিল ব্রাজিল। কিন্তু মহাগুরুত্বপূর্ণ সেলেকাওদের ¯œায়ুচাপের চূড়ান্ত পরীক্ষা নিয়ে ছাড়লেন কোস্টারিকা গোলরক্ষক কেইলর নাভাস। ম্যাচের দেড় ঘণ্টা সময় পর্যন্ত নেইমার-কুতিনহোদের হতাশায় ভুগিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের শেষ প্রহরী। কিন্তু শেষ অবধি চীনের প্রাচীরটা ভেঙে ফেললেন ফিলিপ্পে কুতিনহো। শেষ বাঁশির আগমুহূর্তে গোল করলেন নেইমারও। এ যুগলের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে ২-০ গোলের শ্বাসরুদ্ধকর জয় তুলে নিয়েছে ব্রাজিল। কাঠখড় পোড়ানো এই জয়ের ফলে নক আউট পর্বের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেল টিটের দল। তবে পরপর দুই হারে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেল কোস্টারিকা। কাল গোল পোস্টের নিচে অবিশ্বাস্য পারফর্ম করেও দেশের বিদায় ঠেকাতে পারলেন না নাভাস।

কোস্টারিকা অধিনায়ককে যে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে, সেটা এক প্রকার অনুমিতই ছিল। নাভাসও প্রস্তুতিটা নিয়েছিলেন সেভাবে। এক অর্থে পুরো কোস্টারিকা দল নয়, ব্রাজিলের সঙ্গে একাই লড়াই করেছেন গোল পোস্টের এই অতন্দ্র প্রহরী। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে আটটি দুর্দান্ত সেভ করে ব্রাজিলকে হতাশায় ডুবিয়েছিলেন এই গোলরক্ষক।

কিন্তু পুরো ম্যাচে রক্ষণাত্মক খেললেও শেষ রক্ষা হলো না। যোগ করা সময়ে ভেঙে যায় প্রতিরোধের দেয়াল। পরপর দুই গোল করে রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম জয় তুলে নেয় ব্রাজিল। সেলেকাওদের এই জয়ের নায়ক কুতিনহো। পরে গোল করে নেইমার হয়ে গেলেন শেষের নায়ক।

অথচ একটা গোলের জন্য কত কষ্টই না করতে হয়েছিল ব্রাজিলকে। নেইমার তো ছলচাতুরিরও আশ্রয় নিয়েছিলেন। বক্সে কোস্টারিকার ডিফেন্ডার গঞ্জালেজ তাকে ভালোভাবে স্পর্শও করেনি অথচ নেইমার এমনভাবে পড়ে গেলেন যেন তাকে টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে! রেফারি সাদা চোখে ধরতে পারেননি ব্রাজিলীয় তারকার এই অভিনয়। ডাচ রেফারি কাউপার্স বিয়ন পেনাল্টির বাঁশি বাজালেন। কোস্টারিকার খেলোয়াড়দের বারবার অনুরোধে রেফারি দ্রুতই ভিএআরের সহায়তা নিলেন। রিপ্লেতে দেখা গেল, আসলেই ইচ্ছে করে পড়ে গেছেন নেইমার। সেন্ট পিটার্সবার্গে একটা নাটকই হলো ৭৮ মিনিটে।

পেনাল্টি না পেলেও শেষ পর্যন্ত হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়নি ব্রাজিলকে। ৯০ মিনিটের যোগ করা সময়ে কুতিনহো এনে দিলেন আরাধ্য গোল। আর তাতেই যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছুটল ব্রাজিলের! ৯০ মিনিটের চেষ্টার পর অবশেষে গোলের দেখা পেয়ে ব্রাজিলিয়ান কোচ আনন্দের আতিশয্যে ডাগ আউটের সামনে আছাড় পর্যন্ত খেলেন! খানিক পরে নেইমারও গোল করে বুঝিয়ে দিলেন, জিততে হলে তার পেনাল্টি লাগে না! ম্যাচ শেষে অঝোরে কাঁদতে থাকলেন ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড। এই অশ্রু অবশ্যই আনন্দের।

ব্রাজিলকে যেভাবেই হোক আটকে রাখতে হবে, কিছুতেই গোল হজম করা যাবে না, পুরো ৯০ মিনিটে রক্ষণাত্মক কৌশল কাজে লাগিয়ে সফলও হয়েছিল কোস্টারিকা। আর এই সাফল্যে সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব পাবেন কোস্টারিকার গোলরক্ষক কেইলর নাভাস। কঠিন রক্ষণ ভেদ করে চলে আসা ব্রাজিলিয়ানদের একটার পর একটা আক্রমণ যেভাবে ঠেকিয়েছেন, ম্যাচসেরা হতে পারতেন রিয়ালের এ তারকা গোলরক্ষক।

দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণভাগে পাঁচজন থেকেও গোলের দেখা পাচ্ছিল না ব্রাজিল। কোস্টারিকা ঠেকিয়ে দিচ্ছে, একটু যেন অহমেই লাগল ব্রাজিলের। ৭৮ মিনিটে ওই নাটকের পর একটা সময়ে মেজাজ হারিয়ে নেইমার হলুদ কার্ডও দেখলেন। রেফারির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে এসে হলুদ কার্ড দেখতে হলো কুতিনহোকেও। গোলের জন্য মরিয়া ব্রাজিল ৯০ মিনিটের অতিরিক্ত সময়ে কোস্টারিকার পুরো ডি-বক্সটাই যেন নিজেদের দখলে নিয়ে নিল। অন্তিম মুহূর্তে মার্সেলোর ক্রস এল ফিরিমিনোর কাছে। তার কাছ থেকে জেসুস। তবে জাদুর ছোঁয়াটা দিলেন আসলে কুতিনহো। শ্বাসরুদ্ধকর ৯০ মিনিটের পর অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ব্রাজিলের।

কাল সেন্ট পিটার্সবার্গের গ্যালারিতে উঠল হলুদ ঢেউ। সেই আনন্দ দ্বিগুণ করতে দৃশ্যপটে এলেন ব্রাজিলিয়ানদের রাজপুত্র নেইমার। তার গোল না থাকলে যেন ব্রাজিলিয়ানদের আনন্দে পূর্ণতা আসে না! পুরো ম্যাচে অন্তত চারবার ডাইভ দিয়েছেন, পেনাল্টির জন্য নাটক করেছেন। কিন্তু নেইমার শেষ পর্যন্ত প্রমাণ করেছেন, তিনি ওসব ছাড়াই গোল করতে পারেন।

একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে ব্রাজিলের কাছে হারের কারণেই শুধু নয়, কোস্টারিকার আরো বড় হতাশা, রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ঘণ্টাও বেজে গেল তাদের। ম্যাচটা ড্র হলেও বড় বিপাকে পড়তে হতো ব্রাজিলিয়ানদের। প্রথম ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করে যে অনিশ্চয়তার মেঘ তৈরি হয়েছিল, কাল কোস্টারিকাকে হারিয়ে তা অনেকটাই কেটে গেল নেইমারদের।

আজকের খেলা

বেলজিয়াম-তিউনিশিয়া (সন্ধ্যা ৬টা)

জার্মানি-সুইডেন (রাত ৯টা)

দ. কোরিয়া-মেক্সিকো (রাত ১২টা)

"