ক্রীড়া ডেস্ক
বিধ্বস্ত বিপর্যস্ত আর্জেন্টিনা
আর্জেন্টিনা ০ - ৩ ক্রোয়েশিয়া
শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে হনহন করে মাঠ থেকে বেরিয়ে গেলেন আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা। মাথা নিচু করে একে একে মাঠ ছাড়লেন লিওনেল মেসি, গঞ্জালো হিগুয়েইন, হ্যাভিয়ের মাশ্চেরানোরা। ম্যাচ শেষে দুই দলের মধ্যে যে সৌজন্যতা বিনিময়ের প্রচলিত একটা রীতি আছে- সেটাও বোধহয় ভুলে গেছে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা! সেদিকে মোটেও ভ্রুক্ষেপ নেই ক্রোয়েশিয়ার। পরপর দুই জয়ে বিশ বছর পর আবারো বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে জায়গা পাওয়ার আনন্দে যে আত্মহারা হয়ে উঠেছে তারা!
আসলে নিঝনি নোভগোরাদের ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার কাছে আর্জেন্টিনা যেভাবে হেরেছে তাতে করে মাঠে দাঁড়িয়ে করমর্দন করার মতো অবস্থায় ছিলেন না মেসিরা। টিকে থাকার যে স্বপ্নে জর্জ সাম্পাওলির দল মাঠে নেমেছিল সেটা ধূসর হয়ে গেছে ক্রোটদের গোল উৎসবে। একটি নয়, দুটি নয়, আর্জেন্টিনার জালে তিন তিনবার বল পাঠিয়েছেন মডরিচ অ্যান্ড কোং। রীতিমতো বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত, হতবিহ্বল আর্জেন্টিনা। উত্তরসূরিদের এমন নাকাল অবস্থা গ্যালারিতে বসেই দেখলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। আর্জেন্টাইন মহাতারকা টিস্যু দিয়ে চোখটাও মুছে নিলেন একবার।
দীর্ঘ বত্রিশ বছরের আক্ষেপ ঘোচানোর মিশনে শুরুতেই বড়সড় একটা ধাক্কা। এগিয়ে থেকেও আইসল্যান্ডের কাছে পা হড়কাতে হয়েছে আর্জেন্টিনাকে। ১-১ গোলের ওই ড্রটাই শঙ্কায় ফেলে দিয়েছিল মেসিদের দ্বিতীয় রাউন্ড-যাত্রা। কাল ক্রোয়েশিয়ার কাছে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে রীতিমতো খাদের চূড়ান্ত গিয়ে দাঁড়াল সাম্পাওলির দল। টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে মঙ্গলবার গ্রপপর্বে নিজেদের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনাকে শুধু জিতলেই চলবে না, অমঙ্গল কামনা করতে হবে আইসল্যান্ডের জন্য। তবে আজ নাইজেরিয়াকে আইসল্যান্ড হারিয়ে দিলে অসম্ভব কোনো সমীকরণের মুখোমুখি হতে হবে আর্জেন্টিনাকে।
আক্রমণ প্রতি আক্রমণে জমে ওঠা ম্যাচটার প্রথমার্ধ কাটে গোলখরায়। তবে গোলমুখ খোলার সুযোগটা পেয়েছিল দুই দলই। ২৮ মিনিটে ফাঁকা পোস্ট পেয়েও জালের ঠিকানা খুঁজে নিতে পারেনি আর্জেন্টিনা ফরওয়ার্ড এনজো পেরেজ। ছয় গজ দূরত্বে থেকে শট করা পেরেজের মাটি কামড়ানো শট ক্রসবারের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।
বত্রিশ মিনিটে আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক উইলি ক্যাবায়েরোকে একা পেয়েও সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন মারিও মান্দজুকিচ। ভ্রালজিলকো দুর্দান্ত ক্রসটাতে ঠিকঠাক মাথা-ই ছোঁয়াতে পারলেন না ক্রোট স্ট্রাইকার। তার হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে ক্রসবারের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।
বিরতির আগ মুহূর্তে মাঝ মাঠে থাকা ইভান পেরেসিচের কাছ থেকে বল পেয়েছিলেন অ্যান্তে রেবিক। কিন্তু ডি-বক্সের খুব কাছে এসে বলের নিয়ন্ত্রণ কিছুটা হারিয়ে ফেলেন তিনি। যদিও পরে বল নিজের দখলে নেন রেবিচ। কিন্তু তার শটটা চলে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে।
বিরতি থেকে ফিরেই সেই ভুলের শাপমোচন করেন রেবিচ। গোলরক্ষক ক্যাবায়েরোর হাস্যকর ভুলের মাশুল গুণতে হলো আর্জেন্টিনাকে। ধরা বলটা মার্কাদোকে দিতে চেয়েছিলেন চেলসি গোলরক্ষক। কিন্তু বলটার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলেন ক্রোট উইঙ্গার রেবিচ। দুর্দান্ত এক ভলিতে ল্যাটিন জায়ান্টদের জাল কাঁপান তিনি (১-০)।
এমন গোল হজম করে হতভম্ব হয়ে যান আর্জেন্টাইনরা। ৬৩ মিনিটে গোলটা ফিরিয়ে দেওয়ার সম্ভাব্য সেরা সুযোগ পেয়ে যায় সাম্পাওলির দল। ডি-বক্সে হিগুয়েইনের বাড়িয়ে দেওয়া বলটা পেয়েছিলেন ম্যাক্সিমিলিয়ানে মেজা। কিন্তু তার শটটা ঠেকিয়ে দেন ক্রোট গোলরক্ষক সুবাচিচ। ডান পাশের ক্রসবারের সামনে গিয়ে মেসিকে ফিরতি পাস মেজা। কিন্তু এবার মেসির শট আটকে দেন ক্রোটদের গোলপোস্টের অতন্দ্র প্রহরী।
পুরো ম্যাচে ছড়ি ঘোরানো ক্রোয়েশিয়া শেষ দশ মিনিটে আর্জেন্টিনাকে নিয়ে ছেলে-খেলা-ই করল। ব্রোজোভিচের অ্যাসিস্ট থেকে দুর্দান্ত এক শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ক্রোট অধিনায়ক লুকা মডরিচ। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে স্কোর লাইন ৩-০ করেন ইভান রাকিটিচ। আর্জেন্টিনার জন্য স্বস্তি এটা যে রাকিটিচের ফি-কিকের দুর্দান্ত শটটা ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। না হলে ম্যাচের ফলটা ৪-০ হতে পারতো।
"