কক্সবাজার প্রতিনিধি
শরণার্থীক্যাম্প পরিদর্শনকালে মিয়ানমারের মন্ত্রী
দ্রুত ফিরিয়ে নেওয়া হবে রোহিঙ্গাদের
রোহিঙ্গাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে সফররত মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী ড. উইন মিয়ায়ে। তিনি বুধবার দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনকালে এ কথা জানান। এই প্রথম একজন মিয়ানমার সরকারের মন্ত্রী রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করলেন। অপরদিকে, সৌদি আরবের একটি প্রতিনিধি দল গতকাল উখিয়ার রোহিঙ্গ ক্যাম্প পরিদর্শন করেছে।
এদিকে, মিয়ানমারের মন্ত্রী কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং ক্যাম্প পরিদর্শনের সময় বিক্ষোভ করেছে রোহিঙ্গারা, তবে সেখানে বাধা দিয়েছে পুলিশ। বিক্ষোভরত রোহিঙ্গারা বলতে থাকেন, ‘আমাদের নির্যাতন করে, হত্যা করে, ধর্ষণ করে পাঠিয়ে দিয়েছে।’ এদিকে, মিয়ানমারকে সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ দিয়েছেন ড. উইন। সেখানে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন তিনি। এতে ক্ষুব্ধ শরণার্থীরা বলেন, তারা বাঙালি নয়, রোহিঙ্গা পরিচয়ে মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়।
আমাদের কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে বেলা ১১টার পর কুতুপালং ক্যাম্পে পৌঁছান মন্ত্রী ড. উইন মিয়ায়ে। প্রথমে ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয় তার কাছে। পরে ডি-৫ ব্লকের ইউএনএইচসিআর কার্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেন মিয়ানমারের পুনর্বাসনমন্ত্রী উইন ও তার সফরসঙ্গী।
এ সময় ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ডসহ রোহিঙ্গাদের নাগরিক নানান সুযোগ সুবিধা প্রদানের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান এবং নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের খোঁজখবর নেন। রোহিঙ্গারাও এ সময় তাদের দাবি-দাওয়া মন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। পরে মন্ত্রী উইন মিয়ায়ে সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বসহ মর্যাদা ও অধিকার বিষয়ে মিয়ানমার সচেষ্ট থাকবে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।
রাখাইন ভাষায় মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা রোহিঙ্গা আবুল ফজল বলেন, মন্ত্রী আমাদের (রোহিঙ্গাদের) নাগরিক সুবিধা দিয়ে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা চলছে বলে জানান।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. এ কে ইকবাল হোসেন জানান, গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় পৌঁছান ড. উইন। পরে গতকাল বুধবার সকালে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওয়ানা হন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার রোহিঙ্গা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবুল কালাম, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাহিদুর রহমান, পুলিশ সুপার ড. এ কে এম ইকবাল হোসেন, উখিয়া-টেকনাফ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাইলাউ মারমা, ওসি উখিয়া আবুল খায়ের, ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক কোঅর্ডিনেটর, আইএমও এবং ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধিসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ।
উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে সৌদি আরবের প্রতিনিধি দল
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সব ধরনের মানবিক সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সৌদি সরকার। ইতোপূর্বে সৌদি সরকার ২০ মিলিয়ন সৌদি রিয়াল সাহায্য প্রদান করেছে। গতকাল বুধবার কক্সবাজারে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক প্রেসব্রিফিংয়ে এ কথা জানান সৌদি আরবের কিং সালমান রিলিফ অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান সেন্টারের সুপারভাইজার জেনারেল ড. আবদুল্লাহ আল রাবিয়াহ। এ সময় রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইনে নির্যাতনের শিকার হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে সম্মান ও নিরাপদে যাতে ফিরে যেতে পারে সে জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগেরও আহ্বান জানান। আসন্ন রমজানে সৌদি সরকার সহযোগিতা করবেন বলেও জানান সৌদি সরকারের সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী। পরে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের কথা বলেন এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখেন।
উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। রাখাইনে তাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। প্রথম দফায় প্রত্যাবাসনের জন্য আট হাজার ৩২ জনের একটি তালিকাও দেওয়া হয়েছিল মিয়ানমারকে। ওই তালিকা যাচাই-বাছাই করে ৩৭৪ জনকে রাখাইনের বাসিন্দা হিসেবে চিহ্নিত করার কথা জানিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বলেছে, যেকোনো সময় তাদের ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত তারা।
"