শাহ্জাহান সাজু
আসন্ন বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাড়ছে
প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রাথমিকভাবে ৩০ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে
আসছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি, নগদ সহায়তা ও প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজেটে ভর্তুকি বাড়ানো হচ্ছে। এসব খাতে আসছে বাজেটে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রাথমিকভাবে ৩০ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৮ হাজার ৪৫ কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ১ দশমিক ৩ ভাগ। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত নভেম্বরে বাজেট সমন্বয় সভায় আগামী অর্থবছরের ভর্তুকি খাতে প্রাথমিকভাবে ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছিল ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, গত তিন অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরেও জ্বালানি তেলে কোনো ভর্তুকি দিতে হবে না। কিন্তু গত জানুয়ারি থেকে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে দেখা গেছে। প্রতি ব্যারেল তেল ৬০ ডলারের ওপরে উঠে গেছে। এই দামের ঊর্ধ্বগতি যদি অব্যাহত থাকে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে যদি তেলের দাম সমন্বয় না করা হয়, তাহলে এ খাতে ভর্তুকি দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে। এ ভর্তুকির অর্থ দেওয়া হবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে ( বিপিসি)। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আগামী এপ্রিলে নেওয়া হবে বলে বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছন।
সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেওয়া হবে কৃষি খাতে। এ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলন করা হয়েছে নয় হাজার ২০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে কৃষি খাতে ভর্তুকি রাখা হয়েছে নয় হাজার কোটি টাকা। এর আগের বছরের সংশোধিত বাজেটে যা ছিল ছয় হাজার কোটি টাকা। আগামী বাজেটে ভর্তুকির দ্বিতীয় বড় খাত হিসেবে ধরা হয়েছে বিদ্যুৎ খাত। এ খাতের আওতায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) ভর্তুকির অর্থ দেওয়া হবে। এ খাতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ প্রাক্কলন করা হয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও আগামী অর্থবছরে বরাবরের মতো রফতানি খাতেও নগদ সহায়তা দেওয়া হবে। এ খাতের মধ্যে তৈরি পোশাকখাতসহ আরো ডজনখানেক রফতানিমুখী পণ্যের রফতানির বিপরীতে নগদ সহায়তা দেওয়া হবে। সাধারণত এ সহায়তা রফতানির বিপরীতে পাঁচ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত দেওয়া হয়ে থাকে। আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেটে অন্যান্য খাত বলে বিবেচিত কয়েকটি খাতে আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব করা হতে পারে। এর পরিমাণ পাঁচ হাজার কোটি টাকার অধিক হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি, নগদ সহায়তাসহ প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৮ হাজার ৪৫ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরের বাজেটে সংশ্লিষ্ট খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। যদিও সংশোধিত বাজেটে এ ভর্তুকির পরিমাণ ২৩ হাজার ৮৩০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছিল। তাছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে খাদ্য খাতে চার হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর আগের বছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল দুই হাজার ৮২০ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে রফতানি খাতে প্রণোদনা হিসেবে চার হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে। পাটজাত পণ্যে প্রণোদনা হিসেবে বরাদ্দ রয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। পিডিবির জন্য বাজেটে পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভর্তুকি বাবদ রাখা হয়েছে। এর আগের বছর পিডিবির জন্য ভর্তুকি বাবদ ছিল ছয় হাজার কোটি টাকা।
"