বিশেষ প্রতিনিধি

  ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

গড়ে ওঠা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ গুঁড়িয়ে দেয় পুলিশ

পূর্ব পাকিস্তানে তখন আগুন জ্বলছে। ক্ষোভে ফুঁসছে মানুষ। ১৯৫২ সালের ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর, বিপাকে পড়ল পাকিস্তান সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে ভাষার দাবিতে বাঙালির আন্দোলনের বিপক্ষে চলতে থাকে জোরালো অপপ্রচার। তারা জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করতে থাকে যে, কমিউনিস্ট ও পাকিস্তানবিরোধীদের প্ররোচনায় ছাত্ররাই প্রথমে পুলিশকে আক্রমণ করেছিল। পরে নিরুপায় পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি ছুড়েছে।

নানা কৌশলে চলতে থাকে তাদের এ প্রচার। সারা দেশে বিলি করা হয় এ-সংক্রান্ত প্রচারণাপত্র। সংবাদপত্রগুলোকে সরকারের ইচ্ছানুযায়ী সংবাদ পরিবেশনে চাপ দিতে থাকে।

অন্যদিকে, চলতে থাকে সাধারণ জনগণ ও ছাত্র গ্রেফতার। ২৩ ফেব্রুয়ারি সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে স্বতঃস্ফুর্তভাবে ধর্মঘট পালিত হয়। নুরুল আমিনের পেটোয়া বাহিনী আন্দোলনকারীদের ওপর দমনপীড়ন অব্যাহত রাখে।

একই দিন সিদ্ধান্ত হয় শহীদ মিনার বানানোর। মেডিক্যালের নতুন বিল্ডিং তৈরির জন্য পাশেই ইট-বালু ছিল তা দিয়ে রাতের মাঝেই নির্মাণ করা হয় প্রথম শহীদ মিনার। ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর ৬টায় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণকাজ শেষ হয়। সকাল ১০টায় শহীদ শফিউর রহমানের বাবা স্মৃতিস্তম্ভটির ফলক উন্মোচন করেন।

অন্যদিকে, নুরুল আমিনের সরকার আবারও রাজপথে সর্বত্র সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পরিবেশ স্বাভাবিক করার ঘোষণা দেয়। ফলে শুরু হয় গ্রেফতার এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় সব শীর্ষনেতাকে গ্রেফতার করা হয়।

২৫ ফেব্রুয়ারি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের ডাকা সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। শহীদ আবুল বরকতের ভাই একটি হত্যা মামলা দায়েরের চেষ্টা করেন। কিন্তু উপযুক্ত কাগজের অভাব দেখিয়ে মামলাটি গ্রহণ করে না সরকার। শহীদ রফিকউদ্দিন আহমদের পরিবারের একই ধরনের প্রচেষ্টাও বাতিল হয় একই কারণে।

এ রাতেই ছাত্রছাত্রীরা বরকতের শহীদ হওয়ার স্থানে ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে একটি অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শুরু করেন। সেদিনই ছাত্র বিক্ষোভ দমাতে ভাষা আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

২৬ ফেব্রুয়ারি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ পুনরায় উদ্বোধন করেন আজাদ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দিন। সেদিন বিকেলেই সেনাবাহিনী ও পুলিশ সেটি গুঁড়িয়ে দেয়। সরকারের দমনপীড়নে ঢাকায় স্তিমিত হতে থাকে ছাত্র আন্দোলন। কিন্তু উত্তাল হয়ে উঠতে থাকে ঢাকার বাইরে আন্দোলন। এবার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার পাশাপাশি বর্বর নুরুল আমিনের পদত্যাগের দাবি ওঠে ভাসানীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী মুসলিম লীগের কাছ থেকে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist