নিজস্ব প্রতিবেদক

  ৩০ জানুয়ারি, ২০১৮

ডিজিটাল আইনের খসড়া অনুমোদন

বঙ্গবন্ধুু ও মুক্তিযুদ্ধ অবমাননায় সাজা ১৪ বছর

বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আইনটি পাস হলে আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। খসড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অবমাননার শাস্তি ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ড বা ৫০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডের বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত করে ইলেকট্রনিক মাধ্যম বা ওয়েবসাইটে প্রচার করলে ১০ বছরের সাজা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের শাস্তি সাত বছর কারাদন্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের নিয়মিত বৈঠকে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮’-এর খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়।

পরে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, আইনটি পাস হলে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি ডিজিটাল কাউন্সিল থাকবে। জানা গেছে, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন পাস হওয়ার মধ্য দিয়ে আইসিটি আইনের বহুল আলোচিত ৫৭ ধারা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তবে এ আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধগুলো নতুন আইনের কয়েকটি ধারায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে নীতিগতভাবে অনুমোদিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ার ধারা ১৯-এ মানহানি, মিথ্যা ও অশ্লীল, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং ধারা ২০-এ শত্রুতা সৃষ্টি ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি-সংক্রান্ত বিধান রাখা হয়েছিল।

এসব বিষয় একই সঙ্গে দন্ডবিধির ধারা ৪৯৯ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর ধারা ৫৭-এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৮, ২৯ ও ৩১ ধারায় এ-সংক্রান্ত অপরাধ ও শাস্তিগুলো বিন্যস্ত করা হয়েছে।

চারটি ধারায় যা বলা হয়েছে : ২৫ ধারায় বলা হয়েছেÑযদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে ইচ্ছাকৃতভাবে আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শনমূলক তথ্য প্রেরণ করে, অন্য ব্যক্তিকে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ করতে পারেÑএমন তথ্য প্রকাশ করে, মিথ্যা তথ্য জানার পরও কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্ত বা হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য তথ্য প্রকাশ বা সম্প্রচার করে তাহলে সেটা অপরাধ হবে। প্রথম দফায় এ অপরাধের শাস্তি তিন বছরের কারাদ- বা অনধিক তিন লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড হতে পারে। এসব অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার করলে অনধিক পাঁচ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড হতে পারে।

২৮ ধারায় বলা হয়েছেÑযদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় অনুভূতি বা মূল্যবোধে আঘাত করার জন্য ইলেকট্রনিক বিন্যাসে কিছু প্রকাশ করে তাহলে সেটা অপরাধ হবে। প্রথম দফায় এ ধরনের অপরাধ করলে সাত বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড হতে পারে। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার করলে ১০ বছরের কারাদন্ড ২০ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড হতে পারে।

২৯ ধারায় বলা হয়েছেÑকোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইটে পেনাল কোডের সেকশন ৪৯৯-এ বর্ণিত অপরাধ করে তাহলে তার তিন বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ৫ কোটি টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড হতে পারে। এ অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার করলে পাঁচ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড হতে পারে।

৩১ ধারায় বলা হয়েছেÑযদি কেউ ইচ্ছা করে ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন; যা বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়; তাহলে তা অপরাধ হবে। এ অপরাধের জন্য সাত বছরের কারাদ- বা ৫ লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ- হতে পারে। দ্বিতীয়বার বা বারবার এ অপরাধ করলে ১০ বছরের কারাদ- বা অনধিক ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ- হতে পারে। এ ধারাটিকে অজামিনযোগ্য করা হয়েছে।

২০১৬ সালের ২২ জুলাই মন্ত্রিসভা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া নীতিগতভাবে অনুমোদন করে। খসড়ায় জাতির পিতা, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা, প্রচারণার মদদ দেওয়ার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদ- বা এক কোটি টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছিল। কিন্তু যাবজ্জীবনের মতো কঠোর শাস্তির বিধান রাখায় সংশ্লিষ্ট সবাই একমত হতে পারেনি। সেই কঠোর অবস্থান থেকে এবার নমনীয় হয়েছে সরকার। ফৌজদারি কার্যবিধি, দ-বিধি ও কারাবিধি অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদন্ডের অর্থ হলো ৩০ বছর কারাদন্ড। এ অবস্থায় খসড়া আইনে অপরাধের শাস্তি কমিয়ে অনধিক ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ড বা অনধিক ৫০ লাখ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডের বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist