পাঠান সোহাগ

  ২২ জানুয়ারি, ২০১৮

শয্যা সংকটে ক্যানসার হাসপাতাল

রাজধানীর জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটে চাহিদার তুলনায় শয্যা সংখ্যা কম। আছে বিভিন্ন সমস্যা। এ কারণে প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক রোগী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ জন রেফার হওয়া রোগী এ হাসপাতালে আসেন। এদের কেউ কেউ ১৫ দিন থেকে ১ মাস ঘুরেও শয্যা না থাকায় ভর্তি হতে পারেন না। চিকিৎকরা রোগীদের বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগে সাধারণ চিকিৎসা দিয়েই বাড়ি ফিরিয়ে দিচ্ছেন। যাদের জরুরি ভর্তি প্রয়োজন নানা অজুহাতে তাদের ভর্তির সময় পিছিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ আছে।

সরেজমিনে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড মাস্টার ও রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন-পুরনো মিলে প্রতিদিন হাসপাতালে এক হাজার থেকে ১২০০ রোগী আসেন। প্রতিদিন প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ রোগীকে কেমোথেরাপি ও ৫০০ জন রোগীকে রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। তাদের সেবা দিতে ২০০ চিকিৎসক, ৪০০ নার্সসহ কর্মরতা-কর্মচারী ও আয়া-ওয়ার্ডবয় কাজ করছেন।

বেশির ভাগ রোগী বাড়ি থেকে নিয়ে আসে স্বজনরা। তারা চিকিৎসা শেষে আবার বাড়ি নিয়ে যায়। প্রয়োজনীয় শয্যার অভাবে অতি জরুরি রোগীকেও একইভাবে চিকিৎসা নিতে হয়। ফরিদপুর থেকে একজন রোগী নিয়ে মধ্যবয়সি শিউলী নামের এক নারী এসেছেন। তিনি বলেন, ১৫ দিন ঘুরেও কোনো সিট পাইনি। বাইরে থেকেই চিকিৎসা নিতে হয়েছে। হাসপাতালের পাশে টিনশেডের একটি কক্ষ ভাড়া নিয়েছি। প্রতিদিন ২৫০ টাকা করে দিতে হয়। ময়মনসিংহ থেকে জুনায়েত তার চাচাকে নিয়ে এসেছেন। তিনি সাত দিনেও শয্যা পাননি। টাঙ্গাইলের রহিম বেশ কয়েক দিন ঘুরে সিট পাননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা বলেন, ‘রোগীর জন্য সিট পেয়েছি। এ হাসপাতালে আমাদের পরিচিত অনেকে চাকরি করেন।

এছাড়া সি ব্লকের চার তলার পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড দেয়াল দিয়ে পয়ঃনিষ্কাশনের পানি পড়ে। এতে রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা করেছেন অনেকে। এ হাসপাতালে তিন বছর আগে সুবিশাল ক্যান্টিন চালু ছিল। কিছু দিন চলার পর বর্তমানে সেটি বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রতিদিন রোগীর স্বজন ছাড়াও চিকিৎসক-নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী, ওয়ার্ডবয়সহ ১২০০ থেকে ২০০০ মানুষকে খাবারের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিষ্ঠানটিতে ৫০০ শয্যার অবকাঠামো থাকলেও অনুমোদন আছে ৩০০ শয্যার। শয্যা খালি সাপেক্ষ রোগী ভর্তি করা হয়। শয্যা খালি না থাকলে তারা রোগী ভর্তি করাতে পারছেন না। সরকারি অনুমোদন ছাড়া শয্যা বাড়ানো যায় না। এর জন্য জনপ্রশাসন, অর্থ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সমন্বিত পদক্ষেপ লাগবে।

এসব বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রতিষ্ঠানটি ৫০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। পরে রোগীর চাপ বাড়ায় ১৫০ শয্যা করা হয়। বর্তমানে ৫০০ শয্যার অবকাঠামোতে ৩০০ শয্যা চালু আছে। শয্যা বাড়াতে হলে সরকারিভাবে নীতিমালা করে পাস করাতে হবে। এর জন্য সময় লাগবে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির দশম তলার ভবনের দুই পাশে ৫০ শয্যা উপযোগী করে ১০০ জন রোগীর জন্য প্রস্তুতকৃত দুটি ওয়ার্ড তালাবদ্ধ। লাইট, ফ্যান ও তিনটি লিফট চালু আছে। নবম তলাতে ১০০ শয্যার অবকাঠামো থাকলেও দুটি ওয়ার্ড চালু না করে সেখানে প্রতিষ্ঠানটির লিফট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বেসরকারি কোম্পানির লিফট টেকনিশিয়ান এহসানুল হক ও লিফটম্যান আবুল কালাম তিন বছর ধরে পরিবারসহ বসবাস করছেন। সপ্তম ও অষ্টম তলা দুটিকে কেবিনের আদলে তৈরি করা হলেও সেখানে মাত্র ৩০টি কেবিন চালু করা আছে। আর দ্বিতীয় তলায় সব মিলিয়ে ৯০ টি কেবিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। পাশাপাশি বি ব্লকের দ্বিতীয় তলায় প্রকল্প পরিচালকের কক্ষের বিপরীতে চিকিৎসক বসার উপযোগী ৬টি এবং ষষ্ঠ তলায় ১২টি কক্ষের সাতটিই পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।

১০ তলা ভবনের চারটি বিশাল তলায় মাত্র ৩০টি কেবিন ছাড়া এখনো কোনো কার্যক্রমই চালু করা হয়নি। এত জায়গা ফাঁকা থাকার পরও অবকাঠামোগত সমস্যার কথা বলে আট তলাবিশিষ্ট রেডিওথেরাপি ইউনিট ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা বলেছেন, রহস্যজনক কারণে প্রায় ৩০০ শয্যার জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের আটটি ওয়ার্ড দীর্ঘ ৯ বছর ধরে ফেলে রাখা হয়েছে। তাছাড়া সঠিক তদারকির অভাবে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। লোকাল ওয়ার্ড মাস্টার মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, হাসপাতালের মূল ভবনের নিচ তলায় (ব্যাজমেন্ট) নির্মাণ ত্রুটির কারণে বাইরের ড্রেনের পানি ভেতরে ঢুকে পড়ে। এতে মাঝে মধ্যেই গোড়ালি পরিমাণ পচা-দুর্গন্ধযুক্ত পানি জমে থাকে। এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রোগীদের জন্য রান্না করা হয়। এর পাশেই প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের একটি লন্ড্রি টিট্রম্যান্ট প্লান মেশিন রয়েছে। এটি বিগত ছয় মাস ধরে নষ্ট। ইলেক্ট্রিক্যাল এই যন্ত্রটি অদক্ষ শ্রমিক দিয়ে চালাতে গিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে প্রতি সপ্তাহে টাকার বিনিময়ে বাইরের লোক দিয়ে বেড শিট-কম্বল পরিষ্কার করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, হাসপাতালের ভাঙাচোরা চেয়ার-টেবিল ও অকেজো মালামাল দিয়ে সি ব্লকের উপরের চারটি ফ্লোরকে পরিত্যক্ত গুদামে পরিণত করা হয়েছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অভাবে হাসপাতালে প্রতিটি কক্ষ ভালোভাবে পরিষ্কার করা হচ্ছে না। নায্যমূল্যে ওষুধ বিক্রির জন্য একটি ফার্মেসি চালু করার কথা থাকলেও সেটি চালু নেই।

এসব বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, সিনিয়র চিকিৎসকদের চেম্বার, বিভিন্ন আসবাব ও অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখার জন্য কক্ষ ও রেডিওথেরাপি কক্ষ সংকুলান হচ্ছে না। তাই নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। তারপর হাসপাতালে শয্যা বাড়ানোর কার্যক্রম শুরু হবে। তিনি আরো বলেন, চতুর্থ শ্রেণির জনবল কম আছে। ৭০ জন নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছিল। তাও আইনগত কারণে বন্ধ আছে। প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় লন্ড্রি মেশিন আপাতত বন্ধ আছে। শিগগিরই চালু করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist