আবু আফজাল সালেহ

  ২০ আগস্ট, ২০১৯

মুক্তমত

হুমকির মুখে চামড়াশিল্প

রফতানি পণ্য তালিকা প্রণয়ন করতে গেলে পাট ও চায়ের পর অনিবার্যভাবে যে পণ্যটির নাম চলে আসত তা হলো চামড়া। তবে আমাদের চামড়া খাত বাজার ধরতে পারছে না। পরিবেশ দূষণের কারণে বাংলাদেশের ট্যানারি বৈশ্বিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) মানসনদ দিচ্ছে না। বিশ্বের ৬৬টি বড় ব্র্যান্ডের সদস্য। এলডব্লিউজির মান সনদহীন ট্যানারি থেকে তারা চামড়া কেনে না। পরিবেশ সুরক্ষা, বর্জ্য পরিশোধন, কাঁচামালের উৎস, জ্বালানি ও পানির ব্যবহার ইত্যাদি বিবেচনা করা হয় সনদের ক্ষেত্রে। বিশ্বের ৪৪০টি কারখানা এলডব্লিউজি সনদ পেয়েছে।

মানের দিক থেকে বাংলাদেশের চামড়াই বিশ্বের সেরা বলে মনে করেন চামড়া বিশেষজ্ঞরা। এ রকম ‘স্মুথ গ্রেইন’-এর চামড়া বিশ্বের অন্য কোথাও মেলে না। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ চামড়ার জুতা রফতানি করছে। বাংলাদেশে আগে জুতা তৈরি হলেও তা দ্বারা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করা হতো। চীনে চামড়ার তৈরি জুতা শিল্পের উৎপাদন ধীরে ধীরে কমছে বলে সে দেশের পত্রপত্রিকা মারফত জানা যাচ্ছে। চীনের ছেড়ে দেওয়া বিশ্বের জুতার বাজারে আমাদের প্রবেশ করতে হবে। একটু উদ্যোগী আর ব্যবসায়ীরা আন্তরিক হলেই এ সুযোগ কাজে লাগানো যাবে। মান বাড়িয়ে বাজার ধরতে দেশে অন্য শিল্পবান্ধব সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। ব্যক্তি-উদ্যোগ সম্পৃক্ত করতে হবে বা বাড়াতে হবে।

চামড়ার প্রায় ৬০ শতাংশই আসে ঈদের পশু জবাই থেকে। প্রতি বছরের মতোই বিভিন্ন অজুহাতে দেশীয় বাজারে চামড়ার দাম কমাতে তৎপর হচ্ছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র। আর এ সময়েই সিন্ডিকেট ও কারসাজি করে বিপুল সম্ভাবনার এ খাতকে অস্থির করতে চায় কেউ কেউ। এ সময়ে সরকার আরো কঠোর ভূমিকা পালন করলে ভালো হবে। চামড়া খাতকে শক্তিশালী করতে ট্যানারি কারখানার আধুনিকায়ন, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে, চামড়াশিল্পে ব্যবহৃত উপকরণের উৎপাদন বৃদ্ধি, সঠিক পদ্ধতিতে পশুর শরীর থেকে চামড়া ছাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ, সংরক্ষণ এবং পাচার রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাপক প্রচার এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের উন্নয়নে নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এতে চামড়াশিল্পের গুণগত মান বাড়িয়ে রফতানি বাড়াতে কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি বেশ কিছু প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, তৈরি পোশাক খাতের মতো চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতে রফতানি উন্নয়ন ফান্ড (এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড) সম্প্রসারণ করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে যোগাযোগ সহজতর করা ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে বিনিয়োগ বাড়াতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করা হবে।

দেশে প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ লাখ বর্গফুট ফিনিশড চামড়া আমদানি হচ্ছে। অথচ দেশীয় পশুর চামড়া রফতানি ক্রমেই কমে যাচ্ছে। রফতানিতে মিলছে না ন্যায্যমূল্য। নানা অব্যবস্থাপনার কারণে দেশের চামড়াশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কাঁচা চামড়া সঠিকভাবে সংরক্ষণ না হওয়ায় এর ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। আবার দেশের ট্যানারিগুলো শতভাগ পরিবেশবান্ধব না হওয়ায় বিদেশি ক্রেতারা বিমুখ হচ্ছেন। ২০১৬ সাল থেকে দেশে কাঁচা চামড়ার বাজারে ধস নামতে থাকে। চামড়াশিল্পের পথচলা ৬০ বছরেরও বেশি। এখন পর্যন্ত গড়ে উঠেনি এ খাতের শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শ্রমিকদের অদক্ষতার কারণে প্রতি বছর নষ্ট হয় শতকোটি টাকার চামড়া।

সময়ক্ষেপণ না করে চামড়াশিল্পের বর্জ্য পরিশোধনের কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাটি কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। মৌসুমি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে পারলে চামড়াশিল্প আরো অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারবে। একই সঙ্গে ব্যাংকঋণের সুদ কমিয়ে ট্যানারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তর সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করতে পারলে এ দেশের চামড়াশিল্প বিশ্ববাজারে প্রথম কাতারে স্থান করে নিতে পারবে। সরাসরি বিপণন বাড়াতে পরিবেশবান্ধব সনদ পেতেই হবে। আর সেটি পেলেই প্রক্রিয়াজাত চামড়ার বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অংশ আবার বাড়তে থাকবে।

লেখক : উপপরিচালক (বিআরডিবি), কুষ্টিয়া

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close