মোতাহার হোসেন

  ৩০ জুলাই, ২০১৯

মতামত

ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টার কাছে প্রত্যাশা

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবনের স্বপ্ন ছিল একটি সুখী সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। সেই লক্ষ্য নিয়ে তারই সুযোগ্য মেয়ে শেখ হাসিনা নিরন্তর কাজ করে চলেছেন। মূলত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার আধুনিক রূপই হচ্ছে আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ। ‘ভিশন-২০২১’-এর অধীনে ঘোষিত সময়ের আগেই একটি সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এবং তার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরন্তর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। জাতির জনক কর্তৃক চট্টগ্রামের বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ স্থাপনের মধ্য দিয়েই ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথনকশা রচিত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসুরি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য-যোগাযোগ ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরিকল্পনায় এগিয়ে যাচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের পথনকশা। ২৭ জুলাই ছিল সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৪৯তম জন্মদিন। তার প্রতি রইল আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা। অন্যদিকে এ কথা বলা সংগত, আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের অগ্রসেনানীই হচ্ছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি একই সঙ্গে সম্ভাবনাময় আগামীর বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। সেই অর্থে জয় হচ্ছেন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের জনক’। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্ম হওয়ায় বাংলাদেশের জয়ের সঙ্গে মিলিয়ে বঙ্গবন্ধু তার নাম রাখেন জয়। তার বাবা ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া, যিনি ছিলেন দেশের একজন প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী।

আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ পাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তিনি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর ধারণা দেন এবং এর বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। মূলত বাংলাদেশকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে শক্তিশালী করতে তিনি ই-গভর্নেন্স ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর জোর দেন। তার লক্ষ্য হলো আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে আউটসোর্সিংয়ে শীর্ষস্থানে নিয়ে যাওয়া। ২০২১ সালের মধ্যে রফতানি আয়ে টেক্সটাইল এবং গার্মেন্ট খাতকে অতিক্রম করে যাওয়ার জন্য আইটি খাতকে নিয়ে তিনি বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন।

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী জয় ভারতের ব্যাঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান ও গণিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। আরো কিছু শেখার আগ্রহ থেকে পরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্ট’ থেকে জনপ্রশাসন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৪ সালে অরাজক পরিস্থিতিতে তিনি দেশে আসেন। মূলত তখন থেকেই তার নেতৃত্বের পথে হাঁটা শুরু। পরে ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে দেশে যখন অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় থেকে ‘মাইনাস টু’ ফরমুলা বাস্তবায়নের অপচেষ্টায় লিপ্ত, ঠিক তখনই তিনি এ বিষয়টি বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছেন। তার এসব উদ্যোগ সফল হয় এবং তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার তার মা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

এরপর থেকে দলে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে শুরু করেন জয়। ২০১০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তাকে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্যপদ দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবৈতনিক উপদেষ্টা হিসেবেও নিযুক্ত করা হয়। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি উপদেষ্টা হওয়ায় দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ বিষয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ পান তিনি। তার চিন্তা ও স্বপ্নপ্রসূত বর্তমানে বিকাশে মুহূর্তে টাকা লেনদেন, ই-কৃষিতথ্য, ই-স্বাস্থ্যসেবা, ই-পাসপোর্ট, ই-টেন্ডারিং, ই-ডকুমেন্ট, ই-গভর্নেন্স, ই-ফাইলিং, শিক্ষার্থীদের জন্য ই-ভর্তি কার্যক্রম প্রবর্তন প্রভৃতি নতুন নতুন সেবা, যা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছেছে। এই সেবা আদান-প্রদানে যুক্ত রয়েছে দেশের বিপুলসংখ্যক তরুণ উদ্যোক্তা। এতে আর্থিকভাবে মানুষ যেমনি উপকৃত হচ্ছেন, তেমনি সময় কমছে বহু গুণে। পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগ করে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, চাঁদাবাজি বন্ধে ই-আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বহু গুণে দক্ষতা ও সফলতার পরিচয় দিতে সক্ষম হচ্ছেন। একই সঙ্গে দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে এই প্রযুক্তি।

সজীব ওয়াজেদ জয়ের এই উদ্ভাবনী ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রবর্তনের ফলে দেশের তরুণদের শক্তিকে কাজে লাগাতে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। তিনি নিজেও এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। কোনো শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি হিসেবে তিনিই প্রথম তরুণদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসেন এবং তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন পরামর্শ গ্রহণ করেন। আর তরুণরাও প্রথমবারের মতো দেশের শীর্ষ কোনো ব্যক্তির সঙ্গে এভাবে আলোচনার সুযোগ পান। তরুণদের সঙ্গে আলোচনার পর তিনি ‘সুচিন্তা’ নামের একটি সংগঠন তৈরি করেন। পলিসি থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) চেয়ারম্যান হিসেবে তরুণদের দেশ পরিচালনায় সম্পৃক্ত করতে তিনি বিভিন্ন কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেন, যার মধ্যে আছে ‘লেটস টক’ এবং ‘পলিসি ক্যাফে’। ২০১৫ সালে তিনি ‘ইয়ং বাংলা’ নামে একটি প্ল্যাটফরর্মতৈরির উদ্যোগ নেন।

সম্প্রতি সজীব ওয়াজেদকে নিয়ে আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইটে একটি নতুন ওয়েব পেজ সংযোজন করা হয়েছে। যার ওয়েব ঠিকানা হলো িি.িধষনফ.ড়ৎম/ংধলববনধিুবফ। ওয়েব পেজে সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্ম থেকে তার শিক্ষা, কর্মজীবন সবকিছুই স্থান পেয়েছে, যা থেকে বাংলাদেশ কীভাবে তথ্যপ্রযুক্তিতে অগ্রসর হচ্ছে, তারও বিস্তারিত জানা যাবে। পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে প্রাচীনতম দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় কার্যক্রম ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পরিচালনা করছে বহু দিন ধরে। এই ওয়েব ঠিকানা িি.িধষনফ.ড়ৎম। দলটি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় তাদের ওয়েবসাইটে তুলে ধরে থাকে। এ ছাড়া সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) সজীব ওয়াজেদের এই ওয়েব পেজটি তৈরিতে সহযোগিতার পাশাপাশি লেট’স টক ও পলিসি ক্যাফের মতো সফল প্রোগ্রামের আয়োজন করছে। যার মাধ্যমে তারা তরুণ সমাজ এবং পলিসি মেকারদের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র হওয়ার সুবাদে পরিবার থেকেই পেয়েছেন রাজনৈতিক শিক্ষা। এর ফলে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পেরেছেন তিনি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে শামিল হতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আর এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তথ্যপ্রযুক্তি।

সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিভিন্ন দূরদর্শী এবং সময়োপযোগী উদ্যোগের কারণে বাংলাদেশ গত ১০ বছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যাপক উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে আইটি ফ্রিল্যান্সিংয়ে তথা আউটসোর্সিংয়ে তৃতীয় স্থান দখল করতে সমর্থ হয়েছে। শুধু ২০১৫ সালেই এই খাত থেকে ৩০ কোটি ডলার রফতানি আয় করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি হাইটেক পার্ক স্থাপন করা হয়েছে। এগুলোতে হাজার হাজার তরুণ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষতা বাড়ানোর প্রশিক্ষণ পাচ্ছে। এই খাতে গবেষণার জন্য অনেককেই বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সরকারি এবং জনসেবায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে সরকারি ওয়েবপোর্টাল ‘জাতীয় তথ্য বাতায়ন’ যা বিশ্বের মধ্যে সর্ববৃহৎ ওয়েব পোর্টাল হিসেবে স্বীকৃত। প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে কয়েক শ মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছে। দেশের পাঁচ হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। ডিজিটালাইজেশনের সুফল দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মোবাইল এবং ইন্টারনেট ব্যবহারে বিপ্লব ঘটানোর কারণে বাংলাদেশকে এখন মোবাইল ব্যাংকিংসেবায় বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে ধরা হচ্ছে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং বিশ্বের অন্যতম প্রযুক্তিবিদ বিল গেটসও সজীব ওয়াজেদ জয়ের ডিজিটাল প্রযুক্তি উদ্ভাবনের প্রশংসা করেছেন।

বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি সম্মানজনক ‘আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্ট’ পুরস্কার অর্জন করেন। ২০০৭ সালে তিনি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম কর্তৃক ‘গ্লোবাল ইয়ং লিডার’ হিসেবে নির্বাচিত হন। আমাদের প্রত্যাশা, ৬৭ বছর আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আলোর যে মশাল জ্বালিয়ে রেখে গিয়েছিলেন, তার সুযোগ্যকন্যা শেখ হাসিনা, দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এবং আওয়ামী লীগ নিষ্ঠার সঙ্গে তা বহন করে চলেছে। প্রত্যাশা, সজীব ওয়াজেদ জয় তার উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ভাবনাকে ছড়িয়ে দেবেন বাংলার আনাচে-কানাচে, মাঠে-ঘাটে, পথে-প্রান্তরে। এর সুফল পবে দেশবাসী। জয়তু সজীব ওয়াজেদ জয়।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close