আবু আফজাল সালেহ

  ১৯ মে, ২০১৯

মুক্তমত

নারী পানি ধান : এ নিয়েই গান

বহুল পঠিত একটি অমর কবিতা ‘স্বাধীনতা তুমি’। শামসুর রাহমানের এ কবিতার কিছু অংশ আজ তুলে ধরতেই হচ্ছে। বলতে হবে বাধ্য হচ্ছি।

‘... স্বাধীনতা তুমি/ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।/...স্বাধীনতা তুমি/ বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর

শাণিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।/...স্বাধীনতা তুমি/ বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদির রঙ।’

কবির এ কথার সঙ্গে বাংলাদেশে মিল পাচ্ছি না। স্বাধীনতার যথাচ্ছা ব্যবহার হচ্ছে দেশে। কৃষিপ্রধান দেশে কৃষকরা ভালো নেই। ফসল মাঠেই পুড়িয়ে দিচ্ছেন! সিন্ডিকেট সরকারকে আটকে রাখতে চেষ্টা করে সব সময়। নারীরা আজ ধর্ষিত; মেহেদিরাঙাতে ভয়। পথেঘাটে সর্বত্র নিরাপত্তাহীনতায়। সমাজের কোনো শ্রেণি-পেশার কাছে নিরাপদে নেই তারা। অকারণে কবিদের জেলে যেতে হয়। সরকারপ্রধানের যথেষ্ট আন্তরিকতা আছে যাতে দেশের মানুষ ভালো থাকে। আমরা সহযোগিরা তার সঙ্গে সুর মেলাতে পারছি না! সিন্ডিকেটরা নিজের স্বার্থে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চান। কিন্তু সরকারকে কঠোর হয়ে সিন্ডিকেট মুক্ত করতে হবে। আর সংশ্লিষ্টদের বিবেক জাগিয়ে তুলতে হবে। আল্লাহ আমাদের বিবেক জাগ্রত করুন।

কৃষিপ্রধান দেশ। কিন্তু এ ব্যাপারে আমাদের সুষ্ঠুু নীতিমালা নেই। এগিয়ে যাচ্ছে কৃষি। কিন্তু পেছন থেকে টেনে ধরে কেউ কেউ। তারাও আমাদের অংশ। বা¤পার ফলন। কিন্তু কৃষকরা ধান ও চালের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। মহাজনের টাকা, বীজ-সার কেনার জন্য ধারদেনা- এসব শোধ করার চিন্তা মাথায় এলে নাভিশ্বাস ওঠে যায়। অঞ্চলভেদে এবার ধানচাষে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ১৪ হাজার টাকা। কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে অর্ধেক টাকাও মিলছে না। ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে দেশের কৃষকরা যখন খেতেই পাকা ধানে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছেন ঠিক তখনই ভারত থেকে হাজার হাজার টন চাল আমদানি করা হচ্ছে। সারা দেশে রব উঠেছে-‘কৃষক বাঁচাও, কৃষি বাঁচাও’। রংপুর ও রাজশাহীতে কয়েক কৃষক ও সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমেছিলেন। তারা সড়কে ধান ছিটিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। দিনমজুরের পারিশ্রমিক চড়া। কোথাও কোথাও ২ মণ ধান দিয়েও মিলছে না কামলা। কৃষকের উৎপাদিত খরচ তো উঠছেই না, উল্টো প্রতি মণে লোকসান হচ্ছে ৩০০ টাকার বেশি। রাগে-দুঃখে-ক্ষোভে খেতের পাকাধানে আগুন দিচ্ছেন কৃষক। টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে ঘটেছে এক অভূতপূর্ব ঘটনা। সেখানে আগুন দেওয়া খেতের ধান কৃষকের হয়ে কেটে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

উপরন্ত ভারত থেকে চাল আমদানিও হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। চাল আমদানি করায় আমদানিকারক ও ভারতীয় কৃষকরা লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের কৃষকরা। আমরা যখন বিদেশে চাল রফতানির কথা বলছি ঠিক সে সময় হাজার হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানিকে অনেকে হাস্যকর বলছেন। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে সংকট না থাকা সত্ত্বেও চাল আমদানি করায় বাজারে ধানের দাম আরো কমে যাচ্ছে। মিল মালিকরা বলছেন, বিদেশ থেকে চাল আমদানির ফলে বাজারে এর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। কমছে দেশি চালের দাম ও চাহিদা। আমদানি বন্ধ না হলে কৃষকরা আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তৈরি হয়েছে সিন্ডিকেট। প্রতিবারই হয়। মধ্যস্বত্বভোগী ও চালকল মালিকদের কারসাজি ভাঙতে হবে। কৃষিপ্রধান দেশে এটা চলতে দেওয়া যেতে পারে না! কৃষক অগ্রাধিকার দিয়ে সরকারকে কঠোর হতে হবে। জানি না, সময়মতো সরকারি ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু করা গেলে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটত না। কৃষকের এখন নাজেহাল অবস্থা। বাজারে ক্রেতা নেই। সরকারি সংগ্রহ অভিযানও শুরু হয়নি। এখনই উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। সংশোধন করতে হবে ধান-চাল সংগ্রহের প্রক্রিয়াগত ত্রুটি। আমাদের পলিসি পরিবর্তন করা দরকার। কারো জন্য সরকারের বদনাম মেনে নেওয়া যাবে না!

দ্বিতীয় আলোচ্য বিষয় হচ্ছে শিশু ও নারী নির্যাতন। সমাজের প্রায় অর্ধেকাংশ নারী। এদের শ্রমের মূল্যও অনেক কম। কোনো ক্ষেত্রে বিবেচনায় আসেই না! আর নির্যাতন ও অবহেলার শিকার পদে পদে। এখানেও জড়িত সমাজের আমাদেরই অংশ। দেখতে ঠিক মানুষের মতো। কিন্তু কার্যক্রম ঠিক মানুষের মতো নয়! নারীরা আজ পথেঘাটে সর্বত্রই নিগ্রহের শিকার। মানসিক ও সহিংসতার অন্যতম শিকার নারীসমাজ। তরুণীসমাজ বেশি সমস্যাগ্রস্ত। তনু-নুশরাতরা লালসার বস্তু হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এ সমাজে। ঘরে থেকেই বৈষম্যের মাধ্যমে নিগ্রহের শিকার হয় শেষজীবন পর্যন্ত। ঘরের পরে সমাজ, তারপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অতঃপর রাষ্ট্রেও অবহেলিত নারী। বৈষম্য-নিপীড়িত-নিগ্রহ হচ্ছে সর্বত্র। বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তো নিরাপত্তায় নেই। নারীনিগ্রহ থেকে পরিত্রাণ পেতে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রথমেই দরকার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। সেকেলে দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে হবেই সর্বস্তরের লোকদের। ঘটনা প্রতিদিনের। কিন্তু সমাধান হয় না! বলছি নারী নির্যাতন

বিষয়ে; ধর্ষণ ও ধর্ষণ শেষে খুন নিয়ে। বা বলা যেতে পারে নারীর প্রতি সহিংসতা বা মানসিক নির্যাতন নিয়ে! শিশু নির্যাতনের হার বেড়েই যাচ্ছে।

সবচেয়ে বড় সমাধান হচ্ছে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে। মানুষ হিসেবে আমরা লজ্জাতে মাথা লুকাবার ¯েপস পাওয়ার কথা নয়। তাই এখনই আমাদের নেতিবাচক মনোভাব ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন দরকার। আমরা মুখে বলি এক আর মনে ধারণ করি অন্যটা। আর বাস্তবায়ন করি তৃতীয়টা। নারী নির্যাতনের ধাপগুলো এমন হতে পারেÑ যৌতুকপ্রথার বলি, শিশুগৃহকর্মী নির্যাতন, বিদেশে গৃহকর্মী নির্যাতন, খুন, ধর্ষণ ইত্যাদি ইত্যাদি। ধর্ষণ প্রমাণ করাও নারীর প্রতি একরকমের নির্যাতন। নারীর আলামতের বর্ণনা দিতে হবে একজন পুরুষের কাছে! এটা কী নির্যাতনের পর্যায়ে পড়ে কিনা! এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট একটি নির্দেশনা দিয়েছেন সম্প্রতি। বিদেশে নারীনির্যাতন বন্ধে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে। যেসব দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে বা আসবে সেসব দেশে কর্মী পাঠানো বন্ধ করতে হবে বা কঠোর করতে হবে। প্রয়োজনে চুক্তি করে কর্মী পাঠাতে হবে। যাতে আমরা আইনইগত সহায়তা পেতে পারি।

আর একটা বিষয়ে কথা না বললেই নয়। পানি। রাজধানীর পানি। প্রথমে সুপেয় পানি বলা হলেও এখন কিছু পয়েন্টে অপরিষ্কার পানি বলে ঢাকা ওয়াসা স্বীকার করছে। আসলে আমরা যারা সরকারের কর্মচারী তাদের হারতে জানা শিখতে হবে। বেতন-ভাতার বিরাট অংশ যারা জোগান দেন এবং যাদের জন্য চেয়ারে আছি তাদের কাছে হেরে যাওয়া শিখতে হবে। অযথা কেউ অভিযোগ করে না! খতিয়ে দেখার মানসিকতা তৈরি করতেই হবে। পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া চলে না। কোলরিজের কবিতাংশ মনে পড়ে গেল। পানি পানি; সর্বত্র পানি। কিন্তু পান করার মতো পানি নেই। আমাদের রাজধানীর ক্ষেত্রে অবশ্য পানি সংকট আছে। আর পান করার মতো পানি প্রায় দু®প্রাপ্য।

ভালো পানি বা সুপেয় পানির জন্য বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। নদী-খালগুলো উদ্ধার করে খনন করে ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। পানি পরিশোধনাগার আরো নির্মাণ করতে হবে রাজধানীতে। প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়সহ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করবেন বলে আশা করি। দেশের সংকটকালে প্রধানমন্ত্রী নিজেই এগিয়ে এসে সমস্যার সমাধান করেছেন। আর কেউ করেননি। কারো ইচ্ছা থাকে; অন্য অংশের থাকে না! ফলে সমস্যা জিঁইয়ে থাকে। শেষ ভরসা আমাদের প্রধানমন্ত্রী। কিছু বিষয় তাকেই পরিচালনা করতেই হবে। যারা দায়িত্বে আছেন অনেক সময় জনগণ তাদের বিশ্বাস করে না! অনেক ক্ষেত্রে প্রতারিত হয় সাধারণ জনগণ বা সুবিধাভোগী। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স। আমরা জানি। প্রমাণও পেয়েছি। এবার কয়েকটি ক্ষেত্রে দেখতে পাব আশা করি। পর্যায়ক্রমে সবগুলো খাত। আমরা সে অপেক্ষায় থাকতেই পারি।

লেখক : কবি ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close