সৌমিত্র দেব

  ১০ মে, ২০১৯

মুক্তমত

শ্যাম বেনেগালের নতুন বায়োপিক

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিক বানাতে ঢাকায় এসে এপ্রিল মাসের দুটো দিন ব্যস্ত সময় পার করেছেন ভারতের বরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক শ্যাম বেনেগাল। তিনি এই বায়োপিকের নির্মাতা হবেনÑ এ কথা অনেক দিন ধরেই শুনে আসছি আমরা। বেশ কিছু আন্তর্জাতিক মানের শিল্পসম্মত চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন তিনি। ভারতে মহাত্মা গান্ধী, নেহরু এবং নেতাজী সুভাষ বসুর মতো ব্যক্তিত্বদের জীবনী নিয়ে বায়োপিক বানানোর অভিজ্ঞতা তার আছে। তাই বঙ্গবন্ধুর ওপরে কাজ করতে গিয়ে তিনি কি বলেন, সেটা জানার খুব আগ্রহ সবার। ঢাকায় এসে বেনেগাল প্রথমেই তেজগাঁওয়ের চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) যান। বিএফডিসির কর্মকর্তাদের পাশাপাশি চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে কথা বলেন। দুপুর গড়িয়ে তিনি ঢাকার অদূরে গাজীপুরের কবিরপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফিল্ম সিটি পরিদর্শনে যান। সেখানে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক কীভাবে বানানো হবে, কারিগরি সুবিধা কী কী থাকবে, কলাকুশলীÑ এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। সিনেমাটি বাংলা ভাষায় হোক, তিনি এটাই চেয়েছেন। শিল্পী নিয়ে এখনো তেমন কিছু চূড়ান্ত করেননি বলেও জানা যায়।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, শ্যাম বেনেগাল মনে করেন, টিমওয়ার্কে সিনেমা তৈরি হয়। বাংলাদেশি মেধাবীরা এ সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হবেন। এ দেশেই সিনেমাটির দৃশ্যধারণ করা হবে। তাই ঢাকায় এসেছি, এখানে কী ধরনের সুবিধা পাব, তা দেখতে। এটা ঠিক যে, বঙ্গবন্ধুর মতো একজন ব্যক্তিত্বের জীবনী নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করাটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দারুণ একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এ সিনেমার কাজ করতে গিয়ে সম্পর্কটা আরো উন্নতর জায়গায় পৌঁছাবে। বঙ্গবন্ধুর মতো এত বড় মাপের একজন জাতীয় নেতাকে নিয়ে সিনেমার কাজটি সততার সঙ্গে করতে চাই।

বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে সিনেমাটি বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হবে। আনন্দের বিষয় ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে এ সিনেমা মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সিনেমার নাম কী হবে এবং বাজেট কতÑ এ নিয়ে কিছুই জানা যায়নি।

বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে নির্মিতব্য সিনেমাটি নিয়ে গত বছর অক্টোবরে শ্যাম বেনেগাল বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সিনেমাটি বানানোর জন্য তিনি এখন পুরোপুরি প্রস্তুত এবং এর নাম ভূমিকায় কে অভিনয় করবেন, তা নিয়েও তিনি ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন। তার কথায়, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি চাই বাংলাদেশ থেকে কোনো অভিনেতা এই চরিত্রে অভিনয় করুন। কারণ, সেটাই বেশি সমীচীন হবে। আর তিনি একটু রোগা হলেই ভালো, কারণ জীবনের বেশি অংশ শেখ মুজিব নিজেও কিন্তু বেশ সরু আর রোগা ছিলেন। খুব কম লোকই এটা খেয়াল করেন যে, শেখ মুজিবের যে বিশাল, ভারিক্কি চেহারার ছবিগুলোর সঙ্গে আমরা বেশি পরিচিত, সেটা তার জীবনের পরের দিকের। শেষ দিকে তার কিছুটা ওজন বেড়েছিল ঠিকই, কিন্তু জীবনের বেশি সময় তিনি রীতিমতো রোগাই ছিলেন, যেমনটা টিপিক্যাল বাঙালি বুদ্ধিজীবী ও অ্যাক্টিভিস্টরা হন আরকি!’ আমার মনে হয়, শ্যাম রোগা বলতে এখানে সিøম বুঝিয়েছেন। তরুণ বঙ্গবন্ধুর যেসব ছবি পাওয়া যায়, তাতে তাকে সিøমই দেখায়। পরবর্তীকালে দীর্ঘ কারাজীবন এবং নানা ধরনের চাপে তার চেহারায় ভারিক্কি এসেছিল। বয়সটাও বিবেচনায় নিতে হবে। সে অর্থে বঙ্গবন্ধু সিøমই ছিলেন।

৩ এপ্রিল বুধবার বিকেলে রাজধানীর সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল। ৮৪ বছর বয়সী শ্যাম বেনেগালকে দেখতে যথেষ্ট সজীব ও সক্ষম মনে হলো। বৈঠকের শুরুতে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে দুই দেশের মধ্যে যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণবিষয়ক চুক্তির সূত্র ধরে বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক যে চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা হয়েছে, সেটির পরিচালক হিসেবে শ্যাম বেনেগালের এটি প্রথম বাংলাদেশ সফর। তাকে সহায়তার জন্য ভারত তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে, বাংলাদেশও অনুরূপ একটি কমিটি গঠন করতে চলেছে। সিনেমাটির প্রয়োজনে সম্ভাব্য সব সুবিধা দেবে বাংলাদেশ।’

২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে এক বছর-মুজিববর্ষের মধ্যেই এ চলচ্চিত্র নির্মিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। শ্যাম বেনেগাল তার বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশে আসতে পেরে আমি অত্যন্ত উদ্বেলিত ও সম্মানিত বোধ করছি। আমি চাই, ইতিহাসের সঠিক প্রতিফলনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও একটি জাতির জন্মকথা তুলে ধরতে। বাঙালি জাতির জন্ম ইতিহাসে যেমন বিজয়ের আনন্দ আছে, তেমনি আছে হারানোর ব্যথাও; যেমনটি আছে গ্রিক ট্র্যাজেডিতে।’

‘বঙ্গবন্ধুর ওপর সিনেমাটি বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে হলেও বেশির ভাগ শিল্পী ও কলাকুশলী বাংলাদেশ থেকেই অংশ নেবেন’ উল্লেখ করে শ্যাম বেনেগাল জানিয়েছেন, ‘দুই দেশের লেখক ও গবেষকরাই এ কাজে সহায়তা করবেন এবং সিনেমার প্রয়োজনে দক্ষিণ এশিয়ার যেকোনো স্থানে দৃশ্যধারণে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। তার জীবনীর সঙ্গে পৃথিবীর সব বাঙালির আবেগ জড়িত। শ্যাম বেনেগাল কি পারবেন সেই আবেগ ধারণ করতে? এ প্রশ্ন উঠতেই পারে। বিশেষ করে মুজিববর্ষের মধ্যেই এত বড় মাপের একজন ব্যক্তিত্বের বায়োপিক নির্মাণ সহজ ব্যাপার নয়। বিদেশি নির্মাতা বাঙালির আবেগ ধারণ করতে পারবেন না, বিষয়টা সে রকমও নয়। রিচার্ড অ্যাটেনবরো মহাত্মা গান্ধীর বায়োপিক নির্মাণ করে দেখিয়েছেন, সেটা সম্ভব। শ্যাম বেনেগাল কি পারবেন তাকে ছাড়িয়ে যেতে! যদি পারেন, তা হলে বাঙালি ও বাংলাদেশ তার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে।

লেখক : কবি ও সাংবাদিক

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close