মামুনুর রশীদ

  ২৯ মে, ২০১৮

বিশ্লেষণ

ত্রাতার ভূমিকায় তিনি

মধুমতী আর বাইগারের প্রাঞ্জল স্রোতের স্পর্শে যার বেড়ে ওঠা, শৈশব থেকেই যার অদম্য সংগ্রামের মধ্যে লালিতপালিত হওয়া। বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্বের সান্নিধ্যে যার জীবন, অসংলগ্ন জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে যার নেতৃত্ব শেখা। বিদ্যানিকেতন থেকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড সবটাই যার পদধূলিতে আজ খ্যাত, তিনি কি কখনো সাম্যের বাইরে গিয়ে অন্য জীবনের সঙ্গে হাত মেলাতে পারেন? না..., পারেন না। পিতা মুজিবের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া গুণাবলি আজ বিশ্ব দরবারে উঁচু করেছেন যিনি, তিনিই আমাদের প্রধানমন্ত্রী। নেতৃত্ব বিকাশে যিনি মেলে ধরেছেন মেধা, মনন আর যোগ্যতার কষ্টিপাথর। হেনরি কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে বাংলাদেশ আজ উপচে পড়া উন্নয়নের এক জ্বলন্ত উদাহরণ। অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষানীতি, সংস্কৃতির সবটাই যেন তার স্পর্শে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্র উত্তরণে যার হাতের স্পর্শে হয়েছে ধন্য। শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন সমাজ গঠন আর গণতন্ত্র, দারিদ্র্য নিরোধ থেকে নারীর এগিয়ে যাওয়ার মসৃণ পথ তৈরি, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন থেকে সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নত করার পেছনে রয়েছে যার মেধাÑতাকে তো স্মরণ করতেই হয়। তোমাকে সালাম।

তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির হাল ধরে এবং পাল উড়াচ্ছেন বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের। নান্দনিক নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে করে তুলেছেন এক মর্যাদাবান রাষ্ট্রে। তিন-তিনবারের সফলতম রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে এগিয়ে চলেছেন দূর্বার গতিতে। ‘জুতা সেলাই থেকে চ-ি পাঠ’-এর সবটাই যেন তার হাতেই গড়া। দুর্দিনে বিভক্ত আওয়ামী লীগের পূর্ণতা দান থেকে শুরু করে অনুন্নত থেকে উন্নয়নশীলে পরিণতি পেয়েছে বাংলাদেশ। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ থেকে পরিচ্ছন্ন জীবন। জঙ্গি থেকে মাদক নির্মূল সবটাই আজ আমাদের কাছে ভালোবাসা আর গর্বের সোনালি সুদিন। তারুণ্যের বেঁচে থাকার গল্প রচনার সোপান তৈরিতেও তার অনঢ় মনোবল। শ্রেষ্ঠত্বেই তার সংযোগ, যার প্রমাণ বিশ্ব দরবারে। তার সরব উপস্থিতিই তাকে জাতীয় থেকে আন্তর্জাতিক অভিবাদনে জড়িয়েছে। তিনি এখন আর কোনো ব্যক্তির ননÑ‘জনতার’। পিতা মুজিব যেমন নিজেকে উৎসর্গ করেছেন, তিনিও যেন একই পথযাত্রী। এগিয়ে চলার প্রতিটি পদক্ষেপই তার প্রমাণ।

বঙ্গবন্ধু যেমন স্বাধীনতার পর ভঙ্গুর একটি অবকাঠামো থেকে পুনর্বাসন ও পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে পূর্ণতা দিতে গিয়ে তা শেষ করতে পারেননি। ভয়াল ১৫ আগস্টে পরিবারসহ নিহত হয়েছেন। একইভাবে একটি পরাজিত ইতিহাসকে বিজয়ীর বেশে ফিরিয়ে এনেছেন মাদার অব হিউম্যানিটিখ্যাত একজন নারী। পররাষ্ট্র থেকে প্রতিরক্ষা, অদক্ষ কুশলী থেকে দক্ষ সেনানায়ক তৈরি, সমুদ্র বিজয় থেকে ছিটমহলের অবসান হয়েছে তারই বদান্যতায়। বিশ্বদরবারে আজ তিনি প্রশংসিত।

সমুন্নত ও সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। জাতিসংঘ থেকে শান্তিনিকেতন, সাহিত্য থেকে রাজনীতি সবখানেই যার পদচারণে মুখরিত ‘বাংলাদেশ’। পুঁজিবাদ থেকে সমাজতন্ত্র যার সমন্বয়িক দক্ষতার কৃতিত্বে মুগ্ধ। জাতীয়তাবাদ থেকে ইসলামের সবটুকু মিলিয়েই গড়ে তুলেছেন এক অসাম্প্রদায়িক মিলনমেলা। নির্বাসন থেকে নির্বাচনে পেয়েছেন জনতার অবারিত ভালোবাসা। ভালোবাসার এক টুকরো করিডর থেকে চৌদ্দ শিকে সবটাই যেন তার বন্দনায় নিমগ্ন। তার স্পর্শেই বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ যেন ‘রূপকথার গল্পের’ মতো এক রোলমডেলে পরিণতি পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারিক সাফল্যে কুড়িয়েছেন বিশ্বনেতাদের প্রশংসা।

পদ্মার বুক চিরে জেগে ওঠা বহুমুখী সেতু থেকে মেট্রোরেল। এক্সপ্রেসওয়ে থেকে হাইওয়ে, ফ্লাইওভার থেকে রেলওয়ে এর সবটাই যেন তার রাজনৈতিক স্বদিচ্ছারই প্রতিফলন। ত্রিশ লাখ মানুষের বুকের তাজা রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের বিন¤্র সম্ভ্রমের এক করুণ আর্তনাদের ওপর গড়ে ওঠা এক স্বপ্নের বাংলাদেশ। আর নি¤œ থেকে মধ্যম আয়ের দেশও নির্মিত হচ্ছে এটি স্বপ্ন ও ইতিবাচক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। পিতা মুজিব গেয়েছেন সাম্যের গান, কন্যা গেয়েছেন তারই জয়গান। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সোপানের সবটাই দেশের প্রতি তার অফুরন্ত দেশপ্রেম আর ভালোবাসার প্রতিফলন।

তিনি তার রাজনৈতিক জীবনে অনেকগুলো পুরস্কার ও সম্মাননার জন্য মনোনীত হয়েছেন তার নেতৃত্ব ও মেধার যোগ্যতায়। এর কোনোটি ব্যক্তিগত, আবার কোনোটি পেয়েছেন সরকারপ্রধান হিসেবে বাংলাদেশের সামগ্রিক সাফল্যের জন্য। পেয়েছেন জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্যের এবারেট ডান্ডি ও ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের বিশ্বভারতী, অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’জ ডিগ্রি। নজরুলের ১১৭তম জন্মজয়ন্তীতে পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব লিটারেচার বা ডি.লিট ডিগ্রি। ডি.লিট পাওয়ার পর তিনি বলেছেন, এ সম্মান আমার নয়, এ আমার দেশের সম্মান। এই সম্মান পেয়ে আমি এবং আমরা গর্বিত হয়েছি।

মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দিয়ে সারা বিশ্বে হয়েছেন প্রশংসিত। শান্তি, শিক্ষা, সম্প্রীতিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী, যা সম্ভব হয়েছে তার দূরদর্শিতা ও দেশের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কারণে। পেয়েছেন আন্তর্জাতিক অনেক সম্মাননা পদক। বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ৪১টি পুরস্কার, পদক, ডক্টরেট ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। সম্প্রতি লিঙ্গসমতার দরুন পেয়েছেন গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড।

তার নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্বের কারণে বিভিন্ন স্বীকৃতিও অর্জন করে নিয়েছেন। এর মধ্যে বিশ্বখ্যাত ফোর্বস সাময়িকীর দৃষ্টিতে বিশ্বের ক্ষমতাধর এক শ নারীর তালিকায় ৩৬তম স্থান অর্জন করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর জরিপে তিনি ২০১১ সালে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী নারী নেতাদের তালিকায় সপ্তম স্থান দখল করেছেন। বাংলাদেশকে অন্যান্য দেশের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া ও গবেষণার জন্য ভারতের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করেন। ভারত তার এবং বাংলাদেশের প্রতি সম্মান দেখাতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু ভবন নামেও একটি ভবন নির্মাণর ঘোষণা দিয়েছে। এই ভবনসমূহ আমাদের আন্তরিকতা ও ভালোবাসাকেই মহিমান্বিত করে তুলবে। আর এসব কিছু যার মাধ্যমে আমাদের হাতের মুঠোয় এসে ধরা দিয়েছে, তিনি একজন মহীয়সী নারী। একজন প্রধানমন্ত্রী। ১৬ কোটি মানুষের ভালোবাসার নির্যাসে গড়া জননেত্রী শেখ হাসিনা।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist