তানজিদ শুভ্র

  ০৩ মার্চ, ২০২৪

শিক্ষার আলোকবর্তিকা জিনিয়াস আইডিয়াল স্কুল

আশপাশের গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের নামাপাড়া গ্রামে ছিল না কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখানকার ছেলেমেয়ারা শিক্ষা ক্ষেত্রেও অনেক পিছিয়ে। আধুনিক বিশ্বের মানানসই নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হলে শিক্ষার বিকল্প নেই। এই তাগিদ অনুভব করে গ্রামের এক স্বপ্নবাজ তন্ময় আলমগীর সুধীজনের পরামর্শ আর সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠা করেন জিনিয়াস আইডিয়াল স্কুল।

তরুণ লেখক তন্ময় আলমগীর কর্মজীবনে বাংলায় শিক্ষকতা করেছেন, চাকরি করেছেন দেশের বিভিন্ন পত্রিকায়। সবশেষ করোনার প্রকোপ কমতে শুরু করলে ‘আমাদের নতুন সময়’ পত্রিকার চাকরি ছেড়ে কিশোরগঞ্জ ফিরে গিয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠার কথা ভাবেন তিনি। সবার সাহস আর উৎসাহে স্থাপিত হয় স্বপ্নের বিদ্যালয়।

‘আধুনিক ও নৈতিক শিক্ষার সমন্বয়ে আলোকিত মানুষ গড়ার প্রত্যয়ে’ নামাপাড়া গ্রামের মলাই ফকির বাজারে স্থাপিত জিনিয়াস আইডিয়াল স্কুলের শুরুটা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দিয়েই। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি বই উৎসবের মাধ্যমে যাত্রা শুরু। প্রারম্ভিক যাত্রায় প্লে-গ্রুপ থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত ১০৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এই স্বপ্নের আলোকিত অধ্যায়ের শুরু। পর্যায়ক্রমিক শ্রেণি বৃদ্ধির মাধ্যমে গত বছর ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত ১৩৫ জন শিক্ষার্থী ছিল এই বিদ্যালয়ে। সংশ্লিষ্টরা স্বপ্ন দেখে জিনিয়াস আইডিয়াল স্কুল এক দিন কলেজে রূপান্তরিত হয়ে দ্যুতি ছড়াবে এই গ্রামে।

একদল দক্ষ ও শিক্ষিত মানুষের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে স্কুলের পরিচালনা পর্ষদ। যোগ্য ও মানসম্পন্ন শিক্ষক দ্বারা পাঠদান করা হয়। শিক্ষক স্থানীয় হওয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রতি পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন। শিক্ষার মান যাচাইয়ে নিয়মিত পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে এবং অভিভাবকদের অবগতির বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয় স্কুল থেকে।

জিনিয়াস আইডিয়াল স্কুলে প্রভাতি আর দিবা দুই শিফটে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। কারণ ব্যতীত শতভাগ উপস্থিতি না থাকলে পরবর্তী পরীক্ষায় বসতে পারে না শিক্ষার্থীরা। শুধু তত্ত্বীয় মূল্যায়ন নয়, ব্যতিক্রমী উদ্যোগ হলেও প্রতি পরীক্ষার পাশাপাশি সাক্ষাৎকারভিত্তিক মূল্যায়ন ও আচরণ-সংক্রান্ত মূল্যায়নেরও ব্যবস্থা রয়েছে। সপ্তাহের শেষদিন বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের মাঝে থাকে উৎসব আমেজ। এদিন নাচ, সংগীতচর্চা, অভিনয়, আবৃত্তি, সুন্দর হাতের লেখা, খেলাধুলা ইত্যাদি সৃজনশীলতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়া হয়। স্কুলে নিয়মিতভাবে প্রত্যেক জাতীয় উৎসবসহ বিভিন্ন বিশেষ দিবস শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে পালন করা হয়ে থাকে। শিক্ষার্থীদের পাঠাভ্যাস বৃদ্ধির লক্ষ্যে ছোট পরিসরে পাঠাগারও রয়েছে।

এই বিদ্যালয়টি যেভাবে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে, এতে দিন দিন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বাড়ছে। বিদ্যালয়ে আরো নতুন শ্রেণিকক্ষের পাশাপাশি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন সময়ের দাবি। শিক্ষার্থীদের জন্য স্থাপিত পাঠাগার আরো সমৃদ্ধ হবে শিশু-কিশোর বইয়ের সমারোহে। এসব সমস্যা সমাধানে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা রয়েছে বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের। তারা স্বপ্ন দেখছেন মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করে আলোকিত প্রজন্ম গড়ে তুলতে। দোরগোড়ায় এমন পড়াশোনার সুযোগে পেয়ে শিক্ষার্থী অভিভাবকের পাশাপাশি এলাকার সচেতন মানুষও সন্তুষ্ট। এভাবে আলো ছড়িয়ে স্বপ্নপূরণের পথে হাঁটে তন্ময় আলমগীরের মতো স্বপ্নবাজ যুবকরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close