আতিকুর রহমান, ইবি

  ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

বইমেলার এক সন্ধ্যা

বইপ্রেমীদের সারা বছরের অপেক্ষা থাকে বইমেলা কে নিয়ে। কবে আসবে সেই কাঙ্ক্ষিত ফ্রেব্রুয়ারি! মাস-দিনের পরিবর্তনে ফেব্রুয়ারি এসে উপস্থিত হলো। শুরু হলো অমর একুশে বইমেলা। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিখা চিরন্তনের পাদদেশে জমে উঠে প্রাণের মেলা। বইপ্রেমীদের মেলা। বাংলাদেশের মতো বিভিন্ন দেশেই বইমেলার প্রচলন রয়েছে। বাংলাদেশের বইমেলা স্বাধীন বাংলাদেশের মতোই ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক।

তথ্যমতে, ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ৮ ফেব্রুয়ারি চিত্তরঞ্জন সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণে বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার গোড়াপত্তন করেন। এই ৩২টি বই ছিল চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ (বর্তমান মুক্তধারা প্রকাশনী) থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশী শরণার্থী লেখকদের লেখা বই। এই বইগুলো স্বাধীন বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের প্রথম অবদান। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি একাই বইমেলা চালিয়ে যান। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে অন্যান্যরা অণুপ্রাণিত হোন। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমিকে মেলার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত করেন। ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে মেলার সাথে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি; এই সংস্থাটিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা।

১৯৮৩ সালে কাজী মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে বাংলা একাডেমিতে প্রথম ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র আয়োজন সম্পন্ন করেন। কিন্তু এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষা ভবনের সামনে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে ট্রাক তুলে দিলে দুজন ছাত্র নিহত হয়। ওই মর্মান্তিক ঘটনার পর সেই বছর আর বইমেলা করা সম্ভব হয়নি। ১৯৮৪ সালে জাঁকজমকপূর্ণভাবে বর্তমানের অমর একুশে গ্রন্থমেলার সূচনা হয়। সেই ৩২টি বইয়ের ক্ষুদ্র মেলা কালানুক্রমে বাঙালির সবচেয়ে স্বনামধন্য বইমেলায় পরিণত হয়েছে। বাংলা একাডেমি চত্বরে স্থান সংকুলান না-হওয়ায় ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারণ করা হয়েছে।

আমার পরিকল্পনা ছিল এমাসের শেষের দিকে বইমেলায় যাবো। কিন্তু ভাগ্য আমাকে তার আগেই নিয়ে গেছে। তেরো তারিখ ঢাকা গিয়ে চৌদ্দ তারিখ বইমেলা গিয়েছিলাম। এবারের চৌদ্দ তারিখটা অনেকগুলো দিবসের মিলনমেলা বলা যায়। সরস্বতী পূজা, বসন্ত, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এতোগুলো দিবস এক সাথে হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মানুষের ভিড় হবে জানা সত্ত্বেও বিকাল ৫ টার দিকে সার্জেট জহুরুল হক হল থেকে আমি আর জুবায়ের আহমেদ অভি ভাই বের হলাম বইমেলার উদ্দেশে। জহুরুল হক হল, ভিসি চত্বর অতিক্রম করে রোকেয়া হলের সামনে আসার পর মানুষের ভিড়ে সামনে আগানোর অবস্থা নেই। কষ্ট করে আমরা জগন্নাথ হল মাঠে ঘুরাঘুরি করে টিএসসি থেকে একটু সামনে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রোরেল স্টেশনের পাশের গেইট দিয়ে বইমেলায় প্রবেশ করি। আমরা খুব অল্প সময়ই পেয়েছিলাম বইমেলায় ঘুরাঘুরি করার জন্য। বইমেলা রাত নয়টার দিকে বন্ধ করে দেওয়া হয় আর আমরা প্রবেশ করেছিলাম সাতটারও পরে। শিশুদের বইয়ের স্টল থেকে আমাকে সব স্টল ঘুড়িয়ে দেখালেন অভি ভাই। স্টলে স্টলে বই দেখতে দেখতে সময় শেষের দিকে চলে আসলো। শেষের দিকে আমাদের সঙ্গে যোগ দেয় অনিক ভাই ও রাজিব আহমেদ ভাই। ভাইদের উপস্থিতি বইমেলার সন্ধ্যার আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে তুলে।

বইমেলার সন্ধ্যাটা একটু বেশিই সুন্দর ছিল। যা স্মৃতির পাতায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close