আল হাসান আকুঞ্জী

  ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

নতুন গল্পের অন্বেষণে

শীতের সকাল গড়িয়ে সকাল ৮টা বাজলেও সূর্যের দেখা মেলেনি। শীতের তীব্রতাকে সেদিন ম্লান করেছিল আমাদের আনন্দের উষ্ণতা। এমনই এক শীতের সকালে হেঁটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলাম। বলছিলাম নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি খুলনার সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের ফিচার রাইটিং কোর্সের ফিল্ড ভিজিটের কথা। ফিল্ড ভিজিটের অংশ হিসেবে আমরা খুলনার চুকনগর গণহত্যার বধ্যভূমি, যশোর জেলার ভরত রাজার দেউল এবং মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি ভ্রমণ করি। এই ভ্রমণে আমাদের সঙ্গে ছিলেন সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের ফিচার রাইটিং কোর্সের শিক্ষক ও লেখক এম এম মুজাহিদ উদ্দীন ও প্রভাষক মো. মতিউর রহমান। মূলত ফিচার লেখার জন্য গল্প খুঁজতেই শিক্ষার্থীদের নিয়ে নিয়মিত আয়োজনের অংশ এই ফিল্ড ভিজিট।

সব প্রস্তুতি শেষে সকাল ৯টা নাগাদ আমাদের মাইক্রোবাস দুটি ছুটতে শুরু করল আমাদের গন্তব্যের লক্ষ্যে। মাইক্রোবাসে ছিলেন আমাদের ফিচার রাইটিং কোর্সের শিক্ষক এম এম মুজাহিদ উদ্দিন স্যার। সবাই মিলে গান গাইতে গাইতে আমরা পৌঁছে গেলাম যশোরের কেশবপুরে অবস্থিত ভরত রাজার দেউলে। সেখানে সকালের নাশতা সম্পন্ন করে আমরা ভরত রাজার দেউল পরিদর্শন করি এবং প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষী হই। ভরত রাজার দেউলের প্রাচীন নির্মাণশৈলী আমাদের সবাইকে মুগ্ধ করে। দেউলে প্রবেশ করতেই ডানপাশে পাথরে খোদাই করে লেখা ছিল এর ইতিহাস। নান্দনিক সৌন্দর্য ও ইতিহাসসমৃদ্ধ ভরত রাজার দেউল পরিদর্শন শেষে আমাদের গাড়ি দুটি এবার ছুটে চলল চুকনগরে অবস্থিত গণহত্যার বধ্যভূমি অভিমুখে। সেখানে পৌঁছে আমরা বধ্যভূমি পরিদর্শন করলাম এবং আমাদের স্যারদের কাছ থেকে বধ্যভূমিটির হৃদয়স্পর্শী ইতিহাস সম্পর্কে জানলাম। এরই মাঝে বেলা গড়িয়ে মধ্যাহ্নভোজের সময় হয়েছে। তাই আমরা রওনা হলাম খুলনা জেলার বিখ্যাত চুকনগরের আব্বাস হোটেলের অভিমুখে। আব্বাস হোটেলের ঐতিহ্যবাহী চুঁইঝালের খাসির মাংস দিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সম্পন্নের পর এবার আমাদের গন্তব্য মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি, যা যশোরের সাগরদাঁড়িতে অবস্থিত।

সাগরদাঁড়ি পৌঁছাতেই মনের ভেতর একটা বাড়তি ভালো লাগা কাজ করতে শুরু করল। আগে থেকেই আমরা খোঁজ নিয়ে এসেছি মাইকেল মধুসূদন দত্তের দ্বিশততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এখানে চলছে মধুমেলা। ভরদুপুর হলেও মেলার রমরমা ভাব ছিল বেশ লক্ষণীয়। মেলায় কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর আমরা সবাই গেলাম মহাকবির স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদের তীরে। সেখান থেকে দুটি নৌকা ভাড়া করে আমরা নৌকা ভ্রমণে গেলাম। ক্ষণিকের জন্য নৌকার বইঠা বাইলেন বিভাগের দুজন শিক্ষক এম এম মুজাহিদ উদ্দীন ও মো. মতিউর রহমান। শখের বসে কয়েকজন শিক্ষার্থীরাও নৌকার বইঠা বাইল। বিভিন্ন গানে গানে আমরা নৌকা ভ্রমণটাকে উপভোগ করেছি। তবে আনন্দ তার সীমা ছাড়িয়ে ছিল যখন আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মো. মতিউর রহমান আমাদের নৌকা ভ্রমণের ছোটখাটো ঘটনাকে পুঁজি করে তৎক্ষণাৎ একটি পুঁথি তৈরি করে আমাদের তা পাঠ করে শোনান। ঘণ্টাব্যাপী নৌকা ভ্রমণ শেষে আমরা প্রবেশ করলাম মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়িতে, যা মধুপল্লী নামে অধিক পরিচিত। মহাকবির বাড়িটিকে বর্তমানে বাংলাদেশ প্রত্নতান্ত্রিক অধিদপ্তর একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত করেছে। বাড়িতে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা বিভিন্ন কবিতার অংশবিশেষ। এরপর ধীরে ধীরে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে কবির ব্যবহৃত বিভিন্ন তৈজসপত্র, খাট এবং কাঠের তৈরি সিন্দুক। একটু ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে কবির পারিবারিক মন্দির। সুবিশাল এই বাড়িতে রয়েছে প্রাচীন একাধিক ভবন এবং পুকুর। একটা দীর্ঘ সময় ধরে মধু পল্লীর আনাচে-কানাচে ঘুরে দেখার পর সূর্য যখন অস্তাচলে ঠিক তখনই আমরা মধু পল্লী থেকে বের হয়ে কবির বাড়ির সামনে অবস্থিত মধুমেলায় প্রবেশ করলাম। মেলায় প্রবেশ করে কেউবা পুরো মেলাটা ঘুরে দেখল কেউবা কিনল তার পছন্দের বিভিন্ন জিনিস।

এরই মাঝে নেমে এলো সন্ধ্যা। এবার ফেরার পালা। একরাশ স্মৃতি নিয়ে আমরা বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম। তবে শেষ হয়েও যেন হলো না শেষ। ফেরার পথে আমাদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষকরা নৈশভোজ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একটি সুখস্মৃতি হিসেবে দিনটি স্মৃতির আঙিনায় রয়ে যাবে আজীবন। কেননা শিক্ষকদের সান্নিধ্য পাওয়া, তাদের সঙ্গে আনন্দের মুহূর্তগুলো ভাগাভাগি করে নেওয়া প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে চরম আনন্দের, চরম উপভোগ্যের এবং সৌভাগ্যের।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close