আবু ছাকিব মো. নাজমুল হক, ফেনী সরকারি কলেজ

  ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

হিম উৎসবের আয়োজনে ফেনী কলেজের ইংরেজি বিভাগ

ষড়ঋতুর বাংলাদেশে বছর ঘুরে প্রতিবার ফিরে আসে শীত। এ যেন ঋতুরাজ বসন্তের আগমনী বার্তা দিয়ে যায়। ভোরের কুয়াশায় শুরু সারা দিনের হিমশীতল মৃদু ঠান্ডা আবহাওয়া আর বিকেলের হিমেল হাওয়ার স্নিগ্ধতা। অসাধারণ অনুভূতিতে ঘেরা। সঙ্গে থাকে গ্রামবাংলায় পিঠাপুলির বাহারি সমাহার। শহরের বুকেও এখন শীত এলে দেখা মিলে হরেক রকম পিঠার স্টল। শীতের এসব অনুভূতিকে স্মৃতিময় করে তুলতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের শতবর্ষী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফেনী সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা কলেজের ইতিহাসে এবার প্রথমবারের মতো আয়োজন করে ‘হিম উৎসব’।

ডিপার্টমেন্টের সব ব্যাচের শিক্ষার্থীকে সরব অংশগ্রহণে কনকনে শীত আমেজে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। আর এই আয়োজনকে আরো সুন্দর রূপ দিয়েছে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্যারদের অংশগ্রহণ। আয়োজনের শুরু থেকেই উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় প্রধান, সহকারী অধ্যাপক মো. মোশতাক হোসেন এবং আরো দুজন সহকারী অধ্যাপক শিহাব উদ্দিন ও মাহফুজ উদ্দিন।

সকালবেলায় অন্ধকারাচ্ছন্ন কুয়াশা থেকে শুরু হয় দিনটা। একে একে কলেজের পেছন দিকে নবনির্মিত বধ্যভূমির পাশে মুক্তমঞ্চকে ঘিরে শুরু হয় আমাদের পদচারণা। সবাই মিলে হাতে হাতে শুরু স্টেজ সাজানোসহ অন্যান্য কাজ। নিজেদের হাতের কাজেই সজ্জিত হয় অনুষ্ঠান। বিভাগের শিক্ষার্থীরা তৈরি করে লাল-নীল রঙিন কাগজের বিভিন্ন ফুল, ঘুড়ি। গ্রাম বাংলায় ঐতিহ্যবাহি চাটাই দিয়ে সাজানো হয় স্টেজ। এদিকে দুপুরের চুড়ুইবাতির রান্নার কাজও হয় শুরু। শিক্ষার্থীরা কেউ কেউ রান্নার কাজের দিকে সহযোগিতা করতে করতে আমাদের সময় পার হয়ে যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আনাগোনা বাড়ে শিক্ষার্থীদের। স্যাররাও এসে যুক্ত হন আমাদের সঙ্গে। আনন্দঘন পরিবেশে মুখরিত চারপাশ। ছোট-বড় সবার মিলনমেলা। কলেজে সাধারণত এমন আয়েজনগুলোই আমাদের ছোট-বড় সবাইকে কাঁধে কাঁধ মেলানোর সুযোগ করে দেয়।

এবার আমাদের শৈশবে ফিরে যাওয়ার পালা। ছেলেরা একসঙ্গে হয়ে দুটি দলে ভাগ হয়ে যায়। শুরু নয় শট ফিচ ক্রিকেট। বিভাগের অনার্সপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খেলা হয় মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। কেউ কেউ হাস্যরসে এটিকে বিবাহিত-অবিবাহিত খেলাও বলেছিল। খেলায় দর্শক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রদ্ধেয় স্যাররাও। দুটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে হাসি-খেলায় প্রথম ম্যাচে জয়ী হয় অনার্স টিম আর দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ী হয় মাস্টার্স টিম। বলা চলে, কেউ কারো থেকে কম নয়।

অন্যদিকে মেয়েরাও বসে ছিল না। তারা মেতে উঠেছিল ছেলেবেলায় খেলায়। শাড়ি পরে এসেও ছেলেবেলার মতো দৌড়াতে তারা বিন্দুমাত্র কুণ্ঠা বোধ করেনি? কানামাছি খেলতে খেলতে চোখ বেঁধে তারা খুঁজেছে অতীতের মধুময় সময়কে। জুতাচুরি খেলতে খেলতে তারা শৈশবের উড়ন্তপনাকে স্মৃতিচারণ করেছে। তারা আরো মেতে উঠেছিল বউছি খেলায়।

খেলাধুলা শেষে দুপুরের খাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়। খিচুড়ির সঙ্গে ডিম। সবাই মিলে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করলে নুনের স্বাদও অমূল্য লাগে। আমাদেরও হলো তাই। যেন পেট ভর্তির জন্য খাওয়া নয়। সেটিও এক অন্যরকম আনন্দ। খাওয়া শেষে সবাই নিজের মতো করে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে ছবি তুলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

এরপর শুরু হয় আমাদের অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অংশ। সবাই আমরা মুক্তমঞ্চের পাশে বসে পড়ি গোল হয়ে। শুরু হয় আমাদর পিলো পাসিং খেলা। দীর্ঘক্ষণ চলে এই খেলা। এক একজন আউট হয় আর এক একটা পারফরম্যান্স উপহার দেয় সবাইকে। এভাবে শেষ হয় পিলোপাসিং গেমস।

সবশেষ শুরু হয় আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যেখানে নাচে-গানে মুখরিত করেন আমাদের সম্মানিত মাহফুজ উদ্দিন স্যার। সঞ্চালনার মুখ্য দায়িত্বটাও ছিল স্যারের কাঁধে। শুরু হয় অনানুষ্ঠানিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গানে গানে মুখরিত করে বিভাগের শিক্ষার্থীরা, এরপর হয় নাচের পালা শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্যারের নাচের অংশগ্রহণ ছিল সব থেকে বেশি চোখের লাগার মতো আনন্দের। মাঝে মাঝে ছিল কৌতুকও। সব শেষ স্যারের কণ্ঠের সঙ্গে সুর মিলিয়ে সবাই একসঙ্গে কয়েকটি গান গাওয়ার পর শেষ হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

তবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষ বলেই কিন্তু শেষ হয়নি আমাদের হিম উৎসব। নাচণ্ডগান শেষে এবার সবার পিঠার সঙ্গে মেতে ওঠার সময়। বিভিন্ন ধরনের পিঠা আগেই বানিয়ে এনেছিল বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা? যার মধ্যে ছিল, সুজির পিঠা, সন্দেশ, পুডিংসহ কত ধরনের পিঠা। শুধু হাতের পিঠাই নয়, আয়োজন ছিল শহরে ভ্যানগাড়িতে বিক্রি করা গরম গরম ভাপা পিঠা আর চিতই পিঠার সঙ্গে হরেক রকম ভর্তা। একে একে সবাই পিঠা উপভোগের সঙ্গে সঙ্গে মেতে উঠে আড্ডায়। আর সেথায় সন্ধ্যার আলো আঁধারিতে খানিক শীতলতায় শেষ হয় আমাদের হিম উৎসব।

উৎসব যেন শেষ হয়েও হলো না শেষ। আমেজ রয়ে গেল শিক্ষার্থীদের মাঝে। শীত আসবে শীত যাবে তবে শীত মুখর এই উৎসবের কথা স্মৃতিতে রয়ে যাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close