reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

আগামীর বিশ্ব হবে ডেটা সায়েন্সের : ড. শামীম রেজা

ড. মো. শামীম রেজা পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) পরিসংখ্যান বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপরে পিএইচডি করেন চীনের বিখ্যাত পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বর্তমানে তিনি গবেষণা করছেন মেশিন লার্নিং নিয়ে। কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডিপ লার্নিং, মাল্টিভেরিয়েট এনালাইসিস নিয়ে। ডেটা সায়েন্সের ক্রমবর্ধ্বমান অগ্রগতি এবং আগামীর বিশ্বে ডেটা সায়েন্সের কার্যকারিতা নিয়ে তিনি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন প্রতিদিনের সংবাদকে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন

স্যার কেমন আছেন?

আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

ডেটা সায়েন্স বলতে আমরা কী বুঝি?

যেখানে ডেটা সেখানেই সায়েন্স। ডেটার প্রয়োগকে সায়েন্স দিয়ে প্রকাশ করা হলো ডেটা সায়েন্স। এখানে ডেটা হলো পরিসংখ্যান এবং গণিতের ভিত্তি আর এর প্রায়োগিক হাতিয়ার হচ্ছে কম্পিউটার সায়েন্স। আর এই তিনটি মিলিয়েই ডেটা সায়েন্স।

ডেটা সায়েন্সের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা কেন?

বর্তমানে বিশ্বে ডেটা সায়েন্সের প্রয়োগ অনেক বেশি। প্রত্যেকটা সেক্টরেই ডেটা সায়েন্সের ব্যবহার হচ্ছে। মেডিকেল সেক্টরে এর অনেক বেশি ব্যবহার হচ্ছে। কোন রোগের ক্ষেত্রে কোন সিনট্রম আছে, ওই রোগ কোন প্যাটার্ন ফলো করছে এগুলো ডেটা দিয়ে করা হচ্ছে। এ ছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় ডেটা সায়েন্সের বিকল্প নেই। বিশ্ব যেহেতু অটোমেশনের দিকে চলে যাচ্ছে, তাই দিনের পর দিন ডেটা সায়েন্সের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ডেটা সায়েন্স এই বিষয়টা কোন বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য?

ডেটা সায়েন্স মূলত পরিসংখ্যান, গণিত এবং কম্পিউটার সায়েন্স এই তিনটি বিষয়ের সমন্বয়ে গঠিত। কোনো শিক্ষার্থীকে ডেটা সায়েন্স নিয়ে কাজ করতে হলে কিংবা ডেটা সায়েন্স শিখতে হলে এই তিনটি বিষয় জানা লাগবেই। কাজেই ডেটা সায়েন্স একক কোনো বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য নয়।

ডেটা সায়েন্স, মেশিন লার্নিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এগুলো কী একই জিনিস নাকি আলাদা জিনিস?

এগুলো আসলে পুরোপুরি একই জিনিস নয়। কিন্তু সবগুলোর সঙ্গে সবগুলোর একটা সংযোগস্থল আছে। মেশিন লার্নিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এগুলোর ডেটা সায়েন্স থাকবেই। ডেটা সায়েন্স থাকার পর মেশিন লার্নিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আলাদা আলাদা এলগরিদম আছে। এই আলাদা এলগরিদমগুলোর কারণেই ডেটা সায়েন্স, মেশিন লার্নিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আলাদা হয়েছে।

আজকের বিশ্বে ডেটা সায়েন্স শেখা কেন প্রয়োজন?

ডেটা সায়েন্স এখন একটা সর্বজনীন বিষয়। সব সেক্টরেই এর ব্যবহার হচ্ছে। যার কারণে ডেটা সায়েন্সের চাকরির বাজার বৃদ্ধি হয়েছে। চাকরির বাজারে এখন যেহেতু ডেটা সায়েন্টিস্টদের অগ্রাধিকার অনেক বেশি সে কারণে ডেটা সায়েন্স শেখা প্রয়োজন।

ডেটা সায়েন্সে শিখতে হলে কী কী জিনিস জানা লাগবে?

ডেটা সায়েন্স শিখতে হলে অবশ্যই তাকে ভালো পরিসংখ্যান জানতে হবে। পরিসংখ্যানের পর গণিতের এলজেবরিক জ্ঞান থাকা লাগবে। এরপর তাকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং জানতে হবে। কারণ কম্পিউটার প্রোগ্রামিং হচ্ছে ডেটা সায়েন্সের প্রায়োগিক দিকে। কেউ একজন পরিসংখ্যান ভালো পারে কিন্তু সে প্রোগ্রামিং ভাষা জানে না তাহলে সেটা ডেটা সায়েন্স শিখতে পারবে না। আবার কেউ একজন ভালো প্রোগ্রামিং ভাষা জানে কিন্তু পরিসংখ্যান জানে না তাহলেও সে ডেটা সায়েন্স শিখতে পারবেনা। যদি বিষয়ভিত্তিক বলা হয় তাহলে একজন পরিসংখ্যানের শিক্ষার্থীকে অনেক ভালো প্রোগ্রামিং ভাষা জানতে হবে। আবার একজন কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষার্থীকে অনেক ভালো পরিসংখ্যান জানতে হবে।

একটা বিষয় পরিষ্কার করা প্রয়োজন বর্তমানে অনেকেই আছে ডেটা সায়েন্সের একটু-আধটু বিষয় শিখছে, টুকিটাকি ডেটা হ্যান্ডেলিং শিখছে এতেই মনে করছে সে ডেটা সায়েন্সে পারদর্শী হয়ে গিয়েছে। আসলে বিষয়টা তেমন নয়। ডেটা সায়েন্স শেখা একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। অনেক জিনিস শেখার পরই আসলে কেউ ডেটা সায়েন্সে পারদর্শী হয়।

ডেটা সায়েন্স শেখার জন্য কোন কোন প্রোগ্রামিং ভাষা জানতে হবে?

একটা সময় পর্যন্ত আমাদের অনেক বেশি ডেটা নিয়ে কাজ করার প্রয়োজন হতো না। কিন্তু বর্তমানে ডেটার আকার বড় হয়েছে। তাই এই ডেটা হ্যান্ডেলিং করার জন্য শক্তিশালী প্রোগ্রামিং ভাষার কোনো বিকল্প নেই। ডেটা সায়েন্স শেখার জন্য এ মুহূর্তে পাইথন এবং আর এই দুটি প্রোগ্রামিং ভাষা ভালো করে জানতে হবে। এর পাশাপাশি জাভা, সি, সি++ ও জানা প্রয়োজন।

বাংলাদেশে বর্তমানে কোন কোন ক্ষেত্রে ডেটা সায়েন্সের ব্যবহার হচ্ছে?

সারা বিশ্বের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সঙ্গে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে, আমরা প্রযুক্তিগত দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। একই সঙ্গে বর্তমানে বিভিন্ন সেক্টরে ডেটা সায়েন্সের ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে গার্মেন্টসগুলোতে এখন ডেটা সায়েন্সের ব্যবহার অনেক। আগে গার্মেন্টকর্মীদের উপস্থিতি খাতাণ্ডকলমে নেওয়া হতো, এখন ফিঙ্গারপ্রিন্টে নেওয়া হচ্ছে। স্যালারি স্ট্রাকচার অটোমেশনে চলে গেছে। এখন নির্ধারিত সময় কর্মীদের টাকা চলে যাচ্ছে, কী পরিমাণ স্যালারি বৃদ্ধি পাবে এগুলো ডেটা সায়েন্সের মাধ্যমে ঠিক করা হচ্ছে। ব্যাংকিং সেক্টরেও ডেটা সায়েন্সের এখন প্রচুর ব্যবহার দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশে এখনো ডেটা সায়েন্স, মেশিন লার্নিংয়ের মতো বিষয়গুলোর চাকরির বাজার ছোট। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে কত সময় লাগবে?

ডেটা সায়েন্সের বাজার বড় করতে হলে অগকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে। এর পাশাপাশি সব ধরনের প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, সরকার, বড় কোম্পানিগুলোকে।

উন্নত বিশ্বে চাকরির বাজার বড় করার জন্য বড় বড় কোম্পানিগুলো এগিয়ে আসে যেমন : চীনে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের জন্য বাইডু কোম্পানির আলাদা একটি ইনস্টিটিউট আছে, ওরা ওই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের ব্যবহার বৃদ্ধি করছে। এ জন্য আমি বলব, আমাদের দেশের বড় কোম্পানিগুলো, সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই তিনের সমন্বয় যত তাড়াতাড়ি হবে তত তাড়াতাড়ি ডেটা সায়েন্সের বাজার বড় হবে।

আগামীর বিশ্বের শ্রমবাজার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দখলে থাকবে। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার কারণে আগামীদিনের শ্রমবাজার সংকুচিত হবে কি না?

এই প্রশ্ন মানুষের দীর্ঘদিনের। এই কথাটা অনেককাংশে সত্য। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের শ্রমবাজারকে কিছুটা সংকুচিত করছে। তবে এখানে দেখতে হবে কী ধরনের বাজারকে সংকুচিত করছে। একটা সময় আমরা দেখতাম মানুষ অনেক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে। বর্তমানে প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলো রোবটের মাধ্যমে করা হচ্ছে। এ ধরনের বাজারগুলোকে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সংকুচিত করেছে।

আবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু অনেক শ্রমবাজার তৈরি হচ্ছে। আমি যদি রোবটের কথাই বলি তাহলে রোবট তৈরি, এটা পরিচালনা করতে মানুষের প্রয়োজন হচ্ছে ফলে চাকরির নতুন আরেকটা বাজার তৈরি হচ্ছে। কাজেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রসারের ফলে একদিকে শ্রম বাজার সংকুচিত হচ্ছে অন্যদিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে নতুন শ্রমবাজার তৈরিও হচ্ছে।

আমাদের সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনাকেও ধন্যবাদ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close