রায়হান উদ্দিন, চট্টগ্রাম কলেজ

  ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

প্রিয় স্যারের বিদায়ে অকৃত্রিম ভালোবাসা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘যেতে নাহি দিব! হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়।’ বিদায় বড় কষ্টের? প্রিয় স্যারের বিদায়ে শিক্ষার্থীরা যেতে দিতে চাই না, তবুও বিদায় বলে দিতে হয়। আপনার পদচারণা আমাদের ক্যাম্পাসে দেখা যাবে না। আপনি চলে গেলেন অবসরে। চট্টগ্রাম কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মফিজুল ইসলাম পিআরএলজনিত বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান করা হয় গত ১৭ জানুয়ারি শহীদ অবনি মোহন দত্ত অডিটোরিয়ামে। আমাদের চট্টগ্রাম কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পক্ষ থেকে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বর্তমান বিভাগীয় প্রধান মোহাম্মদ আবুল হাসেম চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুজাহিদুল ইসলাম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপাধ্যক্ষ সুব্রত কুমার বড়ুয়া। উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আ ক ম ওসমান উদ্দিন হায়দার স্যার, সহযোগী অধ্যাপক রাশেদা বানু ম্যাম, সহযোগী অধ্যাপক লোকমান হাকিম, প্রভাষক আবদুল ওয়াদুদ ভুঁয়া, প্রভাষক তাজুল ইসলাম এবং রফিকুল ইসলামসহ প্রত্যেক বিভাগের শিক্ষকমন্ডলী।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম কলেজের প্রত্যেক বিভাগের পক্ষ থেকে স্যারকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান তার সহকর্মীরা। অনুষ্ঠানে অধ্যক্ষ প্রফেসর মুজাহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান চট্টগ্রাম কলেজের অন্যতম সেরা বিভাগ। এ বিভাগ থেকে অনেক ছাত্র দেশসেরা হয়েছে। তোমাদের শিক্ষার পরিবেশ পরিবর্তনে মফিজ স্যারের অবদান অনেক। এত শিক্ষার্থীর উপস্থিতি জানান দেয় মফিজ স্যার শুধু প্রশাসনিক কাজে না অ্যাকাডেমিক কাজেও সমান পারদর্শী ছিলেন।’

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকসহ বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। পটিয়া কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক থেকে শুরু করে বিভিন্ন কলেজ থেকে স্যারের সাবেক সহকর্মীরা স্যারের কর্মজীবন সম্পর্কে বলেন, তিনি নীতি, আদর্শ ও পান্ডিত্যে অনন্য। তিনি নৈতিক শিক্ষা দিয়েছেন শিক্ষার্থীদের। ডিপার্টমেন্টকে সাজিয়েছেন সুন্দরভাবে। শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিশাল সেমিনার করে দিয়ে গেছেন। সেমিনারে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সব বই সংগ্রহ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এখন ভালোভাবে সেমিনারে বসে পড়াশোনা করতে পারবে। স্যার সব সময় আমাদের কথা চিন্তা করতেন। বিভাগীয় প্রধান হলেও সময় হওয়া মাত্রই ক্লাসে চলে আসতেন। স্যার এমনভাবে গল্পের মতো করে সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল, সেন্ট অগাস্টিন, টমাস একুইনাস ও নিকোলো ম্যাকিয়াভেলিদের রাষ্ট্রদর্শন বোঝাতেন যে, আমাদের আর বাসায় এসে পড়তে হতো না। স্যার সব সময় শিক্ষার্থীদের সাপোর্ট করতেন।

টেস্ট পরীক্ষার সময় স্যার বলতেন, ‘এখনো সময় আছে পড়ার জন্য, তোমরা বাসায় পড়ো। প্রশ্ন কী আসছে সেগুলো বাসায় গিয়ে পড়ে নাও।’ স্যারের রুমে গেলে যেকোনো বিষয়ে জিজ্ঞেস করার জন্য স্যার সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলতেন। বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অশ্রুসিক্ত নয়নে স্যার বলেছেন, আমার দীর্ঘ যাত্রায় ক্লাসরুম, শিক্ষকতা ও তোমাদের অনেক মিস করব। নিজেকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলো। সফল মানুষ হিসেবে নিজেদের তৈরি করো। স্যার কী রকম ছিলেন তা বোঝা গেছে অডিটোরিয়াম কানায় কানায় ভরপুর দেখে। স্যারের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। আগামীর দিনগুলো অনিন্দ্য সুন্দর হোক স্যারের।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close