শাহ বিলিয়া জুলফিকার

  ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

স্মৃতিতে মাওয়া ফেরিঘাট

বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যতম সুন্দর বিষয় হলো বিভিন্ন ক্লাবের কার্যক্রম। কেউ সংঘবদ্ধভাবে বিতর্ক শিখছে, কেউ-বা নাচ, গানে প্রতিভা বিকশিত করছে। শিক্ষার্থীদের সংঘবদ্ধভাবে নিয়মিত ক্লাবে বা সংগঠনে কাজ করার ফলে বেশির ভাগ সময় তখন সেটি ক্লাবই থাকে না। বরং একটি পরিবার হিসেবে আবির্ভূত হয়। তেমনি একটি সংগঠন ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব’। যেখানে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের মতোই কাজ করি আমরা। সাহায্য করি একে অন্যকে।

আমাদের প্রেস ক্লাবে রয়েছে মেধাবী ও উদ্যমী তরুণদের খোরদার লেখনী শক্তি। আছে জাদুময়ী হাতের ফটোগ্রাফারও। এ কারণেই এগিয়ে যাচ্ছে ও আলো ছড়াচ্ছে আমাদের প্রেস ক্লাব। আমরা শুধুই নিউজ আর লেখনীতেই সীমাবদ্ধ নই। কখনো অগ্নি উৎসব, চড়ুইভাতি, আড্ডা, গান কিংবা ভ্রমণে বের হই। সর্বশেষ গিয়েছিলাম মাওয়া ফেরিঘাট। অপরিকল্পিতভাবেই সিদ্ধান্ত হয় ভ্রমণে যাওয়ার। ভ্রমণটি উপভোগ্য করতে রাতেই রওনা দিই। ১ ডিসেম্বর রাত ৯টায় সসবাই একত্র হই। খানিক সময় গল্প, আড্ডার পর ঠিক ১১টায় ১১ জন মিলে মাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিই। সবার চোখেমুখে ঘুমের পরিবর্তে ছিল সুন্দর রাত উপভোগের আকাঙ্ক্ষা, ছিল রাতের কুয়াশায় হারানোর ইচ্ছে। গাড়ি ছাড়ার পর সবাই আনন্দে গান গাইতে শুরু করলাম। গাড়ি ছুটে চলেছে গন্তব্যে। পথিমধ্যে গাড়ি হঠাৎ থামল। চেয়ে দেখি আমরা তখন গাজীপুর চৌরাস্তা পার হয়েছি।

তারপর চিরায়তভাবে সহ্য করতে হয়েছিল গাজীপুরের অসহনীয় জ্যাম। খানিকক্ষণ পর জ্যাম পেরিয়ে আমরা গেলাম উত্তরা ২ নম্বর সেক্টরে। সেখানে রয়েছেন প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বায়জিদ ভাই। বায়জিদ ভাই গাড়িতে ওঠার পর পূর্ণ হলো আমাদের মাইক্রোবাস, পূর্ণতা আসতে থাকল আমাদের মনেও। এদিকে দেশ রূপান্তর পত্রিকা অফিসে অপেক্ষমাণ আমাদের আরো দুজন সাংবাদিক অঙ্কুর ও প্রিয়ান ভাই। তারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পড়াশোনা শেষ করে, ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার ইতি টেনেছেন। প্রিয়ান ভাই আছেন চাকরির খোঁজে। আর অঙ্কুর ভাই সাংবাদিক হিসেবে যোগ দিয়েছেন দেশ রূপান্তর পত্রিকায়। কুশলবিনিময় শেষে তাদের সঙ্গে নিয়ে আবারও যাত্রা শুরু করলাম আমরা। রাস্তা দেখে মনে হচ্ছিল, হয়তো আমরা ইউরোপের কোনো দেশে এসে পৌঁছেছি। ঘুমানোর জো নেই। নির্ঘুম থেকেই আনন্দে উপভোগ করেছি পুরোটা রাত। তারপর এসে পৌঁছালাম আমাদের গন্তব্য, মাওয়া ফেরিঘাটে।

গাড়ি থেকে নেমেই চললাম খাবারের সন্ধানে, ইলিশের খোঁজে। মধ্যরাতে আশপাশের সব যখন অতল ঘুমে নীরব, তখন মাওয়া ফেরিঘাটে ছিল জমজমাট পরিবেশ সব বয়সের মানুষের উচ্ছল আড্ডায় মুখরিত ছিল নদীর পাড়। হোটেলগুলোতে চলছিল মাছ কেনাবেচা, কাটাকুটি আর ভাজার ব্যস্ততা। আমরাও কয়েকটা দোকান ঘুরে, নিজেদের পছন্দমতো একটি বেঁচে নিলাম। অতঃপর সেখানে নিজেরা শখের বশে মাছ ভাজতে সাহায্য করে খাওয়া-ধাওয়া করলাম। খাওয়া শেষে গেলাম নদীর পাড়ে।

খানিকক্ষণ ছবি তোলে, খোশগল্পে সময় কাটাচ্ছিলাম। ফেরিঘাটে নদীর পানিতে চিকচিক করতে থাকা চাঁদের আলোয় ঐন্দ্রজালিক মুহূর্তের পরিবেশ দেখে ভুলেই গিয়েছিলাম ঘড়ির কাঁটার এগিয়ে চলা সময়কে। নদীর মৃদু বাতাস উপভোগ করতে করতে আড্ডা ও সাংবাদিকতা নিয়ে কথা বললাম একে অন্যকে। আড্ডা দিতে দিতে রাত পেরিয়ে ভোর হলো। কিন্তু কারো যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল না। কিন্তু কর্মব্যস্ততা আর আমাদের পরীক্ষা সন্নিকটে হওয়ায়, বেশিক্ষণ থাকা সম্ভব হলো না। সূর্যোদয় হতেই রওনা দিলাম ত্রিশালের উদ্দেশে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close