reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

আঁকিবুঁকির রাজ্যে এক দিন

সোনালি শস্যের উর্বর ভূমি সয়াল্যান্ডখ্যাত লক্ষ্মীপুর বরাবরই দেশব্যাপী চর্চিত এক নাম। এমন চর্চার হৃদয়গ্রাহী প্রতিচ্ছবির একটি জেলার রায়পুর উপজেলায় অবস্থিত উপজেলা প্রশাসন আর্ট স্কুল। স্কেচবুকে পেনসিলের কারুকাজ কিংবা জলরঙে আঁকা কাল্পনিক অস্তিত্বের কোনো ছবি- মুগ্ধ নয়নে দেখে জেলাবাসী। আনন্দঘন একটি দিনের পরশ কেমন কাটতে পারে আর্ট স্কুলটির আঙিনায় সেই আলাপনের গল্প লিখেছেন- লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জিহাদ হোসেন রাহাত

মনের স্পৃহা নিয়ে হাজির আঁকিবুঁকির রাজ্যে। রায়পুর থানা প্রাচীরের পূর্বদিকের রাস্তা ধরে এক মিনিট হাঁটলেই নাগাল মেলে স্কুলটির প্রধান ফটকের। চার শিক্ষকের একজন আরিফা সুলতানা পূর্বপরিচিত হওয়ায় প্রবেশে ছিল না কোনো বাধা। ফটক থেকে পা মেলতেই চোখে পড়ে বড় হলরুমটিতে শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা। একেকজন আপন মনে আঁকছে নিজ নিজ ভাবনার প্রতিচ্ছবি। তাদের একজন বছর দশ বয়সি শাওন। নতুন অতিথি আসায় কিছুটা মনোযোগ হারায় সে। সামনে এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ল তার অর্ধ আঁকা গ্রামবাংলার দৃশ্য। মোহনা, সিমরিন, মাহি নামের কয়েকজন শিক্ষার্থী তখনো আঁকছে গভীর মনোযোগ নিয়ে। বেলা গিয়ে ঠেকেছে তখন সাড়ে এগারোটার কাছাকাছি। চট্টগ্রাম থেকে আসা দুজন শিক্ষকের সঙ্গেও এর মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে পরিচয় পর্ব। স্কুলটির মোট শিক্ষক চারজন। ঘুরে দেখার সূচনা পর্যায়ে হঠাৎ চোখ গেল ভেতরকার দেয়ালের দিকে। ভাষাশহীদ, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, গ্রামবাংলা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীসহ বেশ কিছু ছবির ঠাঁই হয়েছে দেয়ালগুলোয়।

আলাপচারিতায় আরিফা জানান, আর্ট স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পেছনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। দেশে এখন পর্যন্ত স্থাপিত আর্ট স্কুলগুলো একটির অবস্থান লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে। এটি তৈরির প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন উপজেলাটির বিদায়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনজন দাশ। কথায় কথায় জানা যায়, তিনি চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। প্রশাসন ক্যাডারে আসার পরেও আঁকড়েছিলেন নিজের শিল্পী স্বভাব। অনজন দাশের পরেই স্কুলটির উদ্যোক্তা কাতারে আসে একই উপজেলার সদ্য বিদায়ি সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাসেল ইকবালের নাম। শিল্পী মনের মর্যাদা ও চিত্রশিল্পের প্রসারে স্কুলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকায় থাকা স্থানীয় সংসদ সদস্য নূরউদ্দিন চৌধুরী নয়নের নামও রয়েছে আঁকিবুঁকির এই রাজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে। আরিফা আরো জানান, গত বছরের (২০২৩) অক্টোবরে স্কুলটির উদ্বোধন করেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি। একতলাবিশিষ্ট ভবনটি উদ্বোধনের সপ্তাহ পরেই এর দোতলার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন একাদশ সংসদের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি।

গল্পে গল্পে পেরিয়ে যায় দীর্ঘ সময়। দুপুর সাড়ে বারোটা ছুঁইছুঁই। শাওন শেষ করেছে নিজের গ্রামীণ দৃশ্যপটের কাজ। নতুন শিক্ষার্থী হওয়ায় শুধু পারেনি চিত্রে রংকর্ম সমাপ্ত করতে। মূলত স্কুলটিতে শিক্ষার্থীরা শিখছে চিত্রকর্ম। আঁকছে- গুণিজন, গ্রামবাংলা, চিরায়ত বাংলাদেশের রূপচিত্র। সাবলীলভাবে আঁকার হাত খুব অল্প হলেও শেখার হাত ঢের বেশি। অধিক ইচ্ছা শক্তিই হয়তো করবে নবাগত অঙ্কুরময় চিত্রশিল্পীদের সফল। দেশের বর্তমান কারিকুলামের শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ের জটিল সমীকরণ সহজে উপস্থাপনেও কয়েক ধাপ এগিয়ে প্রতিষ্ঠানটি। মাস প্রতি তিন শ টাকা বেতন ও নামমাত্র দুশো টাকায় রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ। ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সসীমা কিছুটা দৃশ্যমান হলেও স্কুল-কলেজপড়ুয়ারা পাচ্ছে প্রতিভা বিকাশের অনন্য সুযোগ। বেসরকারি আঙ্গিকে চলা আঁকিবুঁকির রাজ্য হয়তো নিকট সময়ে পাবে সরকারি অর্থায়ন- এমনটি ভাবতে ভাবতে বিদায় জানালাম আঁকিবুঁকির রাজ্যের খুদে অঙ্কুরগুলোকে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close