মুরাদ হোসেন, হাবিপ্রবি

  ৩১ জানুয়ারি, ২০২৪

গবেষণা ও অ্যাকাডেমিকে চমক দেখাবেন হাবিপ্রবির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে উৎসাহিত করতে মেধার স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে চারটি অ্যাওয়ার্ড দেবে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) প্রশাসন।

এদিকে গবেষণা প্রকল্পে ৬৮ লাখ টাকা অনুদান পাচ্ছেন হাবিপ্রবির ৪৪ জন শিক্ষক। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের গবেষণা প্রকল্পে এ অনুদান পেতে যাচ্ছেন তারা। ২২টি গবেষণা প্রকল্পের আওতায় প্রধান গবেষক হিসেবে ২২ জন শিক্ষক ও তাদের আওতাধীন সহকারী হিসেবে আরো ২২ জন শিক্ষক অনুদান পেতে যাচ্ছেন। গত বছর ১৮ ডিসেম্বর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বিদ্যুৎ চন্দ্র আইচ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।

পূর্ব থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু ডিন’স লিস্ট অ্যাওয়ার্ড চালু থাকলেও ৫৪তম রিজেন্ট বোর্ডে নতুন তিনটি অ্যাওয়ার্ড চালু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের সভায় প্রবর্তিত নতুন তিনটি অ্যাওয়ার্ড হলো, ডিন’স মেরিট অ্যাওয়ার্ড, ভাইস চ্যান্সেলর্স মেরিট অ্যাওয়ার্ড এবং চ্যান্সেলর্স গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড।

কোনো শিক্ষার্থী একটি অ্যাকাডেমিক বর্ষে পরপর দুটি সেমিস্টারে কোনো কোর্সে এফ গ্রেড ছাড়া গড় সিজিপিএ ৩.৭৫ (৪-এর মধ্যে) বা এর বেশি পেলে সে শিক্ষার্থী ডিন’স লিস্ট অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হবে। এর আগে এই অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা বছরে বারোশ টাকার মেধাবৃত্তি পেত; রিজেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেটাকে বাড়িয়ে দশ হাজার টাকা করা হয়েছে। তবে, একই একাডেমিক বর্ষে ডিন’স মেরিট অ্যাওয়ার্ড পাওয়া শিক্ষার্থী ডিন’স লিস্ট অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হবে না। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম না মানায় শাস্তিপ্রাপ্ত কিংবা কারণ দর্শানো নোটিস পাওয়া শিক্ষার্থীরা এই পুরস্কার পাবেন না।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রবর্তিত নতুন অ্যাওয়ার্ডগুলোর মধ্যে ডিন’স মেরিট অ্যাওয়ার্ড পেতে হলে শিক্ষার্থীদের একটি অ্যাকাডেমিক বর্ষে পরপর দুটি সেমিস্টারের প্রতিটিতে কোনো এফ গ্রেড ছাড়া সর্বোচ্চ গড় সিজিপিএ অর্জন করতে হবে। তবে, এই পুরস্কার পেতে হলে শিক্ষার্থীদেরকে পরপর দুটি সেমিস্টারেই সিজিপিএ ৩.৭৫ বা এর বেশি পেতে হবে। এবং দুটি সেমিস্টারের সিজিপিএ এর যোগফল টিসিজিপিএ ৭.৫ বা এর বেশি হতে হবে। এর বেশি টিসিজিপিএ অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ টিসিজিপিএ অর্জনকারী শিক্ষার্থী এই পুরস্কার পাবেন। তবে, এতে একাধিক শিক্ষার্থীর টিসিজিপিএ সমান হলে শতকরা অনুপাতে বেশি মার্কস পাওয়া শিক্ষার্থী এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হবেন। এই অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা পনেরো হাজার টাকার মেধাবৃত্তি পাবেন।

একটি অনুষদের একটি ব্যাচের সব সেমিস্টারের ফলাফলে কোনো এফ গ্রেড ছাড়া সর্বোচ্চ সিজিপিএ অর্জনকারী শিক্ষার্থী পাবেন ভাই চ্যান্সেলর্স মেরিট অ্যাওয়ার্ড। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবনের প্রতিটি সেমিস্টারে শিক্ষার্থীদেরকে নূ্যূনতম ৩.৭৫ সিজিপিএ পেতে হবে। সর্বোচ্চ সিজিপিএ (অনুষদের সর্বোচ্চ সিজিপিএ) অর্জনকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা একাধিক হলে শতকরা মার্কসে এগিয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা এই পুরস্কার পাবেন। ভাইস চ্যান্সেলর্স মেরিট অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা বিশ হাজার টাকার মেধাবৃত্তি পাবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ব্যাচের মধ্যে সব অনুষদের সব সেমিস্টারের ফলাফলে কোনো এফ গ্রেড ছাড়া সর্বোচ্চ সিজিপিএ অর্জনকারী শিক্ষার্থী পাবেন চ্যান্সেলর্স গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড। তবে, এই পুরস্কার পেতে হলে প্রতিটি সেমিস্টারেই শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম সিজিপিএ ৩.৭৫ করে পেতে হবে। এ অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা একুশ ক্যারেটের পাঁচ গ্রাম সোনাসহ নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকার মেধাবৃত্তি পাবেন। সর্বোচ্চ সিজিপিএ অর্জনকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা একাধিক হলে শিক্ষার্থী শতকরা অনুপাতে বেশি মার্কস পাওয়া শিক্ষার্থী এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হবেন। এরপরও দুজন শিক্ষার্থী সমান স্থান অর্জন করলে দুজনই এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হবেন।

নতুন তিনটি অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সেমিস্টারে কোনো ‘এফ’ গ্রেড থাকলে এবং রিপিট সেমিস্টার থাকা শিক্ষার্থীরা এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে শাস্তিপ্রাপ্ত, লিখিত সর্তকতা পাওয়া শিক্ষার্থীরাও এ পুরস্কারের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। এছাড়া এসব পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হতে হলে শিক্ষার্থীদের প্রতিটি অ্যাকাডেমিক বর্ষের একটি সেমিস্টারে কমপক্ষে একটি ক্লাবে বা কো-কারিকুলার কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক পড়াশোনায় উৎসাহিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ইয়াছিন প্রধান বলেন, ভাইস চ্যান্সেলরের নেতৃত্বে এ ধরনের পুরস্কারের প্রচলন অত্যন্ত যুগোপযোগী ও আনন্দের। এতে মেধাবী শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় উৎসাহিত হবে এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে। এর ফলে শিক্ষার মান বাড়বে। সেই সঙ্গে মেধাবীদের জন্য এটি ভালো অর্থনৈতিক সহযোগিতা হিসেবে থাকবে।

এদিকে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কর্মসূচির আওতায় গবেষকদের ৬৯৬টি বিশেষ গবেষণা প্রকল্প স্থান পেয়েছে। তার মধ্যে ২২টি গবেষণা প্রকল্পের আওতায় প্রধান গবেষক হিসেবে ২২ জন শিক্ষক ও তাদের আওতাধীন প্রকল্পের সহকারী হিসেবে ২২ জন শিক্ষক স্থান পেয়েছেন।

হাবিপ্রবি থেকে নির্বাচিত প্রধান গবেষকরা হলেন এন্টোমোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. নিজাম উদ্দিন, একই বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো আবদুল আলিম, রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আতিকুল ইসলাম, এগ্রিকালচারাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. বিকাশ চন্দ্র সরকার, ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (আইআরটি) অধ্যাপক মো. আলমগীর হোসেন, অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগের অধ্যাপক ড. উম্মে সালমা, জেনেটিকস অ্যান্ড প্লান্ট ব্রিডিং বিভাগের অধ্যাপক মো. আরিফুজ্জামান, ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহাবুব হোসেন, এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহানুর কাবির, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের গ্রেড-১ অধ্যাপক ড. মো. সাহাদাৎ হোসেন খান, একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সুলতান মাহমুদ, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. আজিজুল হক, হর্টিকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র হালদার, একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. তারিকুল ইসলাম এবং সহযোগী অধ্যাপক মো. হাসানুল রহমান, ক্রপ ফিজিওলজি অ্যান্ড ইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. হাফিজুর রহমান হাফিজ, একই বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু খায়ের মো. মুক্তাদিরুল বারি চৌধুরী এবং সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. রবিউল ইসলাম, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. খালেদ হোসেন, ফুড প্রসেসিং অ্যান্ড প্রিজারভেশন বিভাগের অধ্যাপক এস এম কামরুল হাসান ও জেনেটিকস অ্যান্ড অ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রাশেদুল ইসলাম।

এছাড়া সহকারী গবেষক হিসেবে আছেন এন্টোমোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. আদনান আল বাচ্চু, একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোছা. আরিফুন্নাহার, রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. নাজিম উদ্দিন, এগ্রোনমি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামস্ শায়লা ইসলাম, একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোছা. মহসিনা আক্তার, ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (আইআরটি) অধ্যাপক হাসান ফুয়াদ ইআই তাজ, অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগের প্রভাষক ড. মো. আহসান হাবীব, জেনেটিকস অ্যান্ড প্লান্ট ব্রিডিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোছা. তানজিনা শাহানাজ তুরিন, ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক মো. সেলিম হোসেন, এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহা নুর কাবির, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মেহেদী আলম, একই বিভাগের অধ্যাপক শাহ্ মঈনুর রহমান এবং প্রভাষক মো. রায়হানুল হক, ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবদুল মোমিন শেখ, হর্টিকালচার প্রভাষক মো. আতিকুর রহমান, ক্রপ ফিজিওলজি অ্যান্ড ইকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুব্রত কুমার প্রামাণিক, একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু হাসান, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাজমি আরা রুমি, ফুড প্রসেসিং অ্যান্ড প্রিজারভেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মুর্তজা কামাল এবং অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সাব্বির হোসেন সবুজ, এগ্রোফরেস্ট্রি অ্যান্ড ইনভায়রনমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শোয়েবুর রহমান ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামসুজ্জোহা।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ বিষয়ক প্রকল্পের গবেষণার জন্য ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে বিশেষ গবেষণা অনুদান দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close