মুরাদ হোসেন, হাবিপ্রবি

  ১৮ জানুয়ারি, ২০২৪

ধর্ম-বর্ণ, জাতি গোষ্ঠীর ঊর্ধ্বে ‘বই উৎসব’

নতুন বই মানেই নতুন সূর্যোদয়, নতুন দিনের সম্ভাবনার সূচনালগ্ন। বইয়ের পৃষ্ঠা শিশুর মনোজগতে বিস্ময় তৈরি করে। কারো কৌতূহলের সৃষ্টি করে, কারো বা জানার আগ্রহ ও জ্ঞান বৃদ্ধির মাধ্যম। বলা হয়, একটি বই হাজার বন্ধুর সমান।

বছরের প্রথম দিন নতুন বই বিতরণ এক অন্যরকম উৎসবে পরিণত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের সংকট কমাতে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার বিনামূল্যে বই বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই বছর সরকার ২৯৬ কোটি ৭ লাখ টাকার পাঠ্যপুস্তক প্রদানের উদ্যোগ নেয় এবং ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি এটি প্রথম উদ্বোধন করেন। একদিনে বিশাল সংখ্যক বই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম। এরপর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে চলছে। নতুন বইয়ের গন্ধটা মন-মুগ্ধকর। যেটার সঙ্গে অন্য কিছুকে তুলনা করা যায় না। এ বছরও প্রথমণ্ডনবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে নতুন বই।

দেশে এই একটি উৎসবই আছে যেখানে ধর্ম-বর্ণ, জাতি গোষ্ঠী, সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বে সাড়ম্বরে পালিত হয় ‘বই উৎসব’। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের ‘বই উৎসব’-এর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেন। রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে বই উৎসব উদ্বোধনের এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও সারা দেশে বছরের প্রথম দিন সোমবার এ উৎসব পালন করা হয়।

বিনামূল্যে বই বিতরণ দেশের শিক্ষা খাতে অভাবনীয় পরিবর্তন এনেছে। পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী সংখ্যা ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ জন। তাদের জন্য বই ছাপা হয়েছে ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭টি।

নতুন বই পেয়ে কেউ কেউ নতুন মলাট এঁটে দিয়েছে। যদিও বর্তমানে বইগুলোতে মলাট লাগানোর প্রয়োজন নেই। এ বছর নতুন বইয়ে আগ্রহ একটু বেশিই। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠ্যপুস্তক সাজানো হয়েছে।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের জন্য নিজস্ব বর্ণমালা-সংবলিত মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির পঠন-পাঠন সামগ্রী এবং প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই প্রণয়ন এবং সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এবারে ৫টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদরী) শিশুদের মাঝে প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক পর্যায়ে ১৯ জেলায় পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে। এই জেলাগুলো হলো- বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, শেরপুর, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, চাঁদপুর, ফেনী, সুনামগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং নওগাঁ। মাতৃভাষার বই পেয়ে খুশি পাহাড়ি শিশুরা।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার পুরোনো ধারার শিক্ষার খোলনলচে পাল্টে এমন এক নতুন শিক্ষার বীজ বপনের কাজে হাত দিয়েছে, যা শিক্ষার্থীর মস্তিষ্ক ও পিঠ থেকে মুখস্থবিদ্যার বোঝা ঝেড়ে ফলে তাদের কৌতূহল, জিজ্ঞাসা, অনুসন্ধান, গবেষণা ও ভাবনার শক্তিকে জাগাবে ও নেতৃত্বের গুণাবলি তৈরিতে উপযোগী করে তুলবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close