মো. আবদুল্লাহ আলমামুন, জবি

  ১৪ মার্চ, ২০২৩

নৌ-ভ্রমণ : ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষা মানুষের মনুষ্যত্ব বিকশিত করে। তেমনি শিক্ষার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো ভ্রমণ। এর মাধ্যমে নিজ চোখে দেখে শিক্ষা লাভ করা যায়। অনেক ভ্রমণপিয়াসী মানুষ আছে, যারা নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশায় ছুটে চলে। সান্দ্রা লেক বলেন, ‘বয়সের সাথে বুদ্ধি আসে আর ভ্রমণের সাথে আসে অভিজ্ঞতা আসে।’ এই অভিজ্ঞতা কোনো বই পুস্তক পড়ে অর্জন করা যায় না। তাই বসন্তের রেশ শেষ না হতেই ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর ভ্রমণ। আর এই ভ্রমণে অংশগ্রহণ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ।

দিনটি ছিল ৩ মার্চ ২০২৩, শুক্রবার। এখানে সাবেক শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে নবীন শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন। ফলে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছোটখাটো একটা পুনর্মিলন হয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সকাল ৮টায় ভিআইপি গেট দিয়ে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে প্রবেশ করে। পুরান ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চযাত্রা করে এবং গন্তব্যস্থল চাঁদপুরের মোহনপুর। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সাবিনা শরমীন ম্যাম ফিতা কেটে রিভার ক্রুজের উদ্বোধন করেন। শিক্ষার্থীদের মাঝে উৎসবমুখর উত্তেজনা বিরাজ করে। আর এই ভ্রমণ ছিল নৌপথে। ফলে অনেক শিক্ষার্থী প্রথমবার লঞ্চে যাওয়ার সুযোগ পায়।

লঞ্চে অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। প্রথমে সকালের নাশতা ভোনা ডিম খিচুড়ি রিভার ক্রুজ আকর্ষণীয় করে তোলে। এরপর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে সাবেক, বর্তমান শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান উৎসবমুখর পরিবেশে মেতে ওঠে। তারা নাচ, গান, আবৃত্তি, অভিনয় করে। বিশেষ করে ‘কালো ঘোড়া’ রম্য উপস্থাপনা সবার মন জয় করে। কিন্তু বসন্তের দিনে নদীতে গ্রীষ্মের উত্তাপ ছড়ায়। অনেকে তৃষ্ণার্ত হয়ে যায়। তখন সবার জন্য আইসক্রিম দেওয়া আর তীব্র গরমে আইসক্রিমের স্বাদ অতুলনীয়। অনুষ্ঠানের আনন্দ বাড়িয়ে দেয় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলেমিশে নাচ। এতে বর্তমান শিক্ষার্থীরাও অংশগ্রহণ করে। এর সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চ আপন গতিতে চাঁদপুরের উদ্দেশে চলতে থাকে।

নদীতে চলছিল ছোট নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার ইত্যাদি। আর এসব দৃশ্য অনেক মনোরম ছিল। তারপর সবার মাঝে টি-শার্ট বিতরণ করা হয়। আর টি-শার্ট স্পনসর করেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী শিপন ভাই। একসময় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ শুরু হয়। তারা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি বর্ণনা করেন। তাদের উপস্থাপনার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। লঞ্চ যত সামনে যায়, ততই সবার কৌতূহল বেড়ে যায়। যেন অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় না।

অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসে, পৌঁছে যায় মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রে। তার আছে পিকনিক স্পট। সেখানে আমাদের মতো বেশ কিছু মানুষ আসছে নৌ-ভ্রমণে। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো স্পটের পাশে চাষ করা হচ্ছে সৌদি আরবের খেজুরের। মোহনপুরে এসে সবাই হারানো শৈশব ফিরে পায়। তাই তারা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আর গোসল করে। বন্ধুরা মিলে অনেক মজা করে। একজন অন্যের গায়ে পানি দেয়। নদীর কিনারায় দাঁড়িয়ে সবাই ছবি তোলে। আর মনে হচ্ছিল এটা যেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের অনুভূতি। এরপর সবাই লঞ্চে ফিরে আসেন। দুপুরের খাওয়ার সময় হয়ে যায়। খাওয়া-দাওয়া চলে লঞ্চের ভেতরে। দুপুরের মেন্যুতে ছিল বিরিয়ানি, মুরগির রান, গরুর মাংস, সালাদ, কোকোকোলা, ফিরনি ইত্যাদি।

দুপুরের খাওয়া শেষ করে সবাই আবার ডিজে গান, নাচে মেতে ওঠে। লঞ্চ চলতে শুরু করে সদরঘাট। যত সময় যায়, সূর্য মামার সময় ফুরিয়ে আসে। আর এ মুহূর্তে আশপাশে অনেক প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা যায়। স্মৃতি হিসেবে রাখার জন্য অনেকে ছবি তোলে। তারপর সময় আসে বিকালের নাশতার। মেন্যুতে ছিল চা, পেঁয়াজু, জিলাপি। রিভার ক্রুজ আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে যায় রাফেল ড্রতে। এতে ছিল ৩১টা আকর্ষণীয় পুরস্কার। প্রাক্তন আর বর্তমান শিক্ষার্থীরা পায় এসব পুরস্কার। তবে শ্রদ্ধেয় একজন ম্যাম রাফেল ড্রতে জেতে। আর যারা পুরস্কার পায়নি, তাদের জন্য ছিল সান্ত¡না পুরস্কার। আস্তে আস্তে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে এবং রাত ৮টায় সদরঘাট বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে পৌঁছে যায়। এভাবে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের রিভার ক্রুজ সমাপ্ত হয়। আর স্মৃতি হয়ে গেল অনেক মজার আনন্দঘন একটি মুহূর্ত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close