শামীম আহমেদ

  ১১ জানুয়ারি, ২০২২

৬০ বছরে তেজগাঁও কলেজ

গৌরব ও ঐতিহ্যের ৬০ বছরে পা দিয়েছে রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ তেজগাঁও কলেজ। প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখরিত থাকা কলেজটি ১৯৬১ সালের ২২ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজগুলো মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিষয় পড়ানো হয় এ কলেজে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ কলেজ শিক্ষা ও গবেষণায় অভাবনীয় স্বাক্ষর রেখে আসছে, যা প্রতিষ্ঠানটির মানকে বিশ্ব দরবারে সমুন্নত করেছে।

মাওলানা আবুল খায়েরের নিরলস কর্ম প্রচেষ্টায় ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা ইসলামিয়া হাইস্কুলে ‘ঢাকা নাইট কলেজ’ নামে প্রথম এ কলেজের যাত্রা শুরু। তখন কলেজটির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ছিলেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মফিজ উদ্দীন আহমেদ ও সম্পাদক ছিলেন শফিকুল ইসলাম। এ সময় কলেজের আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকার কারণে শিক্ষকরা বিনা বেতনে ক্লাস নিতেন। পরে মফিজ উদ্দীন কলেজটিকে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসায় স্থানান্তর করেন। এখানেই ১৮ মাস ক্লাস চলার পর আবার তেজগাঁও পলিটেকনিক হাইস্কুলে (যা বর্তমানে তেজগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয়) স্থানান্তর করা হয়। এখানে শিক্ষাদান কার্যক্রম চলে ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত। নানা প্রতিকূলতায় কলেজকে ফের স্থান পরিবর্তন করানো হয় তেজগাঁও শিল্প এলাকার আসাদুল হকের ক্রাউন লন্ড্রিতে। এ সময় ‘ঢাকা নাইট কলেজ’ নামটি পাল্টে বর্তমান ‘তেজগাঁও কলেজ’ রাখা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর তোফায়েল আহমেদ অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিলে কলেজটি স্থায়ী ঠিকানা পায়। বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আবদুর রশীদ ১৯৯৮ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দ্রুত পাল্টে যেতে থাকে কলেজের অবকাঠামো ও শিক্ষার গুণগত মান। বর্তমানে কলেজে ২৮ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন। চারটি অনুষদের ৩০টি বিভাগে পাঠদান চলমান রয়েছে। ক্যাম্পাসে বর্তমানে শিক্ষক সংখ্যা ২৫৭ জন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা রয়েছেন ২০ জনের অধিক। সাধারণ কর্মচারী ও সহায়ক কর্মচারী হাজারেরও বেশি। নানা কারণে সাধারণ ছাত্ররা রাজনীতি বিমুখ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বেসরকারি কলেজগুলো যখন ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পথে হাঁটছে, তখন এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম তেজগাঁও কলেজ। ছাত্র রাজনীতির সুন্দর পরিবেশ এখনো বিদ্যামান এ ক্যাম্পাসে। ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও প্রগতিশীল সব ছাত্র সংগঠন কলেজে ছাত্র স্বার্থ রক্ষায় ভূমিকা রাখছে। তা ছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, রাজাকারের ফাঁসির দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে এ ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো কলেজগুলোর র‌্যাংকিং করে ২০১৬ সালে। সেরা কলেজের সেই তালিকায় ছিল না শিক্ষার্থীদের প্রিয় প্রতিষ্ঠান তেজগাঁও কলেজ। এ সময় ছাত্র ইউনিয়ন তেজগাঁও কলেজ শাখার উদ্যোগে ‘কেন তেজগাঁও কলেজ সেরা নয়’ নামে তিন পর্বের একটি ভিডিও সিরিজ করে এবং সাধারণ ছাত্রদের অবগত করে। এ সিরিজে তারা র‌্যাংকিংয়ের ক্যাটাগরি ধরে আলোচনা করে ঠিক কী কারণে এ প্রতিষ্ঠান সেরা কলেজের তালিকায় নেই। শুধু আলোচনার মধ্যে ভিডিও সিরিজ সীমাবন্ধ না রেখে ক্যাম্পাসে এ দাবিগুলো নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ১০ দফা দাবি তৈরি করে। শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিকভাবে আন্দোলনের চাপে একসময় ক্যাম্পাস প্রশাসন দাবিগুলো বাস্তবায়নের প্রদক্ষেপ নেয়। তার সুফল পায় ২০১৮ সালের জাতীয় বিশ্ববিদ্যায়ের কলেজ র‌্যাংকিং প্রকাশ হলে। ঢাকা অঞ্চলের কলেজের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে উঠে আসে আমাদের প্রিয় কলেজ। ২০২১ সালে প্রকাশিত শেষ র‌্যাংকিংয়ে ১২তম স্থানে উঠে আসে এই বিদ্যাপীঠ।

মূলধারার শিক্ষার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমেও সফলতা রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটির। সারা বিশ্বের হাজারের অধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত স্টুডেন্ট কোয়ালিটি কন্ট্রোল সার্কেল কনভেনশন-২০১৯-এর আসরে ৩৮ দেশকে পেছনে ফেলে ভারতের সঙ্গে একই ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। ২৭ দেশের প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে আরেকটি ক্যাটাগরি দ্বিতীয় হয়। একই আয়োজনের বাংলাদেশ আসরে ২০১৭ সালে বিশ্বের ২৬ দেশের প্রতিযোগিতায় নাটক উপস্থাপনে চ্যাম্পিয়ন হয় তেজগাঁও কলেজ।

ক্যাম্পাসে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন ‘বাঁধন’ ২০১৫ সালে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ২০১৫-২০২১ পর্যন্ত ইউনিটের মোট সরবরাহকৃত রক্তের পরিমাণ প্রায় ২৫০০ ব্যাগ এবং বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করা হয়েছে প্রায় ৭০০০ জন মানুষের। অন্যদিকে তেজগাঁও কলেজ ডিবেটিং ক্লাব বাংলাদেশ টেলিভিশন আয়োজিত জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি দলকে পরাজিত করে এবং সেরা বিতার্কিক হন তেজগাঁও কলেজ ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি সাদমান সাঈদ। ২০২০ ও ২০২১ সালে দুটি পৃথক জাতীয় বারোয়ারি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় তেজগাঁও কলেজ ডিবেটিং ক্লাব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close