অন্বয় দেবনাথ

  ১৩ জুন, ২০২১

শিক্ষার্থীদের মাঝে বিজ্ঞান প্রসারে ‘সায়েন্স বি’

বর্তমান যুগ তথ্য ও প্রযুক্তির যুগ। তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতির ফলে এখন ঘরে বসেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে প্রতিদিনের আপডেট খবর পাওয়া যায়। কিন্তু বিজ্ঞানবিষয়ক বিভিন্ন বিদেশি ওয়েবসাইট থাকলেও বাংলায় শুধু বিজ্ঞান চর্চার জন্য আলাদা কোনো ওয়েবসাইট নেই বললেই চলে। অপরদিকে আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতি করলেও জিপিএ-৫ পাওয়ার মানসিকতা আমাদের এখনো পরিবর্তন হয়নি? আমরা কৌতূহলী, চমৎকার চিন্তাশক্তি রয়েছে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে। সেই শক্তিকে কাজে লাগাতে হলে বিজ্ঞান শিক্ষা হতে হবে আনন্দময়।

বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষাকে আরো সহজ এবং সমৃদ্ধ করতে ২০১৮ সালের ৩১ মে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মবিন সিকদারের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে বিজ্ঞান চর্চার জনপ্রিয় মাধ্যম ‘সায়েন্স বি’। সায়েন্স বি মূলত একটি শিক্ষামূলক সংগঠন। দেশব্যাপী অনলাইনে বিজ্ঞানবিষয়ক বিভিন্ন কনটেন্ট নির্মাণ, বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানের আপডেট নিউজ প্রদান, প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, ভিডিও তৈরিসহ আরো নানা কাজে যুক্ত সংগঠনটি। আর এসব কাজ তারা করে থাকেন মূলত সায়েন্স বির নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। পাশাপাশি ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামের মতো বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে বিজ্ঞানের আপডেট নিউজ পৌঁছে দেওয়া হয়।

সায়েন্স বির ওয়েবসাইট বিজ্ঞান শিক্ষায় জোয়ার এনেছে। বাংলাদেশের মধ্যে বেশ কিছু নতুন ফিচার নিয়ে হাজির হয়েছে তারা। ওয়েবসাইটের প্রথম আকর্ষণ হচ্ছে বিজ্ঞান সংবাদ। এটি বাংলাদেশের প্রথম বিজ্ঞানভিত্তিক সংবাদ প্রচারের জন্য পরিচিত। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার সুযোগ যেখানে সীমিত সেখানে নিয়মিতভাবে বিজ্ঞানের জগতে ঘটে যাওয়া প্রতিদিনের আপডেট ঘটনাগুলো সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায় পড়ার সুযোগ পাওয়া এক অচিন্তনীয় বিষয় ছিল। কিন্তু এই বিজ্ঞান সংবাদের মাধ্যমে সেই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমানে দৈনিক ৪০০০-এর বেশি শিক্ষার্থী এই সাইট দ্বারা উপকৃত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৫০০-এর বেশি সংবাদ এই সাইটে প্রকাশিত হয়েছে, যার সংখ্যা ভবিষ্যতে আরো অধিক হারে বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ ছাড়াও ওয়েবসাইটে রয়েছে ‘বি ব্লগ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। যেখানে নতুন লেখকদের বিজ্ঞানবিষয়ক লেখালেখির প্রতিভা ঝালাইয়ের পাশাপাশি অভিজ্ঞ লেখকদের বিভিন্ন তথ্যবহুল লেখার সম্মিলনও রয়েছে। বর্তমানে ব্লগে ২০ জন লেখক নিয়মিত লিখছেন। এ ছাড়া চাইলে দেশ এবং দেশের বাইরের যেকোনো শিক্ষার্থী বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ভিত্তিক বিভিন্ন ব্লগ এই সাইটে প্রকাশ করতে পারেন। এখন পর্যন্ত এই সাইটে প্রকাশিত হয়েছে প্রায় ৩০০-এর বেশি লেখা। এর আরেকটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হলো ‘প্রশ্নোত্তরে বিজ্ঞান’। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞানভিত্তিক প্রশ্নোত্তরের আর্কাইভ এটি, যেখানে আছে ৬০০০-এর বেশি প্রশ্নোত্তরের চমৎকার সংগ্রহ। বিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কিত যে কোনো প্রশ্ন চাইলেই এখান থেকে খুঁজে নিতে পারছে শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া উত্তর না পেলে প্রশ্ন করার সুযোগও থাকছে এখানে। এমনকি বিভিন্ন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে এবং নতুন নতুন প্রশ্ন করার মাধ্যমে নিয়মিত পুরস্কারও জিতে নিচ্ছেন বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষার্থীরা। তিন বছরের মাত্রায় মাসিক সর্বোচ্চ এক লাখ ভিজিটরের মাইলফলক স্পর্শ করে সায়েন্স বির ওয়েবসাইটটি। এ ছাড়া দৈনিক গড়ে ১০ হাজার শিক্ষার্থী ওয়েবসাইটটি ভিজিট করে থাকে। বর্তমানে দেশের বিজ্ঞানবিষক শীর্ষ ওয়েবসাইট এটি।

তবে যদি বলতে হয় সায়েন্স বির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান সম্পর্কে তাহলে ফেসবুক লাইভে প্রচারিত লাইভ সায়েন্স অনুষ্ঠানটির কথা না বললেই নয়। এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা লেখক, গবেষক, নির্মাতা, ওয়েব ডেভেলপার এবং বিজ্ঞানীরা নিয়মিত অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন এবং শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মাধ্যমে তাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে উদ্বুদ্ধ করেন। ওয়েব ডেভেলপার এবং লেখক ঝংকার মাহবুব, চলচ্চিত্র পরিচালক এবং হলিউডে ভিএফএক্স কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করা ওয়াহিদ ইবনে রেজা, আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার বিজয়ী সাদাত রহমান, সায়েন্স নিউজ কর্তৃক নির্বাচিত ২০২০ সালের সেরা ১০ তরুণ বিজ্ঞানীর একজন তনিমা তাসনিম অনন্যা, ভিডিও নির্মাতা ফাতিহা আয়াত, ড. তাসনিম জারা, গুগলের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার অনিক সরকারসহ আরো অসংখ্য প্রতিভাবান ব্যক্তি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close