নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৯ মার্চ, ২০২৪

টাঙ্গাইল সদর

এসডিএসের জমি দখলের পাঁয়তারা জাপা নেতার

টাঙ্গাইল এডিএম কোর্ট থেকে কাজ বন্ধে ১৪৪ ধারা জারি

বেসরকারি সংগঠন ইসলামিক রিসার্স ইনস্টিটিউট এবং সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের (এসডিএস) জমি অবৈধ ও ভুয়া দলিলের মাধ্যমে দখলের পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে টাঙ্গাইল সদরের স্থানীয় এক জাপা নেতা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০১৫ সালে প্রকল্পের চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন সিরাজির অনুপস্থিতিতে ভুয়া মালিক সাজিয়ে প্রকল্পের একটি অংশ নিজ নামে লিখে নেন ওই জাপা নেতা বলেও গুরুতর অভিযোগ আছে। তিনি জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক। মন্তব্য জানতে চাইলে জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক হাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, আমি কারো জমিতে মাটি বা ওয়াল দেই না। আমার কেনা জমিতেই সব কিছু করছি। আমি ভূমিদস্যু নই। এসডিএসের চেয়ারম্যানকে আমার সামনে আসতে বলেন, আমি তার সব প্রশ্নের জবাব দেব।

দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া দলিলে জমি দখল এবং ওটাকে পুঁজি করে অবৈধভাবে প্রকল্পের মাটি কেটে বিক্রি করে আসছে। এ নিয়ে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে প্রকল্পের পক্ষ থেকে বার বার অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার মিলছে না বলে ক্ষোভের সঙ্গে জানান প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, গত ২৪ মার্চ রবিবার টাঙ্গাইলে ইসলামিক রিসার্স ইনস্টিটিউট ও এসডিএসের জমিতে মাটি কাটায় ব্যবহার করা হয় একটি ভেকু ও ৫টি মাটি কাটার ট্রাক। প্রকল্পের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে স্থানীয় সদর থানা পুলিশ সদর উপজেলার পোড়াবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে সেগুলো জব্দ করেন। কিন্তু বাদীর অজান্তে সেগুলো থানা কর্তৃপক্ষ ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগে জানা যায়। খোঁজ নিয়েও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। এ নিয়ে প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ। এমনকি গতকাল বৃহস্পতিবার জোরপূর্বক প্রকল্পে মাটি কাটা থেকে সব ধরনের কাজ বন্ধে ১৪৪ ধারা জারি করে আদেশ দিয়েছেন টাঙ্গাইলের এডিএম কোর্ট। আদেশের স্মারক নং-২৭১। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মোজাম্মেল ও তার সহযোগিরা ক্ষমতা ও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কাজ অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত রবিবার টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি লোকমান হোসেন এ বিষয়ে গণমাধ্যমের কাছে জানিয়েছিল, জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রভাব খাটিয়ে মাটি কেটে আসেছিল। এ ব্যাপারে মামলা করা হয়। পরে পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে একটি ভেকু ও মাটিসহ ৫টি ট্রাক জব্দ করে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ওসি লোকমান হোসেন প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাসিক সমন্বয় সভায় যতযত্র ভেকু চলার কারণে রাস্তা নষ্ট হচ্ছে এবং এই যন্ত্র দিয়ে মাটি কাটার নিষেধ থাকায় সেগুলো অভিযান চালিয়ে জব্দ করা হয়। পরে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেগুলো এসডিএস প্রকল্পে মাটি কাটা থেকে জব্দ করা হয়নি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পুলিশকে বিব্রত করতেই একটি পক্ষ এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জাপার নেতা মোজাম্মেল ভুয়া দলিলে এসডিএসের জমি দখল করেছে তার পক্ষে আপনি সাফাই গাইছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি সদর বলেন, এ বিষয়ে প্রকল্পের পক্ষ থেকে প্রতারণার কোনো মামলা করেনি। অথচ পুলিশকে ব্যবহার করে একটি পক্ষ ফায়দা নিতে চাচ্ছে। প্রতারণার মামলা করতে বলেন ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে দেখেন আমরা কী ব্যবস্থা নেই।

তবে প্রকল্পের চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন সিরাজী বলেন, আমি মোজাম্মেলের ভয়ে প্রকল্পে যেতে পারি না। এ বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দিলেও ব্যবস্থা নিতে পেরেছে? আর আমার অনুপস্থিতিতে ভুয়া দলিলে জায়গা দখল করে আমার প্রকল্পের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত এর কি ন্যায় বিচার আমি পেয়েছি। পুলিশ ওই জাপা নেতার কথায় চলছে। বলেন, আমি অভিযোগ করেই যাব যতদিন ওই ভূমিদস্যুর শাস্তি না হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইসলামিক রিসার্স ইনস্টিটিউট ও এসডিএসের ৭১২ শতাংশ জমিতে দীর্ঘদিন ধরে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করে আসছিলেন। এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা করেছেন প্রতিষ্ঠান দুটির চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন সিরাজী। এ ছাড়া থানায়ও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।

সদর উপজেলার পোড়াবাড়ী ও গদুরগাতি মৌজার ৭১২ শতাংশ ভূমি ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক রিসার্স ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সংসদের (এসডিএস) মালিকানাধীন। জমিগুলো ব্যাংকে মর্টগেজ রেখে ঋণ নেওয়া হয়। একাধিক কারণে মামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান দুটির সভাপতি ও চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন সিরাজী ২০০২ সালে গ্রেপ্তার হন। ওই সময় দুটি প্রতিষ্ঠানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তরের ওপর টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close