বিশেষ প্রতিবেদক

  ২৫ জানুয়ারি, ২০২৪

‘শরিফার গল্প’ পর্যালোচনা

তদন্ত কমিটি করল শিক্ষা মন্ত্রণালয়

সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা অধ্যায়ের ‘শরিফার গল্প’ নামের গল্পটি পর্যালোচনা করার জন্য উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গতকাল বুধবার ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুর রশীদকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর মুফতি মাওলানা কফিল উদ্দীন সরকার, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) পরিচালক অধ্যাপক আবদুল হালিম এবং ঢাকা আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুর রশিদ।

নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণীত সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের একটি অধ্যায়ে হিজড়া জনগোষ্ঠী সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক একটি পাঠ রয়েছে।

সম্প্রতি আসিফ মাহতাব নামে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক একটি অনুষ্ঠানে ওই বইয়ের হিজড়া জনগোষ্ঠী সম্পর্কিত গল্পের অংশটি ছিঁড়ে ফেলেন। ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপরই এ নিয়ে বিতর্ক চলছে। বিষয়টি নতুন করে সামনে চলে আসে। ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি বলেছেন, পাঠ্যবইয়ে হিজড়া জনগোষ্ঠী সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক পাঠ অংশের উপস্থাপনায় কোনো বিতর্ক বা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়ে থাকলে এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করলে কিছুটা পরিবর্তন আনা যেতে পারে।

বইয়ে শব্দটি ট্রান্সজেন্ডার নয়, থার্ড জেন্ডার আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সেটি আইনত স্বীকৃত, যারা জৈবিক (বায়োলজিক্যাল) কারণে তৃতীয় লিঙ্গ বা সামগ্রিকভাবে সমাজে হিজড়া নামে পরিচিত। তারা এ দেশের নাগরিক। অবশ্যই তাদের নাগরিক সুবিধা আছে। এ ব্যাপারে বিবিসি বাংলা বিভাগের সঙ্গে কথা বলেছেন ট্রান্সজেন্ডার নারী ও অ্যাকটিভিস্ট, আসিফ মাহতাব এনসিটিবির চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।

ট্রান্সজেন্ডার নারী ও অ্যাকটিভিস্ট হো চি মিন ইসলাম বলেছেন, শিক্ষক আসিফ মাহতাবের বক্তব্য ভাইরাল হয়ে পড়ার পর থেকেই তাদের কম্যুনিটিতে নতুন করে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে।

বুধবার তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে আমাদের প্রতিটা মানুষ। আমিও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এমন মন্তব্য মানুষের মধ্যে ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে বিদ্বেষ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এরা দলবদ্ধ হয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এরা প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে, ধর্মীয় নেতাদের কাছে যাচ্ছে, তাদের বুঝাচ্ছে যে বাংলাদেশে সমকামিতা ছড়াচ্ছে। এটাতো সমকামিতা না। এটা ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু। এটা তাদের বিশাল বড় উদ্দেশ্য।’

‘এই দলগুলোয় নারীনীতি যখন হচ্ছিল নারী-পুরুষের সমানাধিকারের বিপক্ষে ছিল। এটার পেছনে তাদের একটা পলিটিক্যাল স্ট্যান্ড তাদের আছে। এটা মানুষের কাছে পরিষ্কার হতে হবে।’

তবে বিবিসিকে আসিফ মাহতাব বলেছেন, নিজের দেওয়া বক্তব্যকে তিনি সঠিক বলে মনে করেন। তিনি আইনবিরোধী কোনো বক্তব্য দেননি।

এদিকে, এই বিতর্কের মধ্যে ২২ জানুয়ারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় আসিফ মাহতাবের সঙ্গে থাকা চুক্তি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেয়।

এদিকে, মঙ্গলবার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী মাহতাবকে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে ঢাকার মেরুল বাড্ডা ক্যাম্পাসের সামনে মানববন্ধন করে।

এ ব্যাপারে বিতর্কের কেন্দ্র হয়ে ওঠা পাঠ্যপুস্তকের গল্পটি নিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বা এনসিটিবি বলছে, পাঠ্যক্রমের যেকোনো বিষয়বস্তু বা শিক্ষাসূচি প্রয়োজনীয় গবেষণা এবং বারংবার পর্যালোচনার পরই ছাপানো হয়।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেছেন, ‘সরকার ট্রান্সজেন্ডারকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তারা সমাজেরই একটা অংশ। এ বিষয়ে বই রিভিউয়ের সময় ইনক্লুশন স্পেশালিস্ট, জেন্ডার স্পেশালিস্ট ছিলেন। তিনবার বইটি রিভিউ হয়েছে। তারা সবকিছু দেখে বিশ্লেষণ করে দিয়েছেন।’

‘বইতে যা দেওয়া হয়েছে, তা সময়ের প্রয়োজন’, বলেন অধ্যাপক ইসলাম।

পাঠ্যপুস্তকের পাতা ছিঁড়ে ফেলা নিয়ে তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে কে কী করেছে, তা নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই, এটা সরকার দেখবে।’

জেন্ডার বিশেষজ্ঞ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক নাসরীন সুলতানা বলেছেন, ‘পাঠ্যপুস্তকের পাতা ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা গর্হিত অপরাধ। কোনা বিষয়ে অভিযোগ বা অসংগতি দেখলে তিনি কারিকুলাম বোর্ডে চিঠি লিখে জানাতে পারতেন।’

‘সেটা না করে (বইয়ের) পাতা ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা খুবই অবমাননাকর, এটা খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে’, মন্তব্য করেন সহযোগী অধ্যাপক সুলতানা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close