তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, উৎসবের মধ্য দিয়ে সারা দেশের মানুষ উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ভোট প্রদান করেছে, বিএনপিসহ যারা ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়েছিল জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে এ কথা বলেন।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ভোটের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রচারণা, ভোট বর্জনের ডাকের পাশাপাশি ৫ জানুয়ারি ট্রেনে বর্বরোচিত হামলা এবং ৪, ৫, ৬ জানুয়ারি বিভিন্ন জায়গায় ভোট কেন্দ্রে বিচ্ছিন্নভাবে হামলা পরিচালনা করা হয়েছে। তাদের সন্ত্রাস ও অগ্নিসন্ত্রাসের রাজনীতি মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে, দেশে কার্যত একটি ভোট উৎসব হয়েছে।’

চট্টগ্রাম-৭ আসন থেকে টানা চতুর্থবার নির্বাচিত এমপি হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি এবং তাদের সমমনা দলগুলো এখন হতাশায় নিমজ্জিত- কেন তারা নির্বাচন করল না। তাদের সঙ্গে যদি ব্যক্তিগতভাবে আলাপ করেন তাহলে জানতে পারবেন তাদের মধ্যে কী পরিমাণ হতাশা বিরাজ করছে। তারা এখন অনুধাবন করতে পেরেছে, এই নির্বাচন বর্জন করে তারা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এবং গণতন্ত্রের অভিযাত্রা অব্যাহত আছে।’

তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশ, ভারতসহ সার্কভুক্ত দেশগুলো এবং ওআইসিভুক্ত দেশগুলোসহ জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকরা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে যে, দেশে একটি সুন্দর, সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সোমবার বিকেলে তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে অভিনন্দন জানিয়েছে।

নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের বিবৃতি প্রসঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিবৃতিটি পড়েছি। বিবৃতিতে আগুনসন্ত্রাস করে, পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে মানুষ পোড়ানোর ব্যাপারে কোনো কথা নাই। সেখানে মানবাধিকারের কথা বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারের কথা বলা হয়েছে অথচ গ্রেপ্তার তো তাদেরই করা হচ্ছে যারা আগুনসন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত।’

তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার হাইকমিশনারকে বলব যে, গাজায় যেভাবে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে সে নিয়ে কিছু বলার জন্য। মানবাধিকার কমিশনের এই বিবৃতি তখনই ঠিক ও গ্রহণযোগ্য হতো, যদি সেখানে নির্বাচনকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে যেভাবে সন্ত্রাস ও অগ্নিসন্ত্রাস চালানো হয়েছে, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে, সে বিষয় নিয়ে বক্তব্য থাকত এবং সেগুলোর নিন্দা জানানো হতো। কিন্তু তা নেই বলে এই বিবৃতিটি পক্ষপাতদৃষ্ট, অসম্পূর্ণ এবং একপেশে।

নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে আসা যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসের সাবেক চিফ অব স্টাফ, সাবেক কংগ্রেসম্যান, সিবিএস নিউজের চিফ নিউজ এডিটর এবং অন্যান্য দেশ তথা জার্মানি, ইইউ পার্লামেন্টের সাবেক মেম্বার সবাই ছিল। তারা সবাই সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে যে, নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষকরাও নির্বাচনের প্রশংসা করেছে।

আপনারা জানেন, ভারত, চীন, রাশিয়ার প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে অভিনন্দন জানিয়েছে। আমরা সবসময় দেখে এসেছি, চীন, রাশিয়া যা বলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার উল্টোটা বলে। ভারত, চীন, রাশিয়া একযোগে যখন বলেছে, আমাদের নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্ঠু হয়েছে, তারা যদি এই অভিনন্দনটা এরই মধ্যে না দিতো বা এই অভিমত ব্যক্ত না করত তাহলে হয়তো মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিটা অন্য রকম হতো বলে আমার ধারণা।’

একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক। নিরাপত্তাসহ নানা বিষয়ে এবং বিশ্ব অঙ্গনেও আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বড় উন্নয়ন সহযোগী। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরো উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। তারা আমাদের সঙ্গে কাজ করবে সেটি এই বিবৃতিতেও বলেছে।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো কোনো জায়গায় ভোট প্রদানের হার ৭০ শতাংশ বা তার চেয়েও বেশি, গড়ে ৪১.৮ অর্থাৎ প্রায় ৪২ শতাংশ। আমার এলাকায় ৬৯.৪৩ শতাংশ, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকায় এর চেয়েও বেশি সম্ভবত ৮০ শতাংশ। শহরাঞ্চলে হারটা কিছুটা কম। কারণ শহরের মানুষ জায়গা পরিবর্তন করে। আবার তিন দিন টানা ছুটি পাওয়ায় অনেকেই গ্রামে চলে গেছে।’

এ সময় নির্বাচন কমিশনকেও ধন্যবাদ জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, তারা শক্ত হাতে অত্যন্ত কার্যকরভাবে এবং দক্ষতার সঙ্গে যেভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান করেছে, এজন্য নিঃসন্দেহে তারা অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য, ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া অন্যান্য বারের তুলনায় অনেক কম সহিংস ঘটনা ঘটেছে।

"