আবদুস সবুর, (বালিয়াডাঙ্গী) ঠাকুরগাঁও

  ১০ জানুয়ারি, ২০২৪

ব্যতিক্রম

বোতল বাড়ি

বালিয়াডাঙ্গী

কোমলপানীয় পান করার পর যেখানে সেখানে ফেলে রাখা রং-বেরঙের প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি তৈরি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন জসিম উদ্দীন। স্থানীয়দের কাছে বাড়িটি ‘বোতল বাড়ি’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ইউটিউব দেখে তিনি বাড়ি নির্মাণের এই ধারণা পেয়েছে।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের রায়মহল গ্রামের জসিম উদ্দীন পরিবেশবান্ধন প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি তৈরি করে সাড়া জাগিয়েছেন।

নির্মাণাধীন নতুন এ বাড়িটি দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় করে। এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণকারী ঢাকার একটি আইসক্রিম কোম্পানির কর্মচারী জসিম উদ্দিন।

দুই কক্ষ বিশিষ্ট এ বাড়িটির নির্মাণকাজ চলমান। ছাদ ঢালাইয়ের কাজ বাকি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বোতল বাড়ির একাধিক ছবি ভাইরাল হয়েছে। এরপর বাড়িটি ঠাকুরগাঁও জেলাজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বোতল বাড়ি দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে উৎসুক মানুষ ভিড় জমাচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা হায়দার মিস্ত্রি বলেন, শুরুতে জসিম উদ্দীনের ইচ্ছার কথা শুনে এলাকাবাসী তেমনভাবে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। শুধু দেখেছেন ট্রাকে করে জসিম উদ্দীন প্লাস্টিকের বোতল বাড়িতে আনছেন। এরপর সেই বোতলগুলোর মধ্যে লোক দিয়ে বালু ভরাচ্ছেন, আর বলছেন এ দিয়েই বাড়ি বানাবেন। কিন্তু কীভাবে বাড়ি হবে, তা তাদের মাথায় আসছিল না। একই গ্রামের তৌফিকুর রহমান উজ্জ্বল বলেন, প্রথমে বিষয়টি বিশ্বাস না করলেও যখন অবকাঠামোটি ধীরে ধীরে দাঁড়িয়ে যেতে থাকে, তখন সবাই অবাক হয়েছে। সবার মনের ভেতরেই অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করতে থাকে। আশপাশের সবাই এখন বোতল বাড়িটি দেখার মতো হয়েছে বলেই মন্তব্য করছেন। আশপাশের হাট-বাজারেও বোতল বাড়ি নিয়ে এখন আলোচনা হচ্ছে।

জসিম উদ্দীনের বাবা জয়নাল আবেদিন বলেন, ইন্টারনেটে জাপানি প্রযুক্তির বোতল বাড়ি দেখে আমাদের কাছে জসিম বোতল দিয়ে বাড়ি বানানোর কথা বলে। প্রথমে আমরা তাকে নিষেধ করি। পরে তার অনুরোধে বাড়ি বানানোর অনুমতি দিতে বাধ্য হয়েছি। এখন দেখি ভালোই হয়েছে।

জসিমের স্ত্রী বেগম বলেন, নির্মাণাধীন বোতল বাড়ি দেখতে আসা মানুষের কাছে আমার স্বামী জসিম উদ্দীনের প্রশংসা শুনে বেশ ভালোই লাগছে।

অভিনব পদ্ধতিতে বাড়ি নির্মাণের সঙ্গে জড়িত থাকতে পেরে ব্যাপক খুশি রাজমিস্ত্রি ও শ্রমিকরা। বোতল বাড়ি নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা বলেন, বাড়িটি নির্মাণে ইটের বদলে প্লাস্টিকের পরিত্যক্ত বোতল আর বালু ব্যবহার করা হয়েছে। পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতলগুলোর মধ্যে বালু ভরে তা ব্যবহার করা হয়েছে বাড়ির দেয়ালের গাঁথুনি তৈরিতে। এর মধ্যে ইটের বদলে প্লাস্টিকের বোতল দিয়েই বাড়ির দেয়ালের গাঁথুনির কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। পাশাপাশি বাড়ির উঠানের ঘাটলাও নির্মাণ করা হয়েছে বোতল দিয়ে।

রাজমিস্ত্রি হায়দার আলী বলেন, কাজ যত দূর করা হয়েছে তাতে নিশ্চিত বাড়ির নির্মাণকাজ খুবই মজবুত হয়েছে। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাড়ির তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। কিছুদিন পরে বাড়ির ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শুরু করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বোতল বাড়ি নির্মাণের উদ্যোক্তা জসিম উদ্দীন বলেন, প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে এভাবে বাড়ি নির্মাণের প্রযুক্তিটা মূলত জাপানি। প্রযুক্তিটা আমার কাছে ভালো লেগেছে। কারণ এ বাড়ির প্রতিটি দেয়াল শীতে গরম আর গরমে ঠাণ্ডা থাকবে। ফলে বাড়ির ভেতরটাও আবহাওয়া অনুযায়ী বসবাসের উপযোগী হবে। এছাড়া প্লাস্টিকের বোতলগুলো ফ্ল্যাক্সিবল হওয়ায় এটা ভূমিকম্প রোধক। পাশাপাশি দেয়ালগুলো বুলেট প্রুফ। আর বাড়িটি ইটের চেয়ে ৮০ গুণ বেশি শক্ত। তিনি আরো বলেন, বাড়িটির কক্ষ দুটি মাটির নিচে ফাউন্ডেশনের কাজে এক লিটারের বালুভর্তি প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করা

হয়েছে। আর ওপরের দেয়ালগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে ২৫০ মিলিলিটারের বিভিন্ন কোমল পানীয়র বালুভর্তি প্লাস্টিকের বোতল। সব মিলিয়ে বাড়িতে ৩০ মণ যা গণনায় প্রায় ৭ হাজার পিস প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করা হয়েছে।

বাড়িটি দোতলা করার ইচ্ছার কথা জানিয়ে জসিম উদ্দীন আরো বলেন, এসব বোতল ক্রয় করে বাড়িতে এনে তাতে বালু ভরে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। কিন্তু এই সমপরিমাণ জায়গায় সাড়ে ৩ লাখ টাকার ইটের প্রয়োজন হতো। সে হিসেবে আমার অর্ধেকের বেশি খরচ কম হয়েছে। ইট-সিমেন্ট দিয়ে তৈরি পাকা বাড়ির চেয়ে অন্তত ৩০ শতাংশ কম খরচে স্বপ্নের এ বাড়ি নির্মাণ করা সম্ভব বলেও মনে করছেন জসিম উদ্দীন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close