মজিবার রহমান, কয়রা (খুলনা)

  ২৩ মে, ২০২৩

কয়রা স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প

কয়রার টেকসই বেড়িবাঁধে স্বস্তি

* কপোতাক্ষের বাঁধ নির্মাণের ফলে ভাঙাচোরা বেড়িবাঁধ এখন দৃশ্যমান চওড়া ও প্রশস্ত * আবারও কয়রার মানুষ সুন্দরভাবে বসবাস করার স্বপ্ন দেখছে

সুন্দরবন উপকূলের জনপদ খুলনার কয়রা উপজেলা। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রতিবছর উপজেলাটি বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে। ঘূর্ণিঝড় আইলা, সিডর, আম্পানে বিধ্বস্থ হয় উপজেলার অধিকাংশ বেড়িবাঁধ। বেড়িবাঁধ ভেঙে যখন লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে, তখন সেখানকার বাসিন্দাদের দুঃখণ্ডদুর্দশার সীমা থাকে না। উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোবরা হরিণখোলা এলাকা ভেঙে উপজেলার সদর প্লাবিত হয়। উপকূলীয় এ উপজেলার অধিকাংশ জায়গার নদীর বাঁধ ভাঙা ও ঝুঁকিপূর্ণ। সামান্য আঘাতে বাঁধ ভেঙে কয়েক বছর পর পর লোনা পানিতে প্লাবিত হয় অধিকাংশ এলাকা। দুর্যোগ কবলিত এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ।

স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ মো. আক্তারুজ্জামান বাবুর প্রচেষ্টায় সেটি সম্ভব হয়েছে। এমপি বাবুর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি হিসেবে তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় খুলনার কয়রা সদর ইউয়িনের বারবার ভাঙন কবলিত এলাকা গোবরা ঘাটাখালী বাঁধের ভাঙনরোধকল্পে সরকার দ্রুত বাধ মেরামত ও সংস্কার এবং টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দিয়ে সেটি সংস্কার করে দেয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের ৩ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন। কপোতাক্ষের বাঁধ নির্মাণের ফলে ভাঙ্গাচোরা বেড়িবাঁধ এখন দৃশ্যমান, চওড়া ও প্রশস্ত। শুধু তাই নয় সরকারে পক্ষ থেকে অসংখ্য মানুষের গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। উপজেলার সদর ইউনিয়নে বারবার ভাঙন কবলিত গোবরা ঘাটাখালী হরিণখোলা এলাকার কপোতাক্ষ নদে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে এলাকার মানুষের মধ্যে। ২০০৯ সালে আইলা পরবর্তী সময়ের মতো দুঃসহ কষ্টের মধ্যে পড়ে এ উপজেলার মানুষ। আম্ফান, ইয়াস মতো ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে দফায় দফায় দুর্যোগে পড়ে উপজেলাবাসী। অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হন তারা। ষাটের দশকে নির্মিত দুর্বল বেড়িবাঁধের ওপর বছরের বছর কোনো রকমে মাটি চাপা দিয়ে পানি আটকানো হতো। নদীর নাব্য সংকটে পানির চাপ ও বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসব বাঁধ পানি আটকাতে ব্যর্থ হচ্ছিল। এ অবস্থায় প্রয়োজন ছিল দীর্ঘমেয়াদি শক্ত মজবুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ।

সাইক্লোন আম্ফান আঘাত হানে ২০২০ সালের ২০ মে। সাইক্লোন সিডরের পর এটাই ছিল দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। আম্ফানের আঘাতে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ২১টি স্থানে বাঁধ লন্ড ভন্ড হয়ে যায়। পুনঃনির্মাণ কাজে সহায়তার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এ অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা ৫৫ পদাতিক ডিভিশন তাদের কার্যক্রম শুরু করে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের আপ্রাণ চেষ্টায় বিধ্বস্ত এই জনপদে এলাকাবাসীর পুনর্বাসন কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়।

টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য কয়রা পাইকগাছার সংসদ সদস্য আলহাজ মো. আক্তারুজ্জামান বাবুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় একনেক সভায় কয়রা এলাকার জন্য দুটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয় কয়রা স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প। কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ও উত্তর বেদাকশী ইউনিয়নে পোল্ডার নং-১৪/১ পুনর্বাসন প্রকল্প। প্রকল্প বাস্তবায়নের ধায্য ধরা হয় ১ হাজার ১৭২ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এ টাকার মধ্যে ১০ দশমিক ৯৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের নদী তীর সংরক্ষণ, বাঁধ পুনর্বাসন কাজ হবে ১৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার, বাঁধের অভ্যন্তরে বৃষ্টির পানি অপসারণে রেগুলেটর নির্মাণ কাজ হবে ৪টি, চিংড়ি চাষের জন্য পরিকল্পিত উপায়ে নদী থেকে লবণ পানি প্রবেশ করাতে ইনলেট নির্মাণ হবে ১৩টি। ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের ১ টি কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। বাকি আর ১টি কাজের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। এতে আবারও কয়রার মানুষ সুন্দরভাবে বসবাস করার স্বপ্ন দেখছে।

উত্তর বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ সরদার নুরুল ইসলাম বলেন, যেখানেই বেড়িবাঁধ ভেঙেছে সেখানেই ছুটি গেছেন এমপি আলহাজ মো. আক্তারুজ্জামান বাবু। তার চেষ্টায় গাজীপাড়া, কাশিরহাটখোলা ও গাতির ঘেরির বেড়িবাঁধ অল্প সময়ের মধ্যে বাধা সম্ভব হয়েছে। কয়রার সদরের ইউপি সদস্য শেখ আবুল কালাম বলেন, বর্তমান সরকার কয়রার মানুষের জন্য যে প্রকার অর্থ বরাদ্দ দিয়ে আম্ফান পরবর্তিতে সময় এলাকার উন্নতি করেছে তা প্রশংসার দাবিদার। মঠবাড়ি এলাকার ইউপি সদস্য আবু সাইদ মোল্যা বলেন, এমপি আলহাজ মো. আক্তারুজ্জামান বাবু শুধু বেড়িবাঁধ সংস্কার নয়, সাধারণ মানুষের কল্যাণে যে কাজগুলো করেছে তা বিরল। কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান মো. আছের আলী মোড়ল বলেন, বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হওয়ায় দুর্যোগপ্রবণ কয়রার দক্ষিণ বেদকাশির মানুষ আবারও স্বস্তিতে বসবাস করার স্বপ্ন দেখছে। কয়রা-পাইকগাছার সংসদ সদস্য আলহাজ মো. আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, কয়রার স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায়। প্রধানমন্ত্রী কয়রা-পাইকগাছাবাসীর দুঃখণ্ডদুর্দশা লাঘবে এত বড় প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। বর্তমান সরকারের আমলে কয়রা-পাইকগাছায় যে সব উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে, তা অতীতের কোনো সরকারের আমলে তা সম্ভব হয়নি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close