অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

  ২১ মার্চ, ২০২৩

‘বেঁধে দেওয়া সুদহার নয়’

অবশেষ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত মেনে সুদহার বেঁধে দেওয়ার পরিবর্তে বাজার ব্যবস্থার ওপর ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অবশ্য বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে সুদের হার কত হবে, তা আগামী মুদ্রানীতিতে ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে। রবিবার (১৯ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি সংক্রান্ত এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফের সভাপতিত্বে ডেপুটি গভর্নররা এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের মাঝে সঞ্চয় প্রবণতা কমে গেছে। কেননা ঋণে ৯ শতাংশ সুদের সীমা থাকায় আমানতে সুদ বাড়াতে পারছে না ব্যাংকগুলো। আবার সুদ না বাড়ালে ঋণও পাচ্ছে না। ফলে আমানত কমে যাওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে তারল্য সংকট। এ অবস্থা নিরসনে ব্যাংকগুলো অনেক দিন থেকেই সুদহারের সীমা তুলে দেওয়ার দাবি জানালেও অনড় ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক গবেষণায়ও সুদহারের সীমা বাতিল বা বাড়াতে সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি আইএমএফের ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও বিষয়টি যুক্ত থাকায় বেঁধে দেওয়া সীমা থেকে সরে আসে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৈঠক সূত্র জানায়, আগামী জুনে ঘোষিত হতে যাওয়া নতুন মুদ্রানীতি কেমন হবে তা নিয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে ঋণের বর্তমান সুদহার ৯ শতাংশ তুলে দিয়ে কিভাবে বাজার ব্যবস্থার ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে, সে কৌশল নির্ধারণে কথা হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে লাইবর রেট বা বেঞ্চমার্কের সঙ্গে ব্যাংক নির্ধারিত সুদ যোগ করে মোট সুদহার নির্ধারণ কর হয়। সে হিসাবে সুদের ভিত্তি ৮ শতাংশ এবং এর সঙ্গে আরো ৫ শতাংশ ধরে সুদহার নির্ধারণ হতে পারে। যদিও এখন পর্যন্ত সুদের ভিত্তি কত হবে তা চূড়ান্ত হয়নি।

সুদের হার তুলে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক জানান, আগামী জুনের তৃতীয় সপ্তাহে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা হবে। এ বিষয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। চলমান মুদ্রানীতির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি আগামী মুদ্রানীতিতে কী কী থাকবে তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তিনি জানান, নতুন মুদ্রানীতিতে ব্যাংক ঋণের সুদহার, ডলার একক রেট এবং মূল্যস্ফীতি বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। এখানে ব্র্যান্ডিং ও রেফারেন্স রেটের কথা ভাবা হচ্ছে। অনেক বিষয়ে যাচাই-বাছাই হচ্ছে। এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা থাকবে আগামী মুদ্রানীতিতে।

উল্লেখ্য, একটি দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মূলত কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং মূল্যস্ফীতির মধ্যে ভারসাম্য রাখতে মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে তার একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দুই বছর মেয়াদি বন্ডে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ, পাঁচ বছর মেয়াদি বন্ডে ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ, ১০ বছর মেয়াদি বন্ডে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ১৫ বছর মেয়াদি বন্ডে ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ ও ২০ বছর মেয়াদি বন্ডে সুদের হার ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। অর্থাৎ এই পাঁচ ধরনের বন্ডে সুদহারের গড় ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। এই রেটের সঙ্গে যদি বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ শতাংশ করিডর রেট নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশে ঋণ বিতরণের সুযোগ পাবে ব্যাংক। অর্থাৎ এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে ব্যাংক ঋণের সর্বনিম্ন সুদহার আরো ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও আইএমএফের ঋণ পাওয়ার শর্ত পূরণ করতেই এ সিদ্ধান্তের কথা ভাবছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সম্প্রতি এফবিসিসিআইর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বিজনেস সামিটে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ব্যাংক ঋণের সুদহার পরিবর্তনের। সে সময় তিনি জানিয়েছিলেন, আমানতের সুদের হারের ফ্লোর ও সিলিং প্রত্যাহার করেছি। বাজারভিত্তিক সুদহার নির্ধারণ করে করিডর প্রথা চালু করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close