জোনাহিদ হাসান সাগর, কালীগঞ্জ (গাজীপুর)

  ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩

কবুতর পোষে স্বাবলম্বী

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের পানজোরা গ্রামের আবদুল কাদির সিকদারের ছেলে রুবেল সিকদার। আজ থেকে বছর দুই আগে মোটামুটি বেকারও ছিলেন বলা চলে। মাঝে মধ্যে কিছু কাঁচা শাকসবজি ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করতেন। আর তা দিয়ে যা ব্যবসা হতো তাতেই পরিবার স্ত্রী, সন্তান ও বাবা-মা নিয়ে কোনো মতে দিন পার করতেন। এক দিন এক বন্ধুর দাওয়াতে তার বাড়িতে বেড়াতে যান রুবেল সিকদার। সেখান থেকে বন্ধুর উপহার হিসেবে ৫ জোড়া কবুতর উপহার হিসেবে পান। উপহার হিসেবে পাওয়া কবুতর দিয়ে শখের বসে শুরু হয় কবুতরের খামার। আর সেই ৫ জোড়া দিয়ে শুরু করা খামারে এখন বিভিন্ন জাতের ১শ জোড়া কবুতর। সেখানে কাজ সব সময় দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন ২ জন প্রশিক্ষিত যুবক। এর সবই সম্ভব হয়েছে রুবেলের শ্রম ও মেধার কারণে। এখন তিনি স্বাবলম্বী।

শীতের সকালে রুবেল সিকদারের বাড়ির ৩-তলার ছাদে প্লাস্টিকের বেড়ায় বেষ্টিত কবুতরের খামারের এক কোনে দাঁড়িয়ে কথা হয় তার শখের কবুতর পালন নিয়ে। রুবেল সিকদার জানান, দেড় বছর আগে বন্ধুর দেওয়া ৫ জোড়া দিয়ে শুরু করেন কবুতরের খামার। সেখান থেকে এখন ১০০ জোড়া। তবে এই দেড় বছরে সময়ের মধ্যে মাঝখানে বড় ধরনের একটি ধাক্কা তার জীবনে তিনি পার করছেন। যা কাটিয়ে উঠতে তাকে ভালো বেগ পেতে হয়েছে। তার শখের খামারে বেশকিছু কবুতর মারা যায়। সেখান থেকে তিনি তার পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তবে শখের বসে কবুতর পালন করতে গিয়ে তিনি মনে করছেন এটা বাণিজ্যিকভাবে পালন করা জরুরি। আর সেই চিন্তা মাথায় রেখে তিনি সামনে আগাচ্ছেন। তার খামারে কবুতরের পাশাপাশি দেশি জাতের মুরগি, ছাগল ও বিদেশি জাতের গাভিও রয়েছে।

তিনি জানান, শখের কবুতর খামার দেখে তার বাড়ির আশপাশের প্রতিবেশী ও বন্ধুবান্ধব তার কাছ থেকে কবুতর নিয়ে অন্যরা কবুতর পালনে উদ্ধুদ্ধ হচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও শখের খামারিরা তার খামার থেকে কবুতর কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার তিনিও বিভিন্ন জেলা থেকে তার পছন্দ মতো কবুতর কিনে নিয়ে আসেন। রুবেলের খামারে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার ও সর্বোনিম্ন ১ হাজার টাকা দামের বিভিন্ন জাতের কবুতর মিলছে। খামারে সিরাজী, চিলা, রেস, বুম্বাই, মিশরীয় বুম্বাই, পাকিস্তানি কিং, মিশরীয় মেগপাই, ডায়মন্ড কিং, বিউটি কিং, দেশিসহ বেশকিছু জাতের কবুতর পাওয়া রয়েছে। সব সময় কবুতরের খামার পরিচর্চার জন্য দুজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যারা এই খামার দেখভাল করেন। এ ছাড়াও তার গরু, ছাগল ও মুরগির খামারে আরো ৬ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। আর তারা সবাই প্রশিক্ষিত। এছাড়াও উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের লোকজন সব সময় খোঁজখবর নিচ্ছেন। এমনকি কোনো সমস্যায় তাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলেও তারা ছুটে আসেন। তাদের পরামর্শে কবুতরকে নিয়মিত টিকা দেওয়া হয়। তবে কবুতরের খাবারের তালিকায় গম, ভুট্টা, রেজা ও সরিষা উল্লেখ্যযোগ্য।

রুবেল আরো বলেন, ৫ জোড়া উপহারের কবুতরের জন্য প্রথমে ৩টি ছোট খাঁচা দিয়ে শুরু করি। এরপর যখন কবুতরের বংশবৃদ্ধি হতে থাকে তখন প্রায় লাখ টাকা খরচ করে কবুতরের জন্য সেট তৈরি করি। সেখানে দেড় থেকে ২০০ কবুতর পালন করা সম্ভব। এখন খামারে প্রায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকার কবুতর রয়েছে। প্রতি মাসে কবুতরের খাবার ক্রয় করতে ১০-১২ হাজার টাকা লাগে। এছাড়া দুজন নিয়োগপ্রাপ্ত লোক তো আছেই। কবুতরের খাবার ও শ্রমিকের মজুরি বাদ দিয়ে প্রতি মাসে কবুতরের এই খামার থেকে প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা আয় হয়।

বেকার যুব সমাজের উদ্দেশ্যে রুবেল সিকদার বলেন, বেকার বা অলস থাকা একদমই ঠিক নয়। কারো ইচ্ছা শক্তি থাকলে ছোট থেকেই শুরু করা যায়। আপনারা ২ জোড়া দিয়ে শুরু করেন দেখবেন এক বছরের মধ্যে আপনি আপনার পরিশ্রম দিয়ে এর ভালো সুফল পাবেন। আমি এক সময় বেকার ছিলাম। কিন্তু মাত্র ৫ জোড়া দিয়ে শুরু করে আজকে আমি লাভবান এবং এটা লাভজনকও বটে। বর্তমান সরকার বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করছেন এবং সহজ সুদে ঋণ দিচ্ছেন।

প্রতিবেশী শাহ আলম সিকদার (৩৯) বলেন, আমারই প্রতিবেশী ছোট ভাই রুবেল সিকদার কবুতরের খামার করেছে। সেখানে এক মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রায় ৬ মাস ধরে কাজ করছি। এখানে বেশ ভালো বেতনও পাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ এই খামারের বেতন দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোই চলছে।

রুবেল সিকদারের কবুতরের খামারের কর্মচারী আরেক যুবক নাসির উদ্দিন পিন্টু (৪০) বলেন, আমার বাড়ি নেত্রকোনা জেলায়। প্রায় বছর খানেক ধরে রুবেল ভাইয়ের কবুতরের খামারে কাজ করছি। কবুতরের পাশাপাশি গরুর খামারও দেখাশোনা করছি। বেতনও পাচ্ছি ভাল। স্ত্রী, সন্তান ও বাবা-মা নিয়ে ভালোভাবেই সংসার চলছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইউসুফ হাবিব বলেন, রুবেল সিকদার একজন সফল উদ্যোক্তা। কেননা তিনি ৫ জোড়া কবুতর নিয়ে শুরু করে তার খামারে এখন ১০০ জোড়ার ওপরে কবুতর। তাকে দেখে আশপাশের অনেক বেকার যুবকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ওনি আমাদের কাছে যখনি কোন সমস্যা নিয়ে যোগাযোগ করেন আমরা তা সমাধানের চেষ্টা করি। এছাড়াও কবুতরের টিকা দেওয়ার প্রয়োজন হলে আমাদের কাছে পরামর্শের জন্য আসলে আমরা পরামর্শ দিয়ে দেই। যদি কোন ক্ষেত্রে টিকা প্রদানকারীর সংকট হয়ে থাকে তবে টিকা কীভাবে দিতে হয় সেই প্রশিক্ষণ দিয়ে দেই। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা আমাদের লোক দিয়েও সেই টিকার ব্যবস্থা করে থাকি। তাছাড়া কবুতরের রোগ-বালাই নিয়ে হাতেকলমে শিক্ষা দিয়ে থাকি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close