নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৮ ডিসেম্বর, ২০২২

ডেঙ্গুর মধ্যেই চোখ রাঙাচ্ছে কিউলেক্স

* ঢাকায় ৯৪.৯% কিউলেক্স, ৫.১% এডিস মশা * দরজা-জানালা বন্ধ রেখেও নিস্তার মিলছে না মশা থেকে

এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বর এবার ভোগাচ্ছেন ঢাকাবাসীকে। এরই মধ্যে ৫৮ হাজারের বেশি আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি মারা গেছেন আড়াইশোরও বেশি মানুষ। এ অবস্থার মধ্যেই নগরে চোখ রাঙাচ্ছে কিউলেক্স মশা। বিকেল না হতেই দরজা-জানালা বন্ধ রেখেও নিস্তার মিলছে না এ মশা থেকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিউলেক্স মশার কারণে ফাইলেরিয়া ও ম্যালেরিয়া রোগ ছড়ায়। নভেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ পর্যন্ত এর উৎপাত থাকে বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার উদ্যোগে জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় ‘প্রাক মৌসুম এডিস সার্ভে-২০২২’ দেখা যায়, রাজধানীতে এখন যে মশা রয়েছে তার ৯৪ দশমিক ৯ শতাংশ কিউলেক্স মশা আর ৫ দশমিক ১ শতাংশ এডিস মশা।

কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে লার্ভা ধ্বংস করতে উদ্যোগ নিতে হবে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে দক্ষিণ সিটির ৩৮, ৪০, ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব বেশি পাওয়া গেছে। এসব ওয়ার্ড হলো : পুরান ঢাকার দয়াগঞ্জ ও তার আশপাশের এলাকা, মদন মোহন বসাক রোডসহ আশপাশের এলাকা, ডিস্ট্রিলারি রোড, দীননাথ সেন রোডসহ আশপাশের এলাকা। এসব এলাকায় মশার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি। আর কোনো এলাকায় ২০ শতাংশের বেশি হলে ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি বিবেচনা করা হয়।

এসব এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, দিনের বেলায়ও মশার জ্বালায় তারা অতিষ্ঠ। দক্ষিণ সিটির শুধু এই তিন ওয়ার্ডেই নয়, ২১, ১৫, ২৩, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স মশার ঘনত্ব ১০ শতাংশের বেশি এবং ৮, ১৪, ২০, ৩৫, ৪৬ এবং ৫১ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ১০ শতাংশ। এসব এলাকায়ও কিউলেক্স মশার উপদ্রব অত্যন্ত বেশি।

অন্যদিকে উত্তর সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ড মিরপুরের পল্লবী ও আশপাশের এলাকা, ২০ নম্বর ওয়ার্ড মহাখালী ও তার আশপাশের এলাকা, ৩২ নম্বর ওয়ার্ড লালমাটিয়া ও মোহাম্মদপুর এলাকায় ব্রুটো ইনডেক্স মশার ঘনত্ব পাওয়া গেছে ১০ থেকে ১৯ শতাংশের মধ্যে। এসব এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সন্ধ্যা না নামতেই মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। এ ছাড়া ১০, ১৩, ১৬, ২৭, ৩০ এবং ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ১০ শতাংশ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার জানান, কিউলেক্স মশার উপদ্রব ঠেকাতে এসব জায়গায় স্প্রে ও লার্ভা ধ্বংসে উদ্যোগ নিতে হবে। কিউলেক্স মশা সারা বছরই থাকে। তবে সামনে এডিসের উপদ্রব বাড়বে। তাই এখন থেকেই সতর্ক হতে হবে। নির্দিষ্ট কোনো কীটনাশক একটানা পাঁচ বছরের বেশি ব্যবহার করা হলে মশার মধ্যে সেই কীটনাশকের বিপক্ষে সহনশীলতা তৈরি হয়। আর এজন্যই মশা নিয়ন্ত্রণে প্রতি পাঁচ বছর পরপর কীটনাশক পরিবর্তন করা দরকার।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জোবাইদুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপে যেসব এলাকায় মশার ঘনত্ব বেশি পাওয়া গেছে সেসব এলাকা আমরা আলাদা করে বিশেষভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ ছাড়া মশা নিয়ন্ত্রণে আমাদের কর্মীদের ঈদের দিন ছাড়া ছুটি ছিল না। আমরা আলাদা করে নির্মাণাধীন ভবন তদারক করছি।

এডিস ও কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে সারা বছরই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় বরাবরই সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। তবে তারা এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে অনেকটাই সফল বলে দাবি করে। এখন কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

বুধবার (৭ ডিসেম্বর) থেকে ১৫ দিনের জন্য ১, ১৭, ৪৯, ৫০ ও ৫২ নম্বর ওয়ার্ডে মশার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সব বিভাগের সমন্বিত ক্র্যাশ প্রোগ্রাম পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া বর্জ্য বিভাগ প্রতিটি এলাকার ড্রেন, খাল, নালা ও জলাশয় নিয়মিত পরিষ্কার এবং তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলা হয়েছে।

সভায় মশককর্মীদের অবহেলা পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি জানিয়ে মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও মশক নিধন কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরো তৎপর হতে হবে। বিশেষ করে পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শকদের প্রতিটি এলাকা পরিদর্শন করে কোন কোন ড্রেনে ময়লা বেশি সেটার তালিকা তৈরি করতে হবে। কোন কোন ড্রেনে ও নালায় কচুরিপানা ও অন্যান্য ময়লা বেশি তা চিহ্নিত করে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে সেগুলো। মাঠে কাজের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও মশক নিধন কার্যক্রমে কর্মীদের অবহেলা পেলে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।

তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন ডোবা-জলাশয়ের মালিকদের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করতে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন বলেন, বুধবার (৭ ডিসেম্বর) উত্তরা ও আশপাশের এলাকাগুলো থেকে মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু হয়েছে। এই কার্যক্রমে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ আশপাশের সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা হবে। সবার সমন্বিত কার্যক্রমে মশক নিধন কার্যক্রমে গতি আসবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের বলেন, এডিস মশার উপদ্রব কম ছিল। ডেঙ্গু অনেকটাই আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি। এখন কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে ডোবা-নালায় ওষুধ ছিটাতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close